কালার ইনসাইড

শোবিজের ‘গিভ অ্যান্ড টেক’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/07/2017


Thumbnail

পড়াশুনায় ভালো, নাচ গানে তার চেয়েও ভালো। চেহারা সুরতও তাক লাগানো। নাম খ্যাতি রয়েছে স্কুল কলেজ জুড়ে। সবার উৎসাহ তুমি মিডিয়ায় ভালো করবে। মেয়েও স্বপ্ন দেখতে শুরু করে নায়িকা হওয়ার। একদিন তাঁর খ্যাতি হবে দেশ জুড়ে। সারা দেশের মানুষ তাকে চিনবে। মেয়ের স্বপ্নের সাথে মায়েরও একাত্নতা রয়েছে। বাবা বাধ সাধলেন। না , ও মাধ্যম নানা কারনে কলুষিত। ভদ্র সমাজের হয়ে ওখানে যেতে পারবে না। নানা যুক্তি দেখালেন। সেই যুক্তির তোয়াক্কা কে করে। মেয়ের মনে সুপ্ত বাসনা লুকিয়ে আছে। তা তো হারিয়ে যাবার নয়। মাকে নিয়েই যাত্রা শুরু করলেন। মরিচিকার খোঁজে। এই যাত্রার শুরুটা কীভাবে হতে পারে? যোগাযোগ হলো একজন ফটোগ্রাফারের সঙ্গে। প্রথমেই ধাক্কা। এমন পোষাকে তো মিডিয়ায় থাকা যাবে না! কেমন হবে পোষাক ? একটু খোলামেলা তাক লাগানো। প্রথমে রাজি না হলেও স্বপ্ন তো বিসর্জন দেওয়া যাবে না। কিছুটা ছাড় দিতেই হলো। ছবি হলো নানা ঢংয়ে। এরপর সেই ছবি দিয়ে কি করতে হবে? চলতে চলতে মিডিয়ায় কিছু বন্ধু জুটে গেল। তাদের কাছ থেকে কয়েক জায়গার সন্ধান মিললো। ছবি দেওয়া হলো সব হাউসে। পেয়েও গেলেন কোনো হাউজ থেকে ডাক। ভাল মন্দ বিচারের আগে কাজটা শুরু করতে হবে। সেই শুরু আর শুরু হয় না। মাঝে চলে ঘোরাঘোরি। ক্লাইন্ট এর সঙ্গে এই রেস্টুরেন্ট খাও, ওখানে যাও। এটা বলো, ওটা করো। ফটোগ্রাফারের ইচ্ছেমতো ছবি তোলো। হরদম চলছে স্বপ্ন পূরণ। ব্যর্থতা ক্রমশই ঢেকে ফেলছে। ফেরার কোনো পথ নেই। আশ-পাশ মানুষ জেনে ফেলছে মেয়ে মিডিয়ায় কাজ করার জন্য ছুটছে। ব্যর্থ হয়ে তো ঘরে ফেরা যায় না। টানা পোড়ানোর মাঝেই ডাক আসলো অন্য আর একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাছ থেকে। এ যাত্রায় তার কপাল সুপ্রসন্ন। কাজটি তাড়াতাড়ি হয়ে গেল। প্রচারের পর নাম-ডাক হলো। কিন্তু বিপত্তী হলো অন্য জায়গায়। শুরুর সেই অধ্যায় ছিড়ে ফেলা গেল না। তাদের কাছে রয়ে গেছে আপত্তিকর কিছু ডকুমেন্ট। তারপর শুরু ব্ল্যাকমেইল। সে থেকে পরিত্রান পেতে তার ভোগান্তির শেষ নেই। এই গল্প কাল্পনিক নয়। বাংলাদেশের মিডিয়ার একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রীর।

তাঁর সঙ্গে পরিপূরক গল্প অনেকেরই রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁরা। স্ট্রাগল পিরিয়ডে যা হবার হয়েছে। এই ভোগান্তি সবার কপালে না আসুক। সেটাই প্রত্যাশা । কিন্তু এসে যায়। না চাইলেও সহজ কথা ‘গিভ অ্যান্ড টেক’। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে। স্বপ্ন বিসর্জন নয়। স্বপ্ন পূরনের জন্য যেথায় যেতে হয় যাবো। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারও মেনে নেয় এই বিসর্জন। ভাবে এটাই তো নিয়ম হয়ে আছে। ভুরি ভুরি উদাহরন আছে। মেয়েকে মডেল বানানোর জন্য মা এই হাউজ ওই হাউজ ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার কাছে প্রস্তাব আসছে। সেও এই ছাড় দিতে রাজি।

ওই গল্পের সঙ্গে না মিললেও নায়িকা হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন ঢাকার মেয়ে পূর্ণিমা (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, মূলত একটি নাচের স্কুলে নাচ শেখার জন্য যেতাম। জামিল নামে একজন কোরিওগ্রাফার আমাকে মডেল বানানোর প্রস্তাব দেন। এরপর আমি টাকা জমিয়ে এক মডেল ফটোগ্রাফারের কাছে ১২ হাজার টাকা দিয়ে ফটোসেশন করি। তারপরও সেই ফ্যাশন কোরিওগ্রাফার আমাকে ভালো কোনো কাজে ডাকতেন না। ডিজে পার্টি, মহানগর নাট্যমঞ্চের শোতে ডাক দিতেন। সেখানে নাচের পাশাপাশি বিভিন্ন র‌্যাম্প শোতে কাজ করে ১২০০-১৫০০ টাকা পেতাম। একটা সময় নায়িকা হওয়ার জন্য মন টানতো। কারণ আমাদের সঙ্গে অনেক নামিদামি মডেলরাও নাচ শিখতেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে কাজও করেছেন। পূর্ণিমার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন। পরিবারে মাও চাইতেন মেয়ে নায়িকা হোক। অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ে পূর্ণিমা একদিন বনানীর এক ডিজে পার্টিতে যান। পূর্ণিমা বলেন, ২০০৭ সালের কথা। তখন ফ্যাশন শো’র পাশাপাশি ডিজে শো প্রচুর ছিল। আর এসব পার্টিতে যাবার জন্য বাসায় মিথ্যা কথা বলে বের হতাম। সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষরাও ডিজে অনুষ্ঠানগুলোতে আসতেন। বনানীতে সেরকম একটি অনুষ্ঠানে দেখা হলো একজন চলচ্চিত্র পরিচালকের সঙ্গে। তিনি আমাকে নায়িকা বানাবেন বলে ওয়াদা দিলেন। বাসায় যাবার জন্য বার বার অনুরোধ করলেন। এক পর্যায়ে আমি রাজি হয়ে গেলাম। কিন্তু ওনার বাসায় গিয়ে দেখি বাসায় কেউ নেই। তিনি একা থাকেন। তিনি বললেন, আজ এখানে থাকো। আগামীকাল ছবির প্রযোজক তোমার সঙ্গে এসে কথা বলবেন। কিন্তু আমি ভয়ে পালিয়ে এসেছি। কারণ বাসার মধ্যে মাদকদ্রব্যসহ অবৈধ অস্ত্রও আমি দেখেছি। অবশ্য চলচ্চিত্রে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। ১০টির মতো ছবিতে কাজও করেছি। নাটকেও অভিনয় করেছি। তবে প্রধান চরিত্রে আমাকে কেউই নেয়নি। বারবার পরিচালক-প্রযোজকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথার বরখেলাপ করেছেন। এরমাঝে আমার চোখের সামনে অনেকে নায়িকা হয়েছেন। আমাকেও অনেক নায়ক ভালোবাসার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমিও নিজের অজান্তে তাদের মিষ্টি কথায় গলে গেছি। কিন্তু আমি আজও চলচ্চিত্রের এক্সট্রা শিল্পী হিসেবেই পরিচিত। চলচ্চিত্রে থেকে অনেক কিছু হারিয়েছি। যেটুকু পেয়েছি সেটা আর বলার মতো না। তবে দোষটা আমারই। পরিবারের কথা না শুনে এফডিসিতে সারাদিন পড়ে থাকতাম। শোবিজে মেয়েরা কাজ করা মানে তাদের সমাজে ভিন্ন চোখে দেখা হয়। তাও আবার চলচ্চিত্রের নায়িকা। টিভি বা বড়পর্দায় তারকাদের দেখতে দেখতে নিজের অজান্তেই নায়িকা হওয়ার বাসনা মনে জন্ম নিতে থাকে অনেকের। অনেক বন্ধু, বান্ধবীরাও বলতে শুরু করে তোর চেহারা বলিউডের অমুক নায়িকার মতো। আত্মীয়স্বজনরাও বলা শুরু করে শোবিজে বুঝে না বুঝে অনেকে পা দেন। গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডে কাজ করে কেউ নাম কামান আর কেউ ভবিষ্যৎ জীবনটা অন্ধকারে ঠেলে দেন।

এমনটা কি সবক্ষেত্রে হচ্ছে? মোটেও না। কিছু নামহীন পরিচালক আর প্রযোজক সংস্কৃতিকে কলুষিত করছে। আর নায়িকা হওয়ার দৌড়ে ছুটছে স্বপ্নাকাঙ্খী কিছু তরুণী। আর এমনই নিয়ম হয়ে গেছে। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে। কেন কিছু দিতে হবে ? মিডিয়ায় কাজ করার জন্য চাই দক্ষতা। কিছু অসাধু, যারা ব্যাক্তিস্বার্থে মিডিয়াকে অাজ দূষিত করছে। তাদের প্রত্যাখ্যান করুন।


বাংলা ইনসাইডার/ এমআরএইচ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭