ইনসাইড থট

পিএমের বৈঠকে সূচকের উত্থানে রের্কড হলেও অর্থমন্ত্রীর বৈঠকের পর খেলো গোত্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/01/2020


Thumbnail

একজন সাধারণ বিণিয়োগকারী সকালে তার ব্রোকারেজ হাউজে ফোন দিয়ে তিনটি কোম্পানির শেয়ার কেনার আদেশ দিল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নাকি খাদের কিনারে নেমেছে, কম দামে ভালো শেয়ার কেনার এইতো সময়। তো সেই বিণিয়োগকারী একলাখ টাকার শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ল্যাপটপ খুলে একটু অলস আঙ্গুলে ব্রাউজ করলো। হাত চলে না,মাউসটাও ঠিকভাবে কাজ করছে না বলে মনে হয়,ইন্টারনেটের গতিও কম আসলে পুরো ২০১৯ সাল ধরে শেযারবাজারের ধারাবাহিক পতনে অনেকটাই অনুৎসাহী হয়ে পড়েছিলেন শেয়ারবাজার নিয়ে, একজন অনিয়মিত বিণিয়োগকারী আচরণ অনুযায়ী তিনিও আছেন ধৈর্য্যের শেষ প্রান্তে। সাংবাদিক পেয়ে শোনাচ্ছিলেন ‘‘পুঁজিবাজারে লুটপাটের নানা মারফতি আর দরবেশিয় তত্ত্বগাথা’’।

বিণিয়োগকারীর নিজের অভিজ্ঞতা তাই ধ্যান দিলাম তার কথায়। জানালেন ১৫ জানুয়ারি সকালে তিনটি কোম্পানির শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে হিসেব করে দেখলেন সব মিলিয়ে ১ লাখ তিন হাজার টাকার দরকার। ব্যাংকে আছে তাই ক্রয়আদেশ দিলেন। বিকেলে যখন ইমেইলে পেলেন পারচেজ কনফারমেশন রিপোর্ট তখন দেখলেন যা হিসেব করেছেন তার থেকে দুহাজার টাকা কম লেগেছে। অর্থাৎ আদেশ দেয়ার আগে যে দাম দেখেছিলেন কেনার সময় দাম আরো কমে গিয়েছিল। 

ঘটনাটা জানা ছিল, রবি ও সোমবার দুই কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক বাড়ছিল,তাই কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল ঢাকার পুঁজিবাজারে। কিন্তু অভিজ্ঞজনরা বলছিলেন কৃত্রিমভাবে বাড়ানো সূচকের উত্থানধারা বেশিদিন টিকবে না। সত্যিই তাই হলো মঙ্গলবার,আবারো অমঙ্গলের আভাস। দিনশেষে ২৬ পয়েন্ট কমে ঢাকা স্টকের সূচক নেমে গেছে ৪ হাজার ৪০৮ পয়েন্টে।

শেয়ারবাজার নিয়ে একটু লিখতে চাই। তাই এবার নিজে থেকেই ফোন দিলাম সেই বিণিয়োগকারী বন্ধুকে। এবার আবারো শুনলাম অবাক হবার মত কথা। ঐ বিণিয়োগকারী জানালেন মঙ্গলবার সকালে আবারো কিছু শেয়ার বিক্রী করতে চাইলেন তিনি। আর আগের দিনের দাম দেখে নিজের ব্রোকারেজ হাউজে ফোন করে যে তিনটি শেয়ার বিক্রীর আদেশ দিয়েছিলেন সেই তিনটির দামই কমে গেছে। আরো চমকপ্রদ তথ্য পেলাম একটু খোঁজ নিয়ে।

খাদে পড়ে যাওয়া পুঁজিবাজার নিয়ে অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই উদ্যোগ নিতে হলো। ১৬ জানুয়ারি দুপুরেই প্রধানমন্ত্রী ডেকেছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেন ও আর্থিক বিভাগের সচিব আসলামুল হককে। পুঁজিবাজারকে বাঁচাতে পাঁচদফা নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। বিএসইসি প্রেস রিলিজ দিয়ে সেই পাঁচদফা প্রচার করেছিল গনমাধ্যমে। এই পাঁচ দফা নির্দেশনা ছিল পুঁজিবাজারে ব্যাংক বর্হিভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহন বৃদ্ধি করা, মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রতিষ্ঠানিক বিণিয়োগকারীদের জন্য সহজশর্তে ঋণ সুবিধার বিষয়টি পর্যালোচনাকরা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবির বিণিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধিকরা, বাজারে আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন এবং বাজারে মানসম্পন্ন আইপিও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুজাতিক ও সরকারিমালিকানাধীন কোম্পানিসমূহকে তালিকাভূক্ত করার উদ্যোগ নেয়া ।

প্রধানমন্ত্রী যেদিন বৈঠক করে নির্দেশনা দিলেন সেদিন থেকেই কিছুটা বাড়তে থাকে ঢাকার পুঁজিবাজারের সূচক, গনমাধ্যম যাকে অভিহিত করে ‘সুচকের ঘুরে দাড়ানো’ বলে। ১৬ জানুয়ারি দুপুরের বৈঠকের পরপরই লেন-দেন শেষ হতে হতেই সেদিন সূচক বেড়েছিল ৮১ পয়েন্ট। এরপর শুক্র ও শনিবার দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি। রবিবার সপ্তাহের প্রথমদিনই উচ্চলম্ফে উত্থানের চূড়ায় উঠে গেলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক। রের্কড হলো ১৯ জানুয়ারি। একদিনে ২৩২ পয়েন্ট বেড়ে সূচক দাড়ালো ৪ হাজার ৩৮২ পয়েন্টে। অনেকগুলো শেয়ারের বিক্রেতা থাকলো না। একটা চরম অস্বাভাবিকতা। পরের দিন ২০ জানুয়ারি সূচক বাড়লো আরো ৫২ পয়েন্ট। ৪ হাজার ৪৩৪ পয়েন্টে গিয়ে পৌছলো ডিএসইসির প্রধান সূচক। সেদিনই আবার মার্চেন্ট ব্যাংক এসোসিয়েশনের সাথে বৈঠকে বসলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। এর পরের দিনই আবার ধপাস। আগের দিন থেকে সূচক কমে গেলো ২৬ পয়েন্ট। দুদিনের সবুজ রঙ ধুসর হয়ে পৌছে গেলো লালে। যে বন্ধুর সাথে কথা বলেছিলাম, মন খারাপ করে সে বলে বসলো ‘‘আমাদের কুফা অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার নিয়ে নির্দেশনা দিতে না দিতেই সূচকের রেকর্ড। আর ২৬৭ কোটি টাকার লেনদেন বেড়ে দাড়িয়েছিল ৪৯৪ কোটি টাকায়। আর অর্থমন্ত্রীর বৈঠকের পর সূচক কমার পাশাপাশি একদিনে ৮৮ কোটি টাকার লেনদেনও কমে গেলো ঢাকার পুঁজিবাজারে।’’   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭