ইনসাইড বাংলাদেশ

মৃত্যুর দুই দিন আগেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে দু:খ করেছিলেন মান্নান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/01/2020


Thumbnail

প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন ছাত্রনেতারাই ’৭৫ পরবর্তী সময়ে দল পুনর্গঠনে বিরাট অবদান রেখে গেছেন। তাদের সংগ্রামের ফলে আমরা আজ দেশের উন্নয়ন করতে পারছি।

রোববার তিনি বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি বৈরী পরিবেশে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনা করে আজ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই দেশের এই উন্নতি হচ্ছে।’

‘‘আব্দুল মান্নান ছাত্রজীবন থেকে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, জিয়া, এরশাদ, খালেদাবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শওকত, অলি, মহসিনকে পিটিয়ে জঘন্য হত্যাকাণ্ড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এরশাদের আমলে সেলিম, দেলোয়ারকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা, রাউফন বসুনিয়া, চুন্নুসহ বহু ছাত্রনেতা-কর্মী বিভিন্ন সময় সরকারের অত্যাচার নির্যাতনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।’’

তিনি বলেন, সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান প্রতিটি ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী ছিল। প্রচার সম্পাদক থাকাকালে প্রতিটি লিফলেট ও বিবৃতি লেখা অত্যন্ত চমৎকারভাবে সম্পাদন করতে পারতো।

‘‘প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল আমার হাতে গড়া ছাত্রনেতা এরাই একদিন দলের নেতৃত্ব দেবে। এরাই আওয়ামী লীগকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে, যখন আমরা থাকবো না। কিন্তু চোখের সামনে যখন এরা চলে যায় তখন খুব কষ্ট হয়, খুবই দুঃখজনক।’’

আব্দুল মান্নানকে ছাত্রলীগের সভাপতি করার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৮১ সালে দেশে ফিরে আসার পর আব্দুল মান্নানকে ছাত্রনেতা হিসেবে পেয়েছিলাম। ‘৮৩ সালে তাকে ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়। এর পেছনে একটি ঘটনা রয়েছে- ‘ছাত্রনেতাদের আমি একা একা ইন্টারভিউ নিতাম। ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে একটা প্রশ্ন ছিল-যদি তোমাকে সভাপতি না করা হয় তাহলে তুমি কি করবে? অনেকে হাউমাউ করে কেঁদে দিত।’

‘‘তবে একটি ছেলেকে এই প্রশ্ন করার পর তার জবাব ছিল-না বানালে কিছু করার নেই, আমি আপনার সাথে রাজনীতি করে যাবো। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, তাকেই বানাবো। ওই সময়টা ছাত্রলীগের জন্য অত্যন্ত দুঃসময় ছিল। অনেকেই ৮২ সালে ছাত্রলীগ ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সেখানে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করা খুব দরকার ছিল এবং তার সেই সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল।’’

তিনি বলেন, তাকে আওয়ামী লীগের প্রচার ও সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। এরপর তাকে বগুড়ার মতো কঠিন জায়গায় তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। সেখানে রাস্তা-ঘাট খুবই খারাপ ছিল, একটি অনুন্নত জায়গা। সেখান থেকে সে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মৃত্যুর দুই দিন আগে আমার সাথে সে অনেক কথা বলে। নানকসহ অনেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসেছে, ও আসেনি, মনে একটু দুঃখ ছিল। আমি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছি- আমিতো তোমাকে ফেলে দেইনি। তোমাকে তো সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছি। কথা বলার সময় দেখলাম তার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভাল নেই। আমি তাকে বললাম ভালোভাবে চেকআপ করো এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা নাও। ঠিক এর পরপরই সে হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রতিদিন ডাক্তারের সাথে কথা বলে চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিয়েছি। যেদিন সে মারা যায়, ওই দিন রাতেও ডাক্তারের সাথে কথা বলে বিদেশে পাঠানো সম্ভব কিনা জানতে চাইলাম। কিন্ত ডাক্তার তাতে সম্মতি দেয়নি।’

তিনি তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বলেন, অসুস্থ ছিল কিন্তু এভাবে চলে যাবে তা আমরা ভাবতে পারিনি।

এরআগে একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের মৃত্যুতে আজ সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ গ্রহণ করেন।

পরে শোক প্রস্তাবের ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নেন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম রেজাউল করিম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, উপাধক্ষ্য আব্দুস শহীদ, মহিউদ্দিন খান আলমগীর এবি তাজুল ইসলাম, শাজাহান খান, নজরুল ইসলাম বাবু, মসলেম উদ্দিন, আনোয়ারুল আবেদিন খান, মৃণাল কান্তি দাস, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ।

গতকাল ১৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর ১ মাস।

তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোয়নে বগুড়া -১ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি দশম জাতীয় সংসদ ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আব্দুল মান্নান ছাত্র জীবন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ছাত্র লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এর (বাকসু) সহ-সভাপতির (ভিপি) দায়িত্ব পালন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭