ইনসাইড পলিটিক্স

তাবিথ; এলিট শ্রেনীর নতুন প্রতিনিধি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/01/2020


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি গোত্র আছে। একটি গোত্র যারা তৃণমূল থেকে উঠে আসেন, তিলে তিলে কর্মী থেকে নেতায় পরিণত হন। সংগঠনের নেতাকর্মীদের মন জয় করে অবশেষে হয়তো কোন পদপদবী পান। আবার অনেকে আছেন যারা সোনার চামচ মুখে দিয়ে রাজনীতিতে আসেন। রাজনীতিতে তাদের তৃণমূলের কর্মী হতে হয়না, ধাপে ধাপে উন্নয়ন করতে হয়না- তাঁরা যেন সৌভাগ্যবান দেবদূত। তাঁরা এসেই বড় কিছু পেয়ে যান এবং ভাগ্যচক্রে নেতা হয়ে যান। এদের গণমানুষের সাথে মিশতে হয়না, গণমানুষের সঙ্গে তাদের সংযোগ রাখতে হয়না, তাঁরা কূটনৈতিক পাড়ায় ঘোরাঘুরি করেন, পাঁচ তারকা হোটেলে এলিট শ্রেনীর সঙ্গে বসে দেশ-জাতি নিয়ে শলাপরামর্শ করেন, কথা বলেন এবং এটাই রাজনীতির এক কৌশল।

বাংলাদেশের রাজনীতির এই নতুন ধারার প্রতিনিধিত্ব করেন অনেকে। যাদের রাজনীতিতে কোন অতীত ইতিহাস নেই, অথচ তাঁরা রাজনীতিতে বড় নেতা হয়েছেন। এরকম এলিট শ্রেনীর রাজনীতিবিদদের নতুন প্রতিনিধি হচ্ছেন তাবিথ আউয়াল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে এলিট রাজনীতিবিদের তালিকায় তাবিথ আউয়াল অন্তর্ভুক্ত হলেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই নির্বাচনে তাবিথ আউয়াল জিতুক বা হারুক- ড্রইংরুম রাজনীতি বা অভিজাত শ্রেনীর রাজনীতিতে তিনি যে একজন নেতা হিসেবে এই নির্বাচন তাকে প্রতিষ্ঠিত করলো।

২০১৫ সিটি নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে ঢাকা উত্তরে নির্বাচন করার কথা ছিল আবদুল আউয়াল মিন্টুর। কিন্তু রহস্যময় কারণে তিনি তাঁর মনোনয়ন ফরম এমনভাবে পূরণ করেছিলেন যে তাঁর মনোনয়নটি বাতিল হয়ে যায়। আবদুল আউয়াল মিন্টু সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পুত্র তাবিথ আউয়ালকে মনোনয়ন কেনান এবং তাবিথ আউয়ালও মনোনয়ন পত্র জমা দেন। আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়ন বাতিল হলেও তাবিথ আউয়ালের মনোনয়ন বাতিল হয়নি এবং অগত্যা তাবিথকেই মেনে নিতে হয় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে। যদিও সেই সময় ঢাকা উত্তরে বিএনপির অনেক ত্যাগী, পরীক্ষিত, নির্যাতিত এবং যোগ্য প্রার্থী ছিলেন। সেই সময়ে রাজনীতিতে তাবিথ অনাহুত-অপরিচিত ছিলেন। ফুটবলের সংগঠক ছাড়া তাঁর তেমন কোন পরিচয় ছিলনা এবং তাঁর একটি পরিচয় ছিল তিনি আবদুল আউয়াল মিন্টুর পুত্র। আবদুল আউয়াল মিন্টুর ঐশ্বর্য্য-সম্পদের তিনি উত্তরাধিকার। ঐ নির্বাচনে তাবিথ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় ৬২ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ভোট তাবিথের ভোট নয়, এটা হল বিএনপির ভোট।

যাই হোক, ঐ নির্বাচনের পর তাবিথ থেমে থাকেননি, যেহেতু তিনি এলিট শ্রেনীর প্রতিনিধিত্ব করেন তাই তিনি বোঝেন যে কিভাবে দলের নীতিনির্ধারকের ঘনিষ্ঠ হতে হয়, অর্থবৈভবের বলে তিনি লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে করায়ত্ত্ব করেন। তারেক জিয়ার প্রধান অর্থদাতা হিসেবেও তাবিথ আউয়ালের নাম এসেছে। যেহেতু তাঁর বিদেশে একাধিক কোম্পানি রয়েছে, কাজেই তারেককে সন্তুষ্ট করতে তাবিথকে বেশি বেগ পেতে হয়নি। একারণে ২০২০ এর সিটি নির্বাচনে তাবিথকে মনোনয়ন দিতে বিএনপির কোনরকম বিতর্ক বা চিন্তা হয়নি। আর তাই কোনদিন বিএনপি না করেও, কোন জেল-জুলুম ভোগ না করে, সরকারের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক রেখেও তাবিথই হলেন বিএনপির প্রার্থী এবং নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি প্রমাণ করলেন যে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি নন। তিনি যেভাবে বাংলা বলেন, সেই বাংলা হল প্রায় ইংরেজি অনুবাদের মতো করে বাংলা। প্রায় সবগুলো কথার বাংলা বাক্যগঠন শুদ্ধ্ব হয়না, সাধারণ মানুষের ভাষা যেমন তিনি বোঝেন না, সাধারণ মানুষের ভাষায় তিনি কথাও বলতে পারেন না। ইংরেজিকে বাংলা করে যেভাবে কথা বলা হয় কিংবা বিদেশিরা যেভাবে বাংলায় কথা বলেন, সেভাবেই তিনি নির্বাচনি প্রচারণায় চালিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, তাবিথ আউয়াল যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তা নিশ্চিত।

বিএনপির মধ্যে যারা এলিট শ্রেনীর রাজনীতি করেন, তাঁরা অনেকেই রাজনীতি থেকে আস্তে আস্তে বিদায় নিয়েছেন। যেমন মোর্শেদ খান, রিয়াজ রহমান, শমশের মবিন চৌধুরীর সবাই বিএনপির রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। আবদুল আউয়াল মিন্টুর পুত্র তাবিথ আউয়াল এখন ড্রইংরুম এবং ডিপ্লোমেটিক রাজনীতির একজন প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভুত হলেন। দুটো নির্বাচন করার অভিজ্ঞতার কারণে কূটনৈতিক মহলে তাঁর কদর বাড়বে এবং তিনি এলিট শ্রেনীর বিএনপির রাজনীতির নতুন প্রতিনিধি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন। নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক না কেন, বিএনপি হয়তো একজন নতুন এলিট রাজনীতিবিদ পেলেন তাদের দলের জন্য যারা ড্রয়িংরুমে নানা ষড়যন্ত্র করতে পারবেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭