ইনসাইড থট

প্রথম আলোর টুটি চেপে ধরা হচ্ছে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/01/2020


Thumbnail

ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২০ জানুয়ারী প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের ৪৭ জন বিশিষ্ট (!) নাগরিক। বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার-বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, দেশের নানা স্তরের লেখক সাংবাদিক, শিল্পী সহ নান পেশার মানুষ। তাঁদের ভাষ্য বিচার করে মনে হচ্ছে সরকার প্রথম আলোর কণ্ঠ রোধের জন্য এই মামলা করেছে, গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেছে। অন্যদিকে প্রথম আলোর সম্পাদক ও প্রকাশক মতিউর রহমানকে জামিন দেওয়ায় উচ্চ আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। প্রথম আলোর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম।

বাংলাদেশের আইনে কোম্পানি হচ্ছে একটি কৃত্রিম ব্যক্তি সংস্থা। তাই কোম্পানির নাম ব্যবহার করে যিনিই অপরাধ করুন বা অপরাধের কারণ হউন না কেন তাতে সেই অপরাধের দায় কোম্পানির প্রধান নির্বাহী সহ অন্যসব পরিচালকদের উপরেও বর্তায়। শিক্ষিত মানুষ বলে যারা নিজেদের দাবি করেন, তাঁরা সবাই এটা জানেন।

আমরা দেখেছি যে, শিশু খাদ্য গ্রামীণ শক্তি দই-এ ভেজালের অভিযোগে করা একটি মামলা হলে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নামে মামলা হয়, পরে তিনি জামিন নেন। সেই মামলায় ড ইউনুসের আইনজীবী ছিলেন মানবতা বিরোধী অপরাধীদের পক্ষে নিযুক্ত লবিস্ট সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের স্ত্রী ও বিখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি আদালতে বলেছিলেন যে, ড. ইউনুস প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপার্সন হলেও খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত না। তাছাড়া মামলাটি জামিন যোগ্য। গ্রামীণ শক্তি দই এ ভেজালের অভিযোগে গত ১০ই জানুয়ারি খাদ্য আদালতে মামলা করেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের খাদ্য পরিদর্শক। শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। মামলায় গ্রামীণ-ডানোন ফুড লিমিটেডের মালিক পক্ষ হিসেবে ড ইউনুসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শিশুখাদ্যে ভেজালকারী ড. ইউনুসের নৈতিকতা নিয়ে একটু পিছনে ফিরে দেখা যাক। ১৯৬৭ সালে ভ্যানডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সময় মুহাম্মদ ইউনুসের সাথে তার পরিচয়ের পরে ১৯৭০ সালে রাশিয়ান বংশোদ্ভূত ভেরা ফরস্তেনকোর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আসলে এটা ছিল মুহাম্মদ ইউনুসের আমেরিকায় লিগাল হওয়া আর কম খরচে নিজের শারীরিক চাহিদা মেটানোর একটা চেষ্টার কারণ তাঁদের ঘরে ১৯৭৯ সালে মনিকা নামের একটি মেয়ের জন্ম হলেও জন্মের কিছুদিনের মধ্যেই স্ত্রীর সাথে মুহাম্মদ ইউনুসের বিচ্ছেদ ঘটে এবং মনিকার মা মনিকাকে নিয়ে আমেরিকায় তার নিজের বাবা-মায়ের সাথে বসবাস করার জন্য ফিরে যান। মুহাম্মদ ইউনুস তার মেয়ে মনিকার কোন খোঁজ খবর বা দায় দায়িত্ব নেন না। এতেই উনার মত নামকরা লোকের নৈতিকতার মাপ বুঝা যায়।

শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করার মানসে ১/১১ নিজের ভূমিকার জন্য ভুল স্বীকার করায় ২০১৬ সালে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এমন উতলা হয়েছিলেন এইসব বিশেষ ঘরানার বুদ্ধিজীবীগন। সে সময়ও তাঁরা বলেছিলেন সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। আসলে তাঁদের উদ্দেশ্য তাঁদের অপকর্মের সাথিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা।

২০০৭ সালের নভেম্বরে শত শত কোটি টাকা চিটিংএর অভিযোগে কে এম খালিদ হোসেনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব -২। খালিদ তার জুয়াচুরির ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করেন র‍্যাবের কাছে, তা পত্রিকায় প্রকাশ পায়। কিন্তু সময়টা ছিল ২০০৭, তখনকার সরকারের অলিখিত উপদেষ্টা ছিলেন যারা তাঁদের অন্যতম ছিলেন প্রথম আলোর মতিউর রহমান। তাই তাঁর ছেলের কথাটা তেমন করে প্রকাশ হতে দেননি মতিউর রহমান। কিন্তু এই চিটিংয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন মতিউর রহমানের ছেলে মাহমুদুর রহমান শাশার। এই শাশার প্রধানত: বিভিন্ন প্রিন্টিং কোম্পানি থেকে বাকীতে প্রিন্টিঙের কাজের দায়িত্বে ছিলেন। শাশারের কারণেই গ্রাফোসম্যানের মালিক হার্ট এটাকে মারা যান বলে অভিযোগ আছে। খালিদের বিরুদ্ধে ৩৬টা মামলা হলেও অদৃশ্য কারণে শাশারের বিরুদ্ধে মামলা এড়িয়ে চলা সম্ভব হয়।

একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক হয়ে প্রায় হাজার কোটি টাকার মালিক মতিউর রহমানের আয়কর বহির্ভূত সম্পদের ৭২ শতাংশ অর্থাৎ ৬ শত ৫৩ কোটি টাকা নিজ ও স্ত্রী মালেকা বেগমের নামে রয়েছে। পাশাপাশি ছেলে মাহমুদুর রহমান শাশার নামে ২ হাজার ১৬২ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। কী ব্যবসার তার ছেলের! অবৈধ সম্পদের কারণে দুদুকের হাত থেকে বাঁচার জন্য তিনি সরকার বিরোধী সাজেন। সত্য মিথ্যা মিশিয়ে খবর প্রকাশ করেন, যাতে তাকে গ্রেফতারের পরে পত্রিকাকে ঢাল বানানো যায়। বলা যায় মত প্রকাশে বাঁধা সৃষ্টি করতে সরকার মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, যদিও দুদুক এক স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এটা সবার জানার কথা যে, এই সেই মতিউর রহমান যিনি ১/১১ সময় তার পত্রিকার প্রথম পাতায় বিশেষ সম্পাদকীয় লেখেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে দেশের রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্য।

এবার আসা যাক মামলায় বা আদালতে সরকারের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে। সাম্প্রতিক আদালতের রায়ে দেখা যায় ১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আগে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা মামলার রায়ে পাঁচজনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। ঘটনার ৩২ বছর পূর্ণ হওয়ার চারদিন আগে এ রায় এলো গত ২০ জানুয়ারি। শেখ হাসিনা যদি আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ করতেন, তাহলে কী তাঁকে ৩২ বছর অপেক্ষা করতে হয়!

আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কথা জানি। এর রায় পেতে দেশ ও জাতিকে ৩৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। একটা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করেও শেখ হাসিনা এটা করতে পারতেন, কিন্তু তিনি আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেন নি বলেই কি এত দেরি।

আমরা সবাই জানি যে, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সমাবেশে কয়েকটি মিলিটারি-গ্রেডের গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। সেই হামলায় আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত ও স্প্লিন্টারের আঘাতে ৩শ’র বেশি জন আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। ২০১৮ সালের অক্টোবরে এই মামলার রায় হয়। শেখ হাসিনা কেন তার নিজের হত্যা মামলার নিষ্পত্তির জন্য এতদিন অপেক্ষা করলেন! আর যদি আদালতের কাজে হস্তক্ষেপ করা তাঁর অভ্যাস থাকতো তাহলে কি এত দেরি হতো!

উপরের মত অনেক উদাহরণ দিতে পারা যাবে যাতে দেখা যায় যে, শেখ হাসিনা আইনকে তাঁর নিজের গতিতে চলতে দিয়েছেন, কোন প্রভাব খাটানর চেষ্টা করেন নি।

এবার আসি বিবৃতি বাণিজ্যের কর্ণধারদের কথায়। বিবৃতিদাতাদের নামের তালিকার দিকে তাকালে দেখবেন যে, যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাঁরা হয় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাথে আঁতাতে আছেন, না হয় বিএনপি’র থিংক ট্যাংকের সাথে জড়িত, না হয় প্রথম আলো গ্রুপের কাছ থেকে বিশেষ কোন সুবিধা পেয়েছেন বা সুবিধার প্রত্যাশা করছেন। তা না হলে আইনজীবী, আইনের শিক্ষক বা সাংবাদিকতার মত পেশার মানুষেরা কীভাবে ঐ অন্যায্য বিবৃতিতে সই করেন! টাকা দিলে মানবাধিকার-বিষয়ক সংগঠন চরম খুনির পক্ষেও বিবৃতি দেয় তা সবার জানা। তাহলে কি বাংলাদেশের বিশেষ ঘরানার বুদ্ধিজীবীরাও টাকার খেলায় মেতেছেন! তা না হলে একজন নিরীহ স্কুল ছাত্রের হত্যা মামলায় অভিযোগের সাথে পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধের যোগসূত্র খোঁজাদের অভিপ্রায় কী!


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭