ইনসাইড আর্টিকেল

শুভ জন্মদিন টম অ্যান্ড জেরি, ৮০ বছরে পদার্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/02/2020


Thumbnail

একটা হতবিহ্বল আর বিধ্বস্ত বিড়াল ছুটছে তো ছুটছে, কখনো গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে গলা লম্বা হয়ে যাচ্ছে, চোখ বের হয়ে যাচ্ছে, দাঁত ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে যাচ্ছে। আর তাকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে ছোট্ট একটা ইঁদুর। এত বড় বিড়ালকে বিপদে ফেলে সে নিজেই হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। এই দুইজন আর কেউ নয়। আমাদের খুব কাছের টম আর জেরি। এদেরকে চেনে না, পৃথিবীতে এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

ওদের দুজনের গল্প খুব চেনা। আর খুব চেনা দু’টি কার্টুন চরিত্র— ‘টম অ্যান্ড জেরি’। সব চেনা হলেও চেনা নয় তাদের গড়ে ওঠার অনেক গল্প। আমেরিকা ও তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার লড়াইয়ের আবহে তাদের জন্ম। অ্যানিমেটেড এই শর্ট কালে কালে জিতেছে অস্কারও। আট থেকে আশির পছন্দের এই কার্টুন-জুটি এই সপ্তাহে ৮০ বছরে পা দিচ্ছে। আজ ওদের জন্মদিন। জন্মদিনে আরও অনেক শুভেচ্ছা আর ভালোবাসা সকল শুভানুধ্যায়ীদের।

মার্কিন প্রযোজনা সংস্থা এমজিএম স্টুডিওর অ্যানিমেশন বিভাগে কাজ করতেন বিল হান্না এবং জো বারবারা। অন্য সংস্থার পর্কি পিগ বা মিকি মাউসের জনপ্রিয়তার সঙ্গে তখন পাল্লা দিতে চাইছে তাঁদের সংস্থা। হ্যানা-বারবেরার বয়স সেই সময়ে ৩০-এর নীচে। ভাবতে বসলেন নিজেদের মতো করে। বারবারা বললেন, সাধারণ ইঁদুর-বেড়ালের কার্টুন ভাবলে কেমন হয়? তাদের লড়াই-ছুটোছুটিটাই যদি গল্প হয়? খুব আনকোরা নয় ঠিকই, তা-ও ঝুঁকিটা নিয়েই ফেললেন দুই সহকর্মী। ১৯৪০ সালে ইঁদুর-বেড়াল নিয়ে প্রথম তৈরি হল ‘পাস গেটস দ্য বুট’। তখন তাদের নাম ছিল জ্যাসপার আর জিঙ্কস।

শুরুতেই বাজিমাত। তুমুল জনপ্রিয় হয় সেটি। অ্যানিমেটেড শর্ট-এর ক্যাটাগরিতে অস্কার মনোনয়নও জুটে যায় তার। সেসময় অবশ্য অ্যানিমেটরদের কোনো কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি। কারণ প্রযোজনা সংস্থা তখনও ওই জুটিকে নিয়ে ইতস্তত করছে। এই রকম সময়ে টেক্সাস থেকে একজন প্রভাবশালী শিল্পপতির চিঠি এলো। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, সেই মজার বেড়াল-ইঁদুরকে আবার কবে দেখা যাবে? জ্যাসপার আর জিঙ্কস এর পরেই পরিচিত হয় টম আর জেরির নামে।

তবে তাদের দুষ্টুমির মধ্যে কথাবার্তা রাখার ব্যাপারে আলাদা করে কিছু ভাবেননি স্রষ্টারা। আবহে ছিল স্কট ব্র্যাডলির তৈরি মিউজিক। চার্লি চ্যাপলিনের নিঃশব্দ ছবি দেখে বড় হওয়া বারবারা বলেছিলেন, কথা ছাড়া শুধু মজা দিয়েই দর্শকের মন ভোলানো সম্ভব। টমের গলায় মানুষের মতো চিৎকারের শব্দ দিয়েছিলেন হান্নাই।

এরপরের দুই দশক হান্না আর বারবারা টম-জেরির ১০০টি শর্ট বানিয়েছিলেন। সপ্তাহের পরে সপ্তাহ লেগে যেত একটা শর্ট বানাতে। প্রযোজনার খরচ লাগত ৫০ হাজার ডলার। তাই বছরে খুব বেশি সংখ্যক শর্ট বানানো সম্ভব ছিল না। কার্টুন-বিশেষজ্ঞ জেরি বেকের কথায়, ‘ওদের কার্টুন ছোটবেলায় সবাই দেখে। আর বড় হয়েও। বড় হলে প্রশ্নটা জাগে, কীভাবে ওদের তৈরি করা হয়েছিল! অ্যানিমেশন ব্যাপারটাই এমন। এভারগ্রিন।’

এমজিএম স্টুডিয়োর প্রযোজনা থেকে ১৯৫০-এর মাঝামাঝি ফ্রেড কুয়িম্বি অবসর নেওয়ার পরে হ্যানা-বারবেরা দায়িত্ব নেন কার্টুন বিভাগের। বাজেটের টানাটানিতে ১৯৫৭ সালে সে বিভাগ বন্ধ হয়ে যায়। হ্যানারা নিজেদের প্রযোজনা সংস্থা খোলেন। তার কয়েক বছর পরে আবার এমজিএম টম-জেরিকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে স্রষ্টাদের হাত ধরে নয়, প্রাগের এক স্টুডিওকে ভার দেওয়া হয় এই কাজের। তারা তেমন জমাতে পারেনি। আরও হাত ঘুরেছে টমরা। শেষমেশ ১৯৭০ নাগাদ হান্না-বারবারা ফেরেন টম-জেরিতে। ততদিনে টম-জেরির প্রথম দিককার এপিসোড নিয়ে নানা আপত্তি উঠেছে। এই কার্টুনে ‘ম্যামি টু শুজ’ বলে যে কৃষ্ণাঙ্গ পরিচারিকাকে দেখা যায়, প্রশ্ন ওঠে তাঁর কথা বলার ধরন নিয়ে। কোমরের নীচের অংশ থেকে পা— কার্টুনে এইটুকুই দেখানো হয় এই চরিত্রের। জাতিগত বিদ্বেষ থেকে এই চরিত্রটি দেখিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে বলে দাবি ওঠে।

এশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের আদি বাসিন্দাদের ‘আপত্তিকরভাবে’ দেখাতে কার্টুনে বিভিন্ন বিদ্রুপের মুহূর্ত তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। আজকাল চেষ্টা করা হয় আপত্তিকর এপিসোডগুলিকে না দেখাতে।

সমৃদ্ধ হাতে আঁকা অ্যানিমেশন ও সূক্ষ্ম খুঁটিনাটিসহ দৃশ্যপট থাকায় সারা বিশ্বেই এই টম অ্যান্ড জেরির সর্বশ্রেষ্ঠ কার্টুন চিত্র। হলিউড ফিচার ফিল্ম ক্যাটাগরিতে সাতটি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড পায় এই ফিল্মগুলো।

আপাতদৃষ্টিতে সহিংস কিছু কাহিনীর চিত্রায়ন ও ইঙ্গিতপূর্ণ হাস্যরসাত্মক দৃশ্যপট থাকলেও বিশ্বজুড়ে এখনও দারুণ জনপ্রিয় টম অ্যান্ড জেরি। জাপান থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত পৃথিবীর সবখানেই শিশুদের টেলিভিশনে এই কার্টুন দেখতে পাওয়া যায়। চীনে টম অ্যান্ড জেরির একটি নতুন মোবাইল ফোন গেম ১০ কোটির বেশি মানুষ ব্যবহার করে।

প্রথম তৈরি হওয়ার পর থেকে আশি বছরে বহুল পরিচিত ইঁদুর ও বিড়ালের খুনসুটির কাহিনী নিয়ে শিশুদের কাছে জনপ্রিয় কার্টুনের পাশাপাশি গীতিনাট্যভিত্তিক একটি চলচ্চিত্রও তৈরি করা হয়। ওই ছবিতে চরিত্রগুলো গান গাইতো এবং কথাও বলতো।

বিল হান্না মারা যান ২০০১ সালে এবং জো বারবেরার মৃত্যু হয় ২০০৬ সালে। মারা যাওয়ার এক বছর আগে জো বারবেরা শেষবারের মত টম অ্যান্ড জেরির একটি পর্ব তৈরি করেন, যেটি ছিল সঙ্গী বিল হ্যান্নাকে ছাড়া তার তৈরি করা টম অ্যান্ড জেরির প্রথম পর্ব।

আমরা জানি, টম এন্ড জেরি বেচে থাকবে যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। এই কার্টুনের জন্ম আছে মানে শুরু আছে, কিন্তু এর কোনো শেষ নেই।

 

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭