ইনসাইড হেলথ

এবার সতর্ক হন বার্ড ফ্লু ভাইরাস সম্পর্কে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/02/2020


Thumbnail

চীনে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই ক্রমে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে, নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে আরও অসংখ্য মানুষ। বিশ্ব আতঙ্কের মুখে পড়ছে, চীন অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিশ্ব থেকে। এর মধ্যে আজ নতুন খবর হলো করোনাভাইরাসের পাশাপাশি এবার বার্ড ফ্লুও চীনে ছড়িয়ে পড়েছে। এই বার্ড ফ্লুও পুরো জাতির জন্য মহামারি এবং প্রাণঘাতী হতে পারে। আর তাই বিশ্ববাসীরও আরেকদফা সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

এই দুই ফ্লুয়ের লক্ষণ কিছুটা কাছাকাছি, কিছুটা ভিন্ন। কিন্তু প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভিন্ন। বার্ড ফ্লুয়ের আদ্যপান্ত নিয়ে থাকছে আজকের আয়োজন-

বার্ড ফ্লু এর লক্ষণ

সাধারণত সংক্রমণের ১-৩ দিন পর সাধারন ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই রোগীর ঠাণ্ডার লক্ষণ প্রকাশ পায় যেমন- জ্বর, গা ব্যথা, গা ম্যাজম্যাজ করা, ঠাণ্ডা লাগা, হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, মাথাব্যথা, মাংসপেশি ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি। বার্ড ফ্লুর লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রে খুব সামান্য হতে পারে আবার অনেকক্ষেত্রে অত্যন্ত তীব্র হতে পারে যেখানে মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। পরবর্তীতে অবস্থা জটিল হলে অনেকক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সংক্রমণ বা এনসেফালাইটিস, হৃৎপিণ্ডের সংক্রমণ বা মায়োকার্ডাটাই, মাংসপেশিতে সংক্রমণ বা মায়োসাইটিস ইত্যাদি হতে পারে। বার্ডফ্লু হলো ইনফ্লুয়েঞ্জার তীব্র একটি রূপ।

কীভাবে ছড়াতে পারে

১. আক্রান্ত পশুপাখির প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে অথবা বর্জ্য থেকে বার্ড ফ্লু হতে পারে।

২. আবার আক্রান্ত ব্যক্তির প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে অন্য ব্যক্তির মাঝে বার্ড ফ্লু ছড়াতে পারে।

৩. আক্রান্ত পাখির ডিম বা মাংস সঠিকভাবে সিদ্ধ করে না খেলে বার্ড ফ্লু হতে পারে।

রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা

বার্ডফ্লু নির্ণয়ের ক্ষেত্রে, রক্তে এই ভাইরাসের এন্টিবডি পিসিআর পদ্ধতিতে দেখে ভাইরাসটি সনাক্ত করা যায়। সাধারণত ভাইরাস কালচার বা ভাইরাস এনটিজেন, আর এন এ আর টি পি সি আর দিয়ে নাক ও মুখগহ্বর থেকে লালার নমুনা নিয়ে এই রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে।

বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে করণীয়

এটি ভাইরাসজনিত একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগের জীবাণু বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য পাখির মল, রক্ত ও শ্বাসনালীতে বাস করে। মানুষও বিভিন্ন কারণে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত যারা আক্রান্ত পাখির সংস্পর্শে এসেছে, জবাই বা পালক ছাড়ানোর কাজ করেছে তাদের এ রোগটি হতে পারে। আবার অনেক শিশু আক্রান্ত পাখি বা মৃত হাঁস-মুরগি নিয়ে খেলা করে। তারাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এটি প্রথমে সাধারণ ফ্লুর মত শুরু হলেও পরবর্তীতে মারাত্মক নিউমোনিয়ার আকার ধারণ করে, যার পরিণতিতে মৃত্যুও হতে পারে। নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মেনে চললে এবং একটু সতর্ক হলে বার্ডফ্লু প্রতিরোধ করা সম্ভব-

১. খালি হাতে অসুস্থ বা অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এমন হাঁস বা মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরা বা নাড়াচাড়া করা যাবে না।

২. অসুস্থ হাঁস, মুরগি জবাই করা বা পালক ছাড়ানো অথবা নাড়াচাড়া করা যাবে না।

৩. অসুস্থ হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরা এবং সেগুলো নিয়ে খেলাধুলা করা থেকে শিশুদের বিরত রাখতে হবে।

৪. আক্রান্ত পাখিদের বিষ্ঠায় অতিরিক্ত পরিমাণে এই ভাইরাস পাওয়া যায়। তাই যারা ঘরে পাখি পালন করেন তাদের ঘরে পাখির বিষ্ঠার মাধ্যমে শিশু ও বড়দের মধ্যে জীবাণু সংক্রমনের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

৫. হাঁস, মুরগি বা পশুপাখি ধরার পর ভালো করে সাবান বা ছাই এবং পানি দিয়ে দুই হাত ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

৬. হাঁস, মুরগি বা পশুপাখির ঘরে কাজ করার ক্ষেত্রে, কাপড় দিয়ে নাক ও মুখ ভালভাবে ঢেকে নিতে হবে। পশুপাখি নাড়াচাড়ার পর হাত না ধুয়ে চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা যাবে না।

৭. হাঁস, মুরগির মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করে রান্না করতে হবে। আধা সেদ্ধ মাংস, ডিম বা মাংসের তৈরি খাবার খেলে সংক্রমনের সম্ভাবনা থাকে।

৮. বার্ড ফ্লু আক্রান্ত এলাকা অর্থাৎ যেখানে এ রোগ ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এমন স্থানে বা তার আশপাশে যারা বাস করেন, তাদের হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখি ক্রয়-বিক্রয় বা জবাই করার স্থান থেকে দূরে থাকতে হবে।

৯. অসুস্থ হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখির মল সার অথবা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

১০. কোথাও হঠাৎ করে হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখি অস্বাভাবিকভাবে মারা গেলে বসে না থেকে কোনো কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে, পশুসম্পদ দপ্তর বা আশেপাশের হাসপাতালেও জানাতে পারেন।

১১. মৃত হাঁস, মুরগি এবং পাখি মাটিতে পুঁতে ফেলার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

১২. হাঁস, মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরার পর যদি কেউ জ্বর, সর্দি কিংবা কাশি জাতীয় কোনো রোগে ভোগেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং অবশ্যই রোগে আক্রান্ত বা মৃত হাঁস, মুরগির সংস্পর্শে আসার বিষয়টি চিকিৎসককে জানাতে হবে।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭