ইনসাইড থট

এবার কি নগর সরকার হবে!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/02/2020


Thumbnail

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে লেখাপড়া করা আবু আলম মো. শহিদ খান জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরে স্থানীয় সরকার সচিব হন। এর পর স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার কাজে তাঁকে দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। ১০ জুলাই, ২০১১ তারিখে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি কর্পোরেশনে এবং ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পিছনে ছিল একটি মহৎ পরিকল্পনা। নবগঠিত এসব সিটি কর্পোরেশনের সাথে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব বিবেচনা করে জাইকার অর্থায়নে চট্টগ্রাম সহ নবগঠিত সিটি কর্পোরেশনের (এবং পরবর্তীতে গঠিত সহ) উন্নয়নের দায়িত্ব পায় জাইকা। যার মূল পরিকল্পনা ছিল উন্নয়নের পাশাপাশি নগর সরকার চালু করা। এটা সফল হলে সারা দেশের সকল নগরীতেই এটি ছড়িয়ে দেওয়ার খসড়া পরিকল্পনা ছিল।

উন্নত দেশের নগর এলাকায় ‘নগর-সেবা’ বা সিটি সার্ভিস বলতে যা বোঝায় তার নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটিই থাকে। ফলে কাজের সমন্বয় নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় না। সেসব নগরে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন, পরিবেশ সংরক্ষণ, নগর উন্নয়ন, সড়ক ও জনপথ, জননিরাপত্তা (পুলিশ), স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবহন ও আবাসন ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সেবার নিয়ন্ত্রণ থাকে সিটি কর্পোরেশনের হাতে; নগর সরকার ব্যবস্থার আওতায়।

একটি গবেষণার দেখা যায় যে, আমাদের দেশের প্রায় ২০ টি মন্ত্রণালয়য়ের প্রায় ৫২ টিরও বেশি সরকারী দপ্তরের কাজের সাথে সমন্বয় করে ঢাকার মত বড় বড় সিটি কর্পোরেশনকে কাজ করতে হয়। কিন্তু ডেসা, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, টেলিফোন কোম্পানি (ইদানীং কম) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ নগর সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মান নিয়ে নাগরিকদের মনে বেশ অসন্তোষ ও হতাশা রয়েছে। উন্নয়ন কাজের জন্য তাঁদের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই বললেই চলে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হল নগরীর মেয়রের প্রাশাসনিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। তাই একই রাস্তায় কয়েক মাসের মধ্যেই একার ডেসা একবার ঢাকা ওয়াসা তার পানির লাইন বা সুয়েরেজ লাইন তৈরির কাজ, সিটি কর্পোরেশনের স্ট্রম ওয়াটার ড্রেনের কাজ আরেকবার তিতাস গ্যাস রাস্তা কেটে তাদের কাজ করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ চরমে তোলে, আর বায়ু দূষণের, পরিবেষ দূষণ এমন স্তরে নিয়ে যায় যে তাতে নগরীতে বায়ু ও পানি দূষিত রোগের ব্যাপক বিস্তারে লাভ করে, সুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন।

একজন জনপ্রতিনিধি জানেন কোন এলাকার কোন কোন সমস্যা প্রকট, আর তাঁদের মধ্যে কোনটা আগে আর কোন পরে সমাধান করা দরকার। এমন কি মাঠ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাদের চেয়ে জনপ্রতিনিধির ধারণ পরিষ্কার থাকে। তারা সাধারণ মানুষকে যে সময় দেন, সরকারী কর্মচারী কর্মকর্তাগন সেই সময় সাধারণ মানুষকে দিতে পারেন না। সে কারণেই উন্নয়নে ‘বটম আপ এপ্রোচ’ নগর বা গ্রাম উন্নয়নে বেশি সফল হয় সারা দুনিয়ার উন্নয়নশীল দেশে। এসব ভেবেই ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ তার মেয়াদে নগর সরকারের দাবি তোলেন যা পরে আলোর মুখ দেখে নি।

আমাদের আশেপাশের দেশ ছাড়াও অনেক দেশেই আছে যে, তারা নগর বা স্থানীয় সরকারের সেবায় নিয়জিত সরকারী দপ্তরে কর্মীদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে নগরে ডেপুটেশন নিয়ে থাকেন। সেখানে তারা নগর অধিপতির কাছে দায়বদ্ধ থাকেন, তাঁদের এসিআর লেখেন নগর কর্তৃপক্ষ। এতে ডেপুটেশনে যাওয়া কর্মীদের সেবার বা পরিসেবার মান বাড়ে, দুর্নীতি কমে যায়, ইচ্ছায় অনিচ্ছায়।

নগরীর কোন এলাকায় কোথায় স্ট্রম ওয়াটার ড্রেন, সুয়েরেজ লাইন, বিদ্যুৎ, পানির লাইন, গ্যাসের নতুন লাইন বা বিদ্যমান লাইন সংস্কার লাগবে, কোথাকার রাস্তা কখন সংস্কার করা হবে, কীভাবে বিদ্যুৎ লাইন, কেবল লাইন কীভাবে চলবে টেলিফোনের লাইন সংস্কার ইত্যাদি তাবৎ বিষয়ে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর আর তা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নগর অধিপতির সভাপতিত্বে চূড়ান্ত করা হলে জনদুর্ভোগ যেমন কমবে তেমনি আর্থিক সাশ্রয় হবে অনেক। নগর পুলিশ কীভাবে সেবা দেবেন তাও দেখবেন নগর অধিপতি। উল্লেখিত কোন দপ্তরের কর্মীর সেবার মান খারাপ হলে তাঁকে মূল সংগঠনে ফেরত যেতে হবে। এতে ব্লেইম গেইম খেলার প্রবণতা কমে আসবে, জনসেবা উন্নত হবে ধীরে ধীরে। এটা করা গেলে ওয়ার্ড কমিশনার থেকে আরম্ভ করে মেয়র সাহেব এবং নগর সেবায় নিয়োজিত সরকারী দপ্তরগুলোর কর্মীরা জবাদিহীতার মধ্যে আসবেন।

তবে এই নগর সেবা চালু করতে সেবাদানকারী সকল সংস্থা নিরবিচ্ছিন্ন সিসিটিভির আওতায় আসবেন। এতে জনগণের হয়রানি কমবে। বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে যে হয়রানীর অভিযোগ আছে তাও কমতে থাকবে আশাতীত ভাবে। কারণ এটা মনিটর করবেন মেয়র সাহেব ও তার একটা টিম। অভিযোগের গুরুত্ব বুঝে সরাসরি মেয়র সাহেবকে করা যাবে, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এসব পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে লাগবে নগরবিদদের ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে নানা কমিটি যা মেয়র সাহেবের প্যানেলকে পরামর্শ দেবে। মেয়র সাহেবদের ক্ষমতা বাড়িয়ে পূর্ণ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় আনতে হবে কাগজে কলমে নয়ে বাস্তবেও, যাতে তাঁকে সচিবের দ্বারস্থ হতে না হয়। মেয়র ও ওয়ার্ড কমিশনারদের ভাতা বা সম্মানী, ক্ষমতা বাড়িয়ে তাঁদের উপরে কড়া নজরদারি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে মেঘা প্রকল্প বাদে নিজের পরিসেবার আয় দিয়ে নগর কর্তৃপক্ষ নগরীর সিংহভাগ উন্নয়ন সম্পন্ন করতে পারবে।

জন-নেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় নব নির্বাচিত তাঁর সুযোগ্য দুই মেয়র দিয়ে উনার পুরাতন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরুর এটাই মনে হয় মোক্ষম সময়। যা সফল হলে সারা দেশে তা ছড়িয়ে দিয়ে নগরীতে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারবে, পরে তা সকল স্তরের স্থানীয় সরকারে বাস্তবায়ন করা যাবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭