ইনসাইড থট

টেকসই উন্নয়নে আমরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/01/2020


Thumbnail

পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেই যে কথাটি সবথেকে বেশি বলতে শুনি সেটি হচ্ছে নিয়মনিষ্ঠা। অর্থাৎ সঠিক রাস্তা দিয়ে হেটে চলা, সঠিকভাবে যানবাহন চালানো, শব্দদূষণ না করা, সঠিক ভাবে জীবন যাপন করা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা এবং খেলাধুলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা, পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা, এককথায় জীবনধারণের জন্য যে সকল স্বাভাবিক নিয়ম নীতি প্রয়োজন সেগুলোকেই। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নিয়ম মেনে চলা, আইন মেনে চলা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এগুলোই যেন একটি উন্নত দেশের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তবে দেশগুলোর দিকে যদি একটু তাকানো যায় দেখা যাবে দেশগুলোর আয়তনের তুলনায় তাদের মানুষজন এর গড় অনুপাত ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আছে। তবে সে ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান একটু ভিন্ন। অতি অল্প জায়গায় এত বেশি সংখ্যক মানুষ পৃথিবীতে আর অন্য কোনো দেশে আছে কিনা আমার জানা নেই! সবথেকে বড় বিষয় হচ্ছে এই ক্ষুদ্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য কিন্তু মোটেই কম নয়। এই এত বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যা নিয়েও বাংলাদেশ কিন্তু দ্রুতগতিতে বিশ্বের অনেক দেশকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। আমাদের দেশে কিন্তু দুর্ভিক্ষের কথা এখন আর তেমন শোনা যায় না। অন্ততপক্ষে দেশের মানুষগুলো প্রতিদিন তিন বেলা খেয়ে ভালোভাবেই চলছে। মাঝেমাঝেই বিষয়টিকে আমার কাছে সপ্তম আশ্চর্যের একটি বিষয় বলে মনে হয়। কারণ অনেকের মুখেই বিভিন্ন সময় নাই নাই শুনতে পারা যায়। কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো প্রতিদিন এই বাংলাদেশের মাটি কোটি কোটি মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার যে অঙ্গীকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যক্ত করেছেন অনেকেই হয়তো সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন! প্রশ্ন তুলছেন ছোট্ট একটি দেশে এত বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে কি হবে? এত শিক্ষিত বেকার দিয়ে আমরা কি করব? বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান এবং পরিবেশ নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই হাহাকার! এবার একটু অন্যভাবে ভাবুন তো - এটা কি গর্ব করার বিষয় নয়? ক্ষুদ্র বাংলাদেশে দেশের মাটিতে প্রায় প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে। যেখানে প্রত্যেকটি অঞ্চলের মানুষ উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে। উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কি আমাদের উপর কিংবা সেখানে নিয়োজিত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাত্র-ছাত্রীদের উপর বর্তায় না? সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া সরকারের দায়িত্ব, আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করা নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব।হয়তো এমন একটি সময় সামনে আসবে যেদিন বাংলার প্রত্যেকটি মানুষ উচ্চশিক্ষিত হবে। তবে একথা সঠিক এই উচ্চ শিক্ষিত মানুষেরা দেশের মাটিতে নিজেদেরকে কিভাবে স্বনির্ভর কিংবা কর্ম নির্ভর করে গড়ে তুলতে পারেন সেটির উপরে নির্ভর করবে আমাদের ভবিষ্যৎ পথ চলা। কারণ উচ্চ শিক্ষিত হলেই আমাদের মধ্যে যেকোনো ধরনের কায়িক পরিশ্রম না করার প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে দেয়, যা উন্নত বিশ্বের শিক্ষিত নাগরিকদের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টেকসই উন্নয়নের কথা বলি, আর এই উন্নয়ন বলতে আসলে আমরা কি বুঝি? টেকসই উন্নয়ন বলতে সাধারণভাবে সেটিকে বোঝায় আমাদের বর্তমানে যা আছে তার সঠিক পুনর্ব্যবহার করে অতিরিক্ত সম্পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে দেয়া। খুব সাধারণভাবে যদি আমরা টেকসই উন্নয়ন সম্পর্কে বুঝতে চাই এটি হবে হয়তোবা সবচেয়ে সহজ সংজ্ঞা। আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে সকলেই অন্ততপক্ষে শিক্ষিতরা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারের জন্য নির্ধারণ করতে পারি, জীবনযাপনের সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবান্ধব পরিকল্পনা করতে পারি, তাহলে হয়তো সামগ্রিক ভাবে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাবে এই বিষয়গুলোকে নিয়ে চিন্তা করার সময় এখন আমাদের এসেছে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ এখন আমাদের দিকে, আমাদের অর্থনীতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

 

সজল চৌধুরী

পিএইচডি গবেষক, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭