ইনসাইড পলিটিক্স

তাপস; একজন জাতীয় নেতার জন্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/01/2020


Thumbnail

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ১ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনী প্রচারণার শেষ পর্যায়ে উত্তেজনা, উৎকন্ঠা এবং আবেগ সবই বাড়ছে। এই নির্বাচনে জয় পরাজয়ের নানা হিসেব নিকেশও হচ্ছে। জয়- পরাজয় যাই হোক না কেন, এই নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের অর্জন অনেকবেশি বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় চমক শেখ ফজলে নূর তাপস।

রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম শেখ ফজলে নূর তাপসের। শহীদ ফজলুল হক মনির কনিষ্ঠ সন্তান। তাপস মাত্র ৪ বছর বয়সে বাবা মাকে হারিয়েছিলেন। তারপর তার বেড়ে ওঠা এবং রাজনীতিতে আত্মপ্রকাশ ছিল রুপকথার গল্পের মতোই। তিনি সবসময় নিজেকে আড়ালে রেখেছিলেন। একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যারিস্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে তেমন আলোচিত বা সরব দেখা যায়নি। নীরবে নিভৃতে নিজের পেশার কাজেই নিজেকে মনোনিবেশ করেছিলেন। কিন্তু ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগের সংকট সময়ে প্রথম আলোচনায় আসেন শেখ ফজলে নূর তাপস। ওয়ান ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হলে সেসময় যারা সিনিয়র আইনজীবী ছিলেন, শেখ হাসিনার মামলা দেখভাল করতেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকনউদ্দীন মাহমদু, ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলামের মত জাদরেল আইনজীবীরা। তারা সে সময় শেখ হাসিনার মামলাগুলো লড়তে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। তখনই শেখ ফজলে নূর তাপস আলোচনায় আসেন। মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি মূল সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এ কারণেই ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে ধানমন্ডি আসনে ব্যারিস্টার রোকনউদ্দীন মাহমুদকে সরিয়ে তরুণ শেখ ফজলে নূর তাপসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এমপি হিসেবে তাপস কেমন করবেন এনিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু সুদর্শন, বিনয়ী এবং দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী শেখ ফজলে নূর তাপস ওই নির্বাচনে ভালো ফলাফল করেন। এরপর তিনি একে একে তিনটি নির্বাচনেই বিজয়ী হন। নির্বাচনে বিজয়ী হলেও রাজনীতিতে তাকে খুব একটা সরব দেখা যায়নি। পেশার দিকেই তিনি মনোনিবেশন করেন এবং গত দশ বছরে শীর্ষস্থানীয় একজন আইনজীবী হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।

রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়ানো এই তরুণ রাজনীতিবিদ গত তিন মেয়াদে ধানমন্ডি এলাকায় নিজের একটি ক্লিন ইমেজ তৈরি করেছিলেন। তিনি শুধু একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেননি, সব রকমের দুর্ণীতি থেকেও নিজের দূরে রেখেছেন। এ কারণেই এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যখন ফজলে নূর তাপস আগ্রহী হন তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা তীব্র আগ্রহবোধ তৈরি হয়েছিল। আর এই আশাবাদের কারণ ছিল গত ১১ বছরে তাপসের ক্লিন ইমেজ, তার ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিতে তার দৃঢ়তা দেখে।

এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের ফলাফল যাই হোক না কেনো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বহুদিন পর রাজনীতিতে একজন জাতীয় নেতা পেলেন। যদি শেখ ফজলে নূর তাপস শেখ মনির ছেলে বা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আত্মীয় কিংবা শেখ সেলিমের ভাইস্তা। কিন্তু এসব ছাপিয়ে তাপস তার নিজের ব্যক্তিতে এবং নিজের পরিচয়ে পরিচিত হয়েছেন।

এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বিষয় বলতে শোনা গেছে যে ঢাকার কেউ যদি উন্নতি করতে পারেন তাহলে সেটা তাপসই পারবেন। কারণ তার দৃঢ়তা, রাজনৈতিক অবস্থান এবং ক্ষমতাসীন দলে তার প্রভাব সব মিলিয়ে ঢাকাকে তিনি বদলে ফেলতে পারবেন।

নির্বাচনী প্রচারণায় তাপসের দৃঢ় ব্যক্তিত্ব, তার পরিচ্ছন্ন প্রচার কৌশল এবং ভোটারদের কাছে তার যাওয়ার ভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়গুলো সাধারণ মানুষকে মুগ্ধ করেছে। এজন্যই তাপস তার পারিবারিক পরিচয় ছাপিয়ে একজন জাতীয় নেতা হিসেবে আর্বিভূত হয়েছেন। বিশেষ করে তরুণ এবং নারী ভোটারদের মধ্যে তিনি এক ধরণের সারা ফেলেছেন।

তাই আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন এই নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেনো আগামী দিনে তারা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একজন জাতীয় নেতা পেলো। এটাই আওয়ামী লীগের অনকে বড় অর্জন বলে অনেকে মনে করছেন।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭