ইনসাইড হেলথ

এবার নতুন আতঙ্ক সোয়াইন ফ্লু, সাবধান হন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/02/2020


Thumbnail

বিশ্ব যেন ভাইরাসে আক্রান্তের এক রেকর্ড নিয়ে বসেছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে পুরো বিশ্ব চরম এক আতঙ্কাবস্থা পার করছে। এর মাঝে খবর এলো চীনেই বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরপর আবার আতঙ্ক শুরু হয়েছে সোয়াইন ফ্লু নিয়ে। এবার তাইওয়ানে হানা দিয়েছে সোয়াইন ফ্লু। তাই আরেকবার সাবধান হওয়ার পালা আমাদের। জেনে নেবো সোয়াইন ফ্লুয়ের আদ্যপান্ত-

২০০৯ সালের এপ্রিলে মেক্সিকোতে প্রথম সোয়াইন ফ্লুতে আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। সেখান থেকে এই ভাইরাস ৭৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। সে বছর জুন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ৩০ হাজার জনের রক্তে H1N1-এর ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল।

মার্কিন সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিস কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৯ সালে বিশ্বজুড়ে সোয়াইন ফ্লুতে অন্তত ২ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান। এই পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।

ভারতে প্রথম সোয়াইন ফ্লুর ঘটনা সামনে আসে ২০০৯ সালের ১৬ মে। দক্ষিণের শহর হায়দরাবাদে প্রথম সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। পরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তা ছড়িয়ে পড়ে। সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে ২০০৯ সালে ভারতে মারা গিয়েছিলেন মোট ৯৮১ জন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৬৩ জন।

২০১৬ সালে ভারতে সোয়াইন ফ্লু মহামারির আকার নেয়। সে বছর এ দেশে ৪২ হাজার ৫৯২টি সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্তের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। প্রাণ হারিয়েছিলেন ২ হাজার ৯৯২ জন। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ভারতে H1N1-এ আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১,৩৭,৩২৩ জন। এর মধ্যে ১০ হাজার ৬১৪ জনের মৃত্যু হয়।

২০২০ সালে তাইওয়ানে মাত্র এক সপ্তাহে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত আরও অনেকে।

কীভাবে সোয়াইন ফ্লু ছড়ায়

মানুষ, শূকর ও পাখির সংমিশ্রনে সৃষ্ট ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের এই রূপটি শূকরের মাধ্যমে মানুষকে আক্রান্ত করেছে। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জার মূল পার্থক্য হচ্ছে এটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে যা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। মনে রাখতে হবে, খাদ্য বা রক্তের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ছড়ায় না।

শ্বাসনালীর মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মানবশরীরে প্রবেশ করে, তাই সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও শ্বাসনালীর মাধ্যমেই ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি প্রভৃতির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। শুধু তাই নয়, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বস্তু যেমন রূমাল, দরজার হাতল ইত্যাদির সাহায্যেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ স্পষ্ট হওয়ার ১ দিন আগে আক্রান্ত হওয়ার ৭ বা তারচেয়ে বেশিদিন পর্যন্ত এ ভাইরাস অন্যকে আক্রান্ত করতে পারে।

সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণের লক্ষণসমূহ

সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গসমূহ অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গের মতই। সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গের মধ্যে কাশি, হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যাথা, পেশির খিঁচুনি, গলা ও শরীর ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ক্ষুধামন্দা ও আলস্য, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি অন্যতম। জ্বর ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর চেয়ে কিছুটা বেশি হতে পারে। আবার শ্বাসকষ্ট, র‌্যাশ, কাঁপুনি, বমিভাব অথবা বমি ও পাতলা পায়খানাও হতে পারে। সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এসব লক্ষণ স্থায়ী হতে পারে। শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিসহ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো দীর্ঘসময় পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সোয়াইন ফ্লু মারাত্মক আকার ধারণ করলে নিউমোনিয়া, একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যু হতে পারে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে এ রোগটিকে আলাদা করা সম্ভব।

কাদের জন্য বিপদজনক

যেসব মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষের, যাদের হাঁপানী আছে, এইডসে আক্রান্ত রোগী এবং যারা হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য সোয়াইন ফ্লু বিপদজনক। অসুস্থ, দুর্বল এবং যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে করণীয়

সোয়াইন ফ্লু থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। আবার নিজের ফ্লু হলে তা যেন অন্যকে আক্রান্ত না করে সেই ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে। সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে করনীয় কিছু কাজ যা আপনাকে সোয়াইন ফ্লু মুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে। যেমন-

হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় পরিষ্কার রুমাল, গামছা, কাপড় অথবা টিস্যু পেপার ব্যবহার করুন।

কফ ও শ্লেষ পরিষ্কার করার জন্য টিস্যু, রুমাল ব্যবহার করুন এবং ব্যবহৃত টিস্যু পেপার যত্রতত্র না ফেলে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। সবসময় সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখা বিশেষ কফ ও শ্লেষ পরিষ্কার করার পর অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন।

ব্যবহৃত রুমাল, গামছা, কাপড় ইত্যাদি ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

দরজার নব, কম্পিউটারের কী বোর্ড, মাউস প্রভৃতি নিয়মিত জীবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখুন।

মাস্ক ব্যবহার করবেন সবসময়। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকুন। আক্রান্ত হলে স্কুল, কলেজ অথবা কর্মস্থলে না গিয়ে বাড়ীতে, অন্যদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন এবং যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকুন।

নিয়মিতভাবে সাবান-পানি দিয়ে দুই হাত ভালভাবে ধুয়ে নিন। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সময় অবশ্যই অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। তারপর ভালো করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭