ইনসাইড থট

টিআইবি’র যোগ বিয়োগ গুন ভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/01/2020


Thumbnail

দুর্নীতির ধারণা সূচক বা করাপশান পারসেপশন ইনডেক্স (সিপিআই) অনুযায়ী বাংলাদেশের স্কোর অপরিবর্তিত রয়েছে। ১০০ মানদণ্ডে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্কোর ২৬। ২০১৮ সালেও একই স্কোর ছিল। বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের ২০১৯ সালের দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এই সূচক প্রকাশ করেছে।

বাংলা ডিকশনারিতে ধারণা শব্দের বাংলা অর্থ হলো - বোধ, অনুভূতি, উপলব্ধি বা অনুমান, সংস্কার, ইত্যাদি। মানে এটা কোন প্রমাণ নয়। যে ধারণা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ করেছে তা বাস্তব অবস্থার চেয়ে খারাপ বা ভালো যে কোন একটা হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে দুর্নীতির তথ্য উপাত্ত এমন করে তুলে ধরা বা প্রচারটা এমন করেই করা হয় যে, তা দেখে মনে হত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ প্রমাণিত তথ্য উপাত্ত দিয়ে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের প্রমাণিত অবস্থান তুলে ধরেছে, ধারণা নয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) হল বার্লিন ভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশী শাখা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একটি নাগরিক সংস্থা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সংস্থা ট্রাস্টি বোর্ডের মধ্যে যারা রয়েছেন তাঁরা বিদেশী, অনুদানের টাকায় বাংলাদেশে তাঁদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন, নিজেদের টাকায় নয়।

আমাদের দেশের দুর্নীতি যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। দুর্নীতি আর উন্নয়ন দুই ভাইয়ের মত। উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে দুর্নীতি এগুতে থাকে, পরে এক সময় দুর্নীতি পিছু পড়ে যায়। আমাদের দেশের দুর্নীতি এখন উৎসবের মত লাগামহীন চলছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার একটা বিরাট অংশ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।

সাম্প্রতিক প্রকাশিত বাংলাদেশ থেকে কানাডায় টাকা পাচারের খবরগুলোর শিরোনামগুলো ছিল- ‘ব্যাংকের টাকা মেরে কানাডায় বাড়ি’ করেছেন আব্দুল হান্নান রতন, ‘৩৫০০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট’ প্রশান্ত কুমার হালদার, ‘৩০০ কোটি টাকা মেরে কানাডায় ব্যবসায়ী গাজী বেলায়েত হোসেন মিঠু, ‘শত শত কোটি টাকা কানাডা পাচার করেন তাজুল’, ‘কানাডার ব্যবসায়ী রানা-ই কি বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী জয়’!, ‘Could Ajax, Ont. businessman also be a fugitive crime boss Rana?’

আরেকটি খবরে বলা হয়েছে যে, শুধু ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে চার প্রক্রিয়ায় ৫৯০ কোটি ডলার (দেশীয় মুদ্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। গত সোমবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। ২৮ জানুয়ারি ওয়াশিংটন থেকে জিএফআইর এ রিপোর্ট প্রকাশ হয়।

জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪টি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা।

জিএফআইর তথ্যমতে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে, যা দেশের চলতি বছরের (২০১৮-২০১৯) জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। প্রতিবছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা। টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

এছাড়া অর্থ পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের প্রায় ২০ শতাংশই কোন না কোনোভাবেই পাচার হচ্ছে। তবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশেও ২৮০ কোটি ডলার এসেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৭ সালের জিএফআইর প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু দুবাই নয়, ১২টি দেশে জিয়া পরিবারের সম্পদ আছে- যার পরিমাণ ১ হাজার দুইশ কোটি টাকা। তথ্যমতে, সৌদি আরবে আহমদ আল আসাদের নামে আল আরব শপিং মল রয়েছে। কিন্তু শপিং মলটির প্রকৃত মালিকানা হলো খালেদা জিয়ার। কাতারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ইকরা। এটির মালিকও খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান। এছাড়া খালেদা জিয়ার ভাতিজা তুহিনের নামে কানাডায় তিনটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া গত কয়েক বছরে কমিটি বাণিজ্য, নমিনেশন বাণিজ্য, ক্যাসিনো কারবার করে তারেক জিয়া কী পরিমাণ টাকা ইংল্যান্ডে পাচার করে নিয়েছেন তার হিসাব সবাই অনুমান করতে পারেন।

সারা পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্রের যত প্রাক্তন কলোনির দেশ আছে সব দেশের দুর্নীতিবাজেরাই বিলেতে টাকা পাচার করে। কিন্তু বিলেতিটা টিআইবি`র মাধ্যমে আমাদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বললেই তাঁরাই দুর্নীতিকে জায়েজ করে আমাদের মত গরীব দেশের টাকা পেয়ে, নানা বাহানায়, নানা ওজুহাতে।

যে সব দেশের টাকায় আমাদের দেশে টিআইবি দুর্নীতির যোগ বিয়োগ গুন ভাগ করে, সে সব দেশেই কিন্তু আমাদের দেশ থেকে টাকা পাচার হয় হুন্ডি, ওভার ইনভয়েস, আন্ডার ইনভয়েস, ভিওআইপি, ইত্যাদির মাধ্যমে। উপরের খবরে দেখা যায়, এই দেশ আমাদের সুশাসন নিশ্চিত করতে বলে কিন্তু তাঁরা তাঁদের দেশে আমাদের দেশের অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না।

টি আই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এবছর কানাডা আর যুক্তরাজ্যের দুটি দেশের অবস্থান ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে ১২ তে অবস্থান করছে। কিন্তু পত্রিকায় খবর আছে বাংলাদেশ উজাড় করে বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে কানাডায়। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এভাবে লুটপাটের টাকা এনে কানাডায় গড়ে তুলছে কথিত বেগম পাড়া। নগদ টাকায় মিলিয়ন ডলারের বাড়ি কিনে শুরু করছে ব্যবসা। এমন কি কমিউনিটির মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করে হয়ে উঠছে কমিউনিটির পৃষ্ঠপোষক।

বাংলাদেশের মত একটি দেশ থেকে যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশে ঢুকছে সেখানে তাঁরা দুর্নীতিতে টি আই রিপোর্টে ১২ নং এ অবস্থান কী বিশ্বাসযোগ্য! তার কী তথ্য বিকৃত করেছে! প্রশ্নটা টিআইবি’র বাংলাদেশের নেতাদের করা যায় কি! ব্যাখ্যা দেবেন, না কি নিয়মিত পাওয়া টাকার লোভে উনারা মুখে কুলূপ আঁটবেন!

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭