ইনসাইড বাংলাদেশ

আবরারের মতোই এবার ঢাবির চার শিক্ষার্থীকে রাতভর পিটিয়েছে ছাত্রলীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/01/2020


Thumbnail

চার মাস পার হলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা ঘটনার কথা এখনো সবার মুখে মুখে। সেই ঘটনার বিচার শুরু হওয়ার আগেই ফের আবরার স্টাইলে শিবির স্টাইলে রাতভর ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে চার শিক্ষার্থী।

মারধরের পর হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম আহত শিক্ষার্থীদের শাহাবাগ থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে রাতেই শাহবাগ থানা পুলিশ আহত চার শিক্ষার্থীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। তবে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, রাত সাড়ে ১১টায় সন্দেহবশত তারা দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে শিবির সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গেস্টরুমে ডেকে আনে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতারা প্রথমে ঐ শিক্ষার্থীকে শিবির কর্মী স্বীকার করানোর জন্য মানসিকভাবে চাপ দিতে থাকে। স্বীকার না করায় মারধর করে। এ সময় তার মোবাইলে আরও তিন বন্ধুর সঙ্গে ‘যোগাযোগ তালিকায়’ নাম থাকায় তাদেরও ডেকে গেস্টরুমে আনা হয়। এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্তসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতারা এসে রড, লাঠি দিয়ে মারধর করে। মারধরে গুরুতর আহত হয় ওই চার শিক্ষার্থী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ১১টার দিকে জহুরুল হক হলের গেস্টরুমে ছাত্রলীগের নিয়মিত গেস্টরুম চলছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়। সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মুকিমকে প্রথমে মানসিকভাবে চাপ দেয়। এতে স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। পরে তার ফোনের কললিস্ট দেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা। মারধর সহ্য করতে না পেরে উভয়ই মেঝেতে বসে ও শুয়ে পড়ে। এর একটু পর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন এবং একই বর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে ধরে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে রাত দুটা পর্যন্ত তাদের ওপর নির্যাতন করতে থাকেন ছাত্রলীগ নেতারা। পরে রাত ২টার পর তাদের প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে পুলিশ তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

এ বিষয়ে নির্যাতন করা ছাত্রলীগের নেতারা দাবি,আহত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিবির সংশ্লিষ্ট বই উদ্ধার করা হয়েছে। তবে উদ্ধার করা বইটি দেখাতে পারেননি তারা। এমনকি শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি ছাত্রলীগ।

নির্যাতনকারী আনোয়ার হোসেন ও আমির হামজা দুজনেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের অনুসারী। আমির হামজা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে এক ফার্মেসি দোকানদারকে মারার অপরাধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হয় বলে জানা গেছে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগের নাম দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এতে তাকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তবে ছাত্রলীগের ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের ইচ্ছায় তিনি আবার হলে ফেরেন।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘তাদেরকে কেউ নির্যাতন করেনি। হল প্রশাসন এবং প্রক্টরিয়াল টিমের সহায়তায় তাদেরকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে কিছু না পেলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, গতকাল রাত আনুমানিক তিনটার দিকে হলে চার শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। চিকিৎসার পর রাতেই আবার তাদের থানায় আনা হয়। বর্তমানে তারা থানায় আছে।

বাংলা ইনসাইডার/এসএস



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭