নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 16/01/2020
‘‘হোন্ডা,গুণ্ডা আর ডাণ্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা’’ আশির দশকে নির্বাচন নিয়ে এই সমালোচনামূলক অভিধা আবার নতুন করে বলতে হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মটরবাইকের অত্যাচারমূলক ব্যবহার দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে। থাকি হাতিরপুলের ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে আর কাজের জায়গা মহাখালী। আগের দিন রাতে আর পরের দিন দুপুরে দু-জায়গায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মটরবাইক শোভাযাত্রায় অতিষ্ঠ হলাম। রাত আটটার পর মাইক বাজানো নির্বাচনী আচরণ বিধির বরখেলাপ। হাতিরপুল এলাকায় একজন কাউন্সিলর প্রার্থী রাত ১০টায় বের হচ্ছেন গনসংযোগে, একটি গলির পুরোটাই দখলে নিয়ে নিল তার মটরবাইকধারী কর্মী বাহিনী। হেটে যেতেই অসুবিধা ভোগ করছিলাম। মিছিলে মাইক নেই কিন্তু মটরবাইকের হর্নের কারনে কান ঝালাপালা। একই ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো বৃহস্পতিবার দুপুরে মহাখালী এলাকায়। একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর মিছিলের পিকআপ আর মটরবাইক ভজঘট লাগিয়ে ধিল সড়ক জুড়ে।
মেয়র আর কাউন্সিলররা রাজধানীবাসীর ঘরের কাছের জনপ্রতিনিধি। কারন এখানকার সংসদ সদস্যদের দেখা মেলা ভার। তাদের কিন্তু কোনো কার্যালয়ও নেই নিজের নির্বাচনী এলাকায়। আর সিটি করপোরেশনের জন্ম ও মৃত্যু সনদ, ট্রেড লাইসেন্স,নাগরিকত্ব সনদ এবং হোল্ডিং ট্যাক্সসহ আরো অনেক কারণেই ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দরকার হয়। আমরা সবাই জানি যে বায়ুদূষনে কিছুদিন আগেই সারাবিশ্বে প্রথমস্থান অধিকার করেছিল ঢাকা মহানগর। আর দেশীয় গবেষণায় আমরা জেনেছি যে শব্দ দূষণেও রাজধানীবাসীর শ্রবনযন্ত্র যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে,তেমনি নানান রোগকেও আমন্ত্রন জানানো হচ্ছে।
গত ১০ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার ভয়াবহ শব্দ দূষণের কথা তুলে ধরা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকাতেই গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে। সরকার সচিবালয়ের চারপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করে, ভ্রাম্যমান আদালত চালানো সত্বেও শব্দ দূষণ বন্ধ হয়নি।সচিবালয় ছাড়াও ঢাকার অন্য এলাকাগুলোতেও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি শব্দ হচ্ছে। আর এই শব্দের মূল উৎস যানবাহনের হর্ন। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) যে সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসছে, তার শিরোনাম ছিল ‘‘তীব্র শব্দ দূষণের কবলে ঢাকাবাসী’’। যে সংবাদ সম্মেলনে বায়ুদূষণের জরিপের ফল তুলে ধরা হয় সেখানে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার নির্বাহী সভাপতি মো. আব্দুল মতিন বলেছিলেন সচেতনতা তৈরী করা ছাড়া শুধু আইন করে শব্দ দূষণ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
গবেষণাটির কথা এজন্য সামনে আনলাম যে, এখন যদি মেয়র বা কাউন্সিলররা নিজের নির্বাচনী প্রচারে শব্দ দূষনের বা সাধারন নাগরিকদের বিরক্ত উৎপাদনের কাজ করেন , তাহলে তারা কিভাবে শব্দ বা বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে তাদের ভোটারদের নিয়ে কাজ করবেন। এই এখন হর্ন বা বাশি বাজিয়ে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে ভোটের প্রচার চালানো হচ্ছে, তাতে নিসন্দেহে বলা যায় ঢাকার শব্দ দূষনের পরিমান বেড়ে গেছে। আমরা কি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ন কেন্দ্রকে (ক্যাপস) অনুরোধ করবো নির্বাচনী প্রচারের কারনে শব্দ দূষণের মাত্রা বাড়ার বিষয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করার জন্য।
এমনিতেই রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দেয়ার ক্ষমতা দুইমেয়রের আছে কি না, তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। তবে এটা ঠিক যে সিটি করপোরেশনের ময়লা-আর্বজনার সাথে বায়ু দূষণের একটি বড় সম্পর্ক আছে। আর শব্দ দূষণের কারণ যে তীব্র হর্ন ( হাইড্রলিক হর্ন ) তার দায়-দায়িত্ব মেয়র কাউন্সিরররা নেবে না। কিন্তু এখন নির্বাচনী প্রচারেই যদি তারা শব্দ দূষণের বিষয়টি মাথায় না রাখেন , তাহলে ভোটের পর এটা যে তাদের কার্যক্রমে থাকবে না তা স্পষ্ট।
আরেকটি বিষয়েও নির্বাচনের প্রার্থীদের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা চলে একেবারে পাড়া-মহল্লায়, এমনকি ঘরে ঘরে। আর এটা সবাই জানি যে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা এবং ঘনবসতিপুর্ণ ঢাকা শহরে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা আছেন। নির্বাচনী প্রচারণার কারণে তাদের শেষ মুহুর্তের লেখা-পড়ায় যেন বিঘ্ন না ঘটে। যে কারনে নির্বাচন কমিশন রাত আটটার পর মাইক বাজানো নিষিদ্ধ করেছে আচরণ বিধিতে সেই কারণেই রাত-বিরাতে মটরবাইকের তীব্র হর্ণ বাজিয়ে ভোটের ভটভটিও আমাদের কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। যারা জনপ্রতিনিধি হবেন জনগনের ভোটে তাদের কোনো সমালোচনা যেন না ওঠে ভোটারের ঠোটে।
ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ দুই মেয়রকে যেমন আমরা ধরবো তেমনি এবার কিন্তু কাউন্সিলরদেরও ছেড়ে দেযা হবে না। কারন অনেকটা প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির সিটি করপোরেশন পরিচালনা নিয়ে এরই মধ্যে কথা উঠেছে। তাই কাউন্সিলরদেরকে নাগরিক সেবায় আরো বেশী দায়বদ্ধতার কথা এখন জোরেশোরেই আলোচনা হচ্ছে। তাই যারা হোন্ডা পার্টির মহড়া দিবেন, যারা উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে নাগরিক শান্তি বিনষ্ট করবেন, তাদের ভোট দেয়ার ব্যাপারে ঢাকাবাসী অবশ্যই ভেবে দেখবে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭