কালার ইনসাইড

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের চলে যাওয়ার একবছর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/01/2020


Thumbnail

তাকে কখনো কখনো আমরা বলি গানের পাখি, কারণ তার লেখা আর সুরকৃত গান আমাদের সঙ্গীত জগতকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করেছে। শুধু সঙ্গীত জগতকেই আলোড়িত করেননি তিনি, একইসঙ্গে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা। বলছিলাম আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা। আজ এই প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক, মুক্তিযোদ্ধার প্রথম প্রয়াণদিবস। ঠিক একবছর আগে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তার প্রয়াণদিনটিকে স্মরণ করতে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনের আলোকে আমাদের আজকের আয়োজন-

১৯৭১ সাল। রোজার মাসের ঘটনা। ১৫-বছর বয়সী কিশোর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কারাগারে বন্দী। সাতাশে রমজানের ইফতারের পর তিনি বসে ছিলেন, এমন সময় কারাগারের দরজা বেশ আওয়াজ করে খুলে গেল। দরজা খোলার সাথে সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন অফিসার ভেতরে প্রবেশ করলেন।

‘সে আমাদের বললো যে কাম আউটসাইড (বাইরে এসো) এবং লাইনআপ (সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াও)। লাইনআপ করার পরে তিনি আমাদের আঙ্গুল তুলেতুলে বললেন যে এ কয়জন একদিকে থাকো, এবং এই কয়জন আরেকদিকে থাকো। ৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আলাদা করলো এবং আমরা চারজন আলাদা’- বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন একজন ব্রিগেডিয়ার। তার কাছে গিয়ে কিশোর বুলবুল জানতে চাইলেন, ‘কেন তাদের আলাদা করা হচ্ছে?’

‘তখন সে আমাকে ডেকে নিয়ে মাথায় হাত বুলালো কিছুক্ষণ। বললো যে তোমরা তো সাতদিন পরে ধরা পড়েছিলে। ওদের মৃত্যুদণ্ড আজ কার্যকর করবো আর তোমাদেরটা কার্যকর করবো আর তিনদিন পর। সরাসরি বললো। আমি ওনাকে থ্যাংকস দিলাম। ঐ রাতটা আমি আমার জীবন থেকে কখনো ভুলতে পারবো না। অনেক হৃদয়বিদারক একটা বিষয়।’

সংগীত জগতে বুলবুলের উত্থান

১৯৭০ এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেশাত্মবোধক গান দিয়ে সুরকার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। তবে তিনি নিজে কখনো গায়ক হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেননি।

‘আমার স্বপ্ন ছিল যে আমি গান লিখবো। যিনি গান গান, তিনি গান গাইবেন। আমি একাধারে গান লিখবো, গান সুর করবো- এমন দুঃস্বপ্ন কখনো দেখিনি।’

`নয়নের আলো` সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আসেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। ওই সিনেমার ছয়টি গানই তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি তাকে।

কিন্তু নয়নের আলো সিনেমায় সঙ্গীত পরিচালনার কাজ পেতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে।

‘এ ছবিটি পাওয়ার যে প্রচেষ্টা আমার, সে কী বলবো? হিমালয় পর্বতের চূড়ায় উঠা আর এই ছবির কাজ পাওয়া একই কথা।’

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হাতের রেখা দেখে একজন জ্যোতিষী মন্তব্য করেছিলেন, এ হাতের মধ্যে সুরকার এবং গীতিকার হওয়ার কোন রেখাই নেই! কিন্তু জ্যোতিষীর সেই ভবিষ্যতবাণী ভুল প্রমাণ করেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। পরবর্তীতে তিনি হয়ে ওঠেন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুরকার ও গীতিকার।

বাংলাদেশের কয়েকশ` সিনেমায় তিনি সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। আর এসব গান দর্শকদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। একসময় তাঁর সুর করা গানগুলো ছিল শ্রোতা-দর্শকদের মুখে-মুখে।

তাঁর লেখা এবং সুর করা অনেক জনপ্রিয় গানের শিল্পী ছিলেন রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, অ্যান্ড্রু কিশোর, খালিদ হাসান মিলু, কনকচাঁপা এবং সামিনা চৌধুরী। `সব কটা জানালা খুলে দাও না`, `আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন`, `পড়ে না চোখের পলক`, `আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে`, `আম্মাজান আম্মাজান`, `ঘুমিয়ে থাকো গো সজনী`, `চিঠি লিখেছে বউ আমার`, `জাগো বাংলাদেশ জাগো` - এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গানের সুর করেছেন তিনি।

তিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।

গত বছরের ২২ জানুয়ারি ভোর সোয়া ৪টার দিকে নিজ বাসায় হার্ট অ্যাটাকের পর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। এর আগে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি বুলবুলের হার্টে আটটি ব্লক ধরা পড়ে। তার শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পেরে চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭