ইনসাইড থট

মুজিববর্ষে প্রতি মাসই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/01/2020


Thumbnail

দিনক্ষণ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মরণ হয় না। কিন্তু যখন আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ তখন আবেগে আপ্লুত হওয়াকে যারা দোষের মনে করেন, তাদের করুণা করা ছাড়া আর কি করা যায়? হ্যা ২০২০ এবং ২০২১ সাল দুটি অন্যরকম বর্ষপঞ্জি বাঙালির জন্য। জাতির পিতার জন্ম শতবর্ষ আর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী।

একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর বাংলাদেশ অপেক্ষায় ছিলো তাদের প্রাণপ্রিয় নেতার জন্য, ১৬ ডিসেম্বর যখন পাক বাহিনী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করছিল তখন জাতির পিতা শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। বিজয়ের পর প্রবাসী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের সবাই যখন ঢাকায় ফিরেছিলেন তখনও দেশজুড়ে হাহাকার বঙ্গবন্ধুর জন্য। একজন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ( অব.) এস এস উবানের বইতে মাত্র কয়েকটি লাইনে আছে সেই হাহাকারের ভিন্ন এক দ্যোতনার কথা ।

জেনারেল উবান তার  ফ্যান্টম অব চিটাগং, দি ফিফত আর্মি ইন বাংলাদেশ বইতে লিখেছেন ‘‘সব মিলিয়ে শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে ঢাকার আবহাওয়া আমার কাছে মেঘলা বলে মনে হল। সরকারকে মনে হচ্ছিল যেন তার প্রয়োজনীয় কর্তৃত্ব নেই বা ছটা নেই যা জনপ্রিয় জননেতারা প্রদর্শন করে থাকেন। আমি ভারী মনে রাঙামাটি ফিরে এলাম। আমার যত আত্মত্যাগ করলাম তা সব কি মুজিবের অভাবে বৃথা যেতে বসেছে? এবং মুজিবের দেশে ও ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা কতটুকু? ‘‘না ফিরে এসে ছিলেন প্রিয় নেতা, প্রিয় শেখ মুজিব। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরলেও তার সাথে এসেছিল ‘‘পাকি ষড়যন্ত্র’’ আর সেই ষড়যন্ত্রের বলি হয়েছিলেন শেখ মুজিব মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে যিনি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। এই মুজিব বর্ষ পালনে আমাদের অঙ্গীকার হোক সেই ষড়যন্ত্র উদঘাটনের। প্রায় দুই বছর কাজী গোলাম রসুলের আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা কাভার করার দায় থেকে বলতে পারি ঐ বিচারে কারা শেখ মুজিবকে সরাসরি হত্যা করেছিল, সেই হত্যার বিচার হয়েছে কিন্তু ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হয়নি।

মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু করছে, বছর জুড়ে নানা আয়োজন। তারপরও ২০২০ সালের একটি দিনপঞ্জি পেয়ে  বছর জুড়ে আরো কিছু অনুষ্ঠান সংযোজনের প্রস্তাব করছি। জানুয়ারিতে তো স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আছেই। সেদিনই শুরু হলো ক্ষণগণনা। মাসজুড়েই থাকবে নানান আয়োজন।কারন বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা দেশে ফিরে আসলে বিজয়ের আনন্দ পরিপূর্ণতা পেয়েছিল। তাই অবিস্মরণীয় দিন হিসেবে বাঙালি জাতির ইতিহাসের পাতায় এই দিনের ঘটনাপ্রবাহ স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

ফেব্রুয়ারি মাস ভাষার মাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের দিনগুলোতে কারাগারে আটক ছিলেন তখনকার পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারন সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। সে সময় ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দি অবস্থাতেই ভাষার অধিকার আদায়ে অনশন শুরু করেছিলেন জাতির পিতা। কয়েকমাস যাবৎ তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তরিত করে । কিন্তু সরকার টাকার অপ্রতুলতায় তাকে পুনরায় জেলে প্রেরণ করে। শরীরের এমন অবস্থায় কারা প্রাচীরের অন্তরালে ভাষার দাবিতে টানা এক সপ্তাহ অনশন করে জাতির পিতা দেখিয়েছিলেন,দেশপ্রেমতার জীবনের চেয়ে কত তুচ্ছ। বঙ্গবন্ধু ,দেশপ্রেম ও ভাষাপ্রেম নিয়ে আলোচনা হতে পারে ফেব্রুয়ারি জুড়ে।

মার্চ মাসতো স্বাধীনতার মাস। এ মাসেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তখনকার রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষনেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ অপরেশন সার্চ লাইটে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী সেই ভাষণের প্রতিশোধে নেমেছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২৬ মার্চে মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ৭ মার্চের ভাষণ ১২টি ভাষায় অনুবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। ১৭ মার্চ জাতির পিতার শততম জন্মদিন। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিব জন্মেছিল বলেই বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রে জন্ম হয়েছিল।

এপ্রিলের আয়োজনটা হতে পারে মুজিবনগরকে ঘিরে। কারন ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় শপথ নিয়েছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার, যাকে বলা যায় বাংলাদেশের প্রথম সরকার। আর সেই সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু, যিনি তখন বন্দি পাকিস্তানের কারাগারে। সেই বৈদ্যনাথ তলাই এখন মুজিবনগর।

মে মাস হতে পারে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাস। একাত্তরের ২৫ মে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হয়। আর সেই বেতার কেন্দ্র থেকে থেকেই বেজেছিল সেই অমর গান ‘‘শোন একটি মুজিবুরের কন্ঠ থেকে লক্ষ মুজিবুরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি .......’’। এটি লেখা হয়েছিল শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণার ওপর লেখা। আর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বঙ্গবন্ধু ভাষণে উজ্জীবিত হতো রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা।

মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আর এই দলের প্রতিষ্ঠা ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। প্রথম সভাপতি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর প্রথম যুগ্ম সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭১ সালের যিনি দলের সভাপতি। দেশের স্বাধীনতায় আওয়ামী লীগের অবদান উচ্চারিত হতে পারে জুন মাস জুড়ে।

আগস্ট মাস জাতির শোকের মাস। ১৫ আগস্ট দেশের কালো দিবস। তাই মুজিব শতবর্ষের আগস্ট মাস জুড়ে থাকবে নানা আয়োজন। আমরা বারবার দাবি জানাবো মুজিব হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র উদঘাটনের।

সেপ্টেম্বর মাসে মুজিবের জাতিসংঘ , তথা বিশ্ব দরবারে বাংলা উচ্চারনের মাস। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন। তার কারণেই বাংলাকে  স্বীকৃতি দিয়েছিল বিশ্বরাষ রাস্ট্রপুঞ্জ। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে ধর্মনিরপেক্ষতাকে আর্দশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। দলের নাম থেকে প্রত্যাহার করা হয় ‘মুসলিম’ শব্দটি। জঙ্গিবাদ মোকাবেলা যখন এক প্রধান ইস্যু তখন অক্টোবর মাসটিকে পালন করা যায় শেখ মুজিবের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে সামনে আসার জন্য।

৪ নভেম্বর বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় পরিষদে গৃহীত হয়েছিল স্বাধীন বাংলার সংবিধান। দেশ স্বাধীনের এক বছরের কম সময়ের মধ্যেই জাতিকে একটি সংবিধান উপহার দেয়ার কৃতিত্ব শেখ মুজিবের। আর ডিসেম্বরতো আমাদের বিজয়ের মাস।

এভাবেই ২০২০ সালের প্রতিটি মাসই নানা আয়োজন থাকবে মুজিব শতবর্ষে। এই লেখার সুত্রে একটু উল্লেখ করাই যায় যে এবার ২০২০ সাল দেশজুড়ে যে আয়োজন,তাতে জাতীয়ভাবে আয়োজনের পাশাপাশি নানা প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যাক্তিগতভাবেই ‘প্রিয় মুজিবকে’ স্মরন করবে অনেকেই।

যেমন পরিপ্রেক্ষিত এবং বাংলা ইনসাইডার তাদের ২০২০ সালের ক্যালেন্ডারে উল্লেখ করেছে  ১২ মাসের প্রতিটি মাসেই বঙ্গবন্ধুর নানান উল্লেখযোগ্য স্মৃতিময় ঘটনার কথা। তাদেরকেও ধন্যবাদ।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭