ইনসাইড আর্টিকেল

হাসিনা ম্যাজিক!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/06/2017


Thumbnail

’ভালোবেসে দেশ পরিচালনাই আমার ম্যাজিক’ কিন্তু তিনি নিজেই তো ম্যাজিকম্যান। তার ম্যাজিক দিয়ে বার বার তার প্রমাণ দিয়ে গেলেন। তিনি এক ও অভিন্ন! তিনিই হলেন দূরদর্শী রণতরী! দশ সন্তানের জন্য যেমন এক ’মা’ই যথেষ্ট। তেমনি দলের জন্য তিনি একাই একশো। শত বাধা, ঝড়ের মধ্যেও আগলে রেখেছেন তার খুঁটিটাকে। খুঁটি কখনো হয়তো দুর্বল হয়েছে কিন্তু তাকে আবারও মজবুত করেছেন তিনি। তীরে এনে বারবার নিজের দলকে সুসজ্জিত যিনি করেছেন তিনি আর কেউ নন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যাকে ছাড়া দলকে ভাবা এখন অকল্পনীয়। যাকে ছাড়া আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব মুখ থুবড়ে পরে। যেই মেরুদণ্ডে ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি। তার বড় উদাহরণ ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট। চারদিকে সমালোচনা-বিতর্কে মুখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হিমশিম খাচ্ছিলো। বিগত বছরের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপগুলোও সমালোচনার মুখে ম্লান হতে শুরু করে। নষ্ট হতে চলছিলো দলটির জনপ্রিয়তা। দেশবাসীর মধ্য একটা চাপা ক্ষোভ যেন দলটির মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছিলো। নেতাদের মধ্যে বিবেধ আর অন্তঃকোন্দল কেমন যেন বিস্ফোরিত হচ্ছিলো। দলটির মধ্যে যেই অন্ধকার শুরু হচ্ছিলো ঠিক তখই বিজলীর মতো প্রস্ফুটিত হলেন শেখ হাসিনা। সব সমালোচনা, নিন্দা, বিতর্কের উর্দ্ধে বাজেটের একটা নতুন দিক নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগকে দিলো নতুন রূপ। জনপ্রিয়তার যে ঘাটতি হচ্ছিলো তা থেকে দলকে আবারও উত্তরণের পথ করে দিলেন তিনি।

শেখ হাসিনা যে জনগণের জন্যই নিবেদিত প্রাণ তা সবসময় তিনি তার কাজে প্রকাশ করেছেন। আর তা অস্বীকার স্বয়ং তার শত্রুও করবে না। আর এর প্রমাণ বার বার দিয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের এত মন্ত্রী-নেতা, তারপরও খারাপ সময়ে এই নেত্রীর দূরদর্শিতা ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বাজেটের মূল দায়িত্ব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। অথচ সময় মতো ঠিকই নিজের দায় এড়িয়ে গেলেন। যখন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের ১৫ শতাংশ ভ্যাট, আবগারি শুল্ক, সঞ্চয়পত্র, চালের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে হইচই, চাপের মুখে পরেন মুহিত সাহেব, তখন সব কিছু ছাপিয়ে প্রস্ফুটিত হন শেখ হাসিনা। দলের যোগ্য নেত্রীর পরিচয় দেন আবারও। সকলের গ্রহণযোগ্য বাজেট নিয়ে আবারও দেখিয়ে দিলেন তিনি ছাড়া আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব ভঙ্গুর।

এমন উদাহরণের যেন অভাব নেই। ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসে বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিয়ে টানা আটদিন শিক্ষকদের আন্দোলনের পর শেষমেষ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই গতি ফিরেছিলো বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। অথচ এই দায়িত্ব সম্পূর্ণ শিক্ষামন্ত্রণালয় অর্থাৎ শিক্ষামন্ত্রীর। কিন্তু তাতেও সমাধান দিতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে।

এর আগে, ২০১৫তে ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বেসকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দিনভর সড়ক অবরোধের পর শিক্ষামন্ত্রী বা অর্থমন্ত্রী তো কোনো সমাধান দিতেই পারেন নি বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর সমাধান দেন খুবই সহজভাবে।

শুধু এসব উদাহরণই নয়। যতবার আওয়ামী লীগ সঙ্কটে পরেছে ততবার দলটিকে সঙ্কট কূপ থেকে উত্তেরণ করেন তিনি। ইতিহাস তার সাক্ষী।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বয়স ৬৮ বছর। তার মধ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটির বয়স ৩৬ বছর। এই কয় বছরের বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে আজ এ অবস্থায় এসেছে শুধু এই নেত্রীর হাত ধরে।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যখন নেতা নির্বাচন নিয়ে প্রচণ্ড অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল দলটি, তখন প্রবাসে নির্বাসিত শেখ হাসিনাকেই দলীয় প্রধান নির্বাচন করা হয়। দেশে ফিরে দলের হাল ধরলেন তিনি। তিনিই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই দলের মধ্যে মণিতে পরিণত হলেন শেখ হাসিনা। এরপর দলের নেতাদের এক অংশের বিরাগভাজন হতে থাকলেন। যে আশায় শেখ হাসিনাকে সভাপতি করেছিলেন, সে আশাই যে তাদের অপূর্ণই থাকলো। ভেতরে ভেতরে তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার প্রক্রিয়া শুরু হলো। কিন্তু তাদেরকেই বুকে টেনে নিয়েছিলেন তিনি। রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিলেন।

১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত ধারাবাহিক ছাত্র -গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়। এই আন্দোলন সংগ্রামে শেখ হাসিনার দূরদর্শী অবিচল নেতৃত্ব জনগণকে গণতন্ত্র মুক্তির পথ দেখায়।

১৯৯১ সালে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সুক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করা হয় । আকস্মিক বিপর্যয়ে আবার শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার পরিকল্পনা সামনে এলো। কিন্তু তখনও থেমে যান নি তিনি। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যাহত রাখতে কাজ করেন শেখ হাসিনা।

দরিদ্র কৃষক, জেলে, গরিব মেহনতী মানুষ, আপামর জনতা বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাকে ভালোবাসেন, অটুট আস্থা, আনুগত্যের কারণেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। মৃত্যুর মুখ থেকে আবারও দলকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসেন তিনি। এ সময় গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি করলেন, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা প্রবর্তন করলেন, একটি বাড়ি একটি খামার হলো, খাদ্যে দেশ হলো স্বয়ং সম্পূর্ণ। যেমন স্বপ্নের দেশ গড়বার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো ঠিক তেমনভাবে দেশ চলছিল।

২০০১ সালে নীল-নক্সার নির্বাচনে পুনরায় বিএনপি -জামায়াত জোট ক্ষমতাসীন হয়। বেগম জিয়ারপুত্র তারেক রহমান হাওয়া ভবনখ্যাত বিকল্প ক্ষমতাকেন্দ্র গড়ে তুলে দেশের মানুষকে এক অবর্ণনীয় দুযোর্গের মধ্যে ফেলে দেয়। ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার জন্য বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে সংবিধান সংশোধন করা হয়। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ,চোদ্দ দল,মহাজোট তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের মুখে ইয়াজউদ্দিন সরকারকে হটিয়ে সেনা সমর্থিত মঈনুদ্দিন -ফখরুদ্দীনের সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে বাধা দেয় ;কিন্তু সকল বাধা উপেক্ষা করে জনগণের টানে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তাঁকে কারান্তরীণ করা হয়। জনগণের আন্দোলনের চাপে সেনা সমর্থিত সরকার জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে আসেন । শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিয়ে ,২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। এই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত বক্তব্য অনুযায়ী একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া হয়, যা এখন ও অব্যাহত আছে। কোন কোন বিচারের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সর্বোচ্চ আদালত থেকে রায় হওয়ার পর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয় সম্ভব হয়েছে ,দেশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুলে দিয়েছেন উন্নয়নের মহাসড়কে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে আগুন সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতির জন্ম দেয়। সারাবিশ্বে আল কায়েদা,নব্য সন্ত্রাসী আইএস ও বিভিন্ন নামে যে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটেছে এই জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে, যা কি না সারাবিশ্বে সমাদৃত হয়েছে ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্য প্রশংসনীয়। সদ্য সফরকারী চীনা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন ,বিভিন্ন স্মারক ও ২৭টি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে এসেছেন এই সফরে চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ১৩ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেন।

পারস্পরিক সহযোগিতা ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ-চীন ঐক্যমত্য হয়। বাংলাদেশ এক চীন নীতির প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ঘোষণা করে। এর দুদিন পরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে যোগ দিতে ভারতে যান। সেখানে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য নানাবিধ বিষয় উপস্থাপন করেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জঙ্গীবাদ নিরসনে বাংলাদেশের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এও কম সাফল্য নয়। এতসব শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলার জনগণের নেত্রী নন, সারাবিশ্বে ও সমাদৃত সফল রাষ্ট্রনায়কদের একজন। এজন্যই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদন্ধি অপ্রতিরোধ্য এক জীবন্ত কিংবদন্তি।

দলের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মীদের কাছে শেখ হাসিনার হাজার দোষ থাকলেও আওয়ামী লীগের কোটি সমর্থক ও কর্মীর কাছে তিনি এক ম্যাজিক। যা টনিকের মতো কাজ করে। রাজনৈতিক কৌশলে নমনীয়তা দেখানো রাজনীতিবিদ্যারই একটি স্বীকৃত পন্থা। কিন্তু নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে দৃঢ়তা না থাকাকে রাজনীতিবিদ্যা সমর্থন করে না। যা শেখ হাসিনার অস্তিত্বে মিশে আছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদন্ধি অপ্রতিরোধ্য এক জীবন্ত কিংবদন্তি। আওয়ামী লীগের ট্র্যাজিক ’হিরো’ই তিনি।


বাংলা ইনসাইডার/টিআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭