ইনসাইড বাংলাদেশ

অর্থ-সংকটে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/07/2017


Thumbnail

আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০১৮ সালের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে হিসেবে ২০০৭ সালের পর থেকে টানা এক যুগ ক্ষমতার (সরকার বা বিরোধী দলে) বাইরে বিএনপি। এরমধ্যে ক্রমেই বাড়ছে দেশের অন্যতম এই বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটির অর্থসঙ্কট।

এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়, দলের ব্যবসায়ী নেতারা বা শুভাকাঙ্খি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অনুদান দেওয়া প্রায় বন্ধই করে রেখেছে। অথচ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই অনুদান বাড়ার কথা। কারণ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বা আন্দোলন চাঙ্গা করতে হবে, যার ফলে খরচ বাড়তেই থাকবে।

অনুদান কমিয়ে দেওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, দলটির প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ বা সরকার তাদের নজরে রাখছে। অনুদান অব্যাহত রাখলে মামলা-হামলায় জড়িয়ে দিতে পারে তাদের। তাই তারা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছেন।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, এটি কোনো কারণ নয়, বরং অজুহাত। আর এই অজুহাত কাজে লাগিয়ে তারা দলে অনুদান দেয়া বন্ধ রাখছে। অথচ দল ক্ষমতায় থাকার সময় তারা নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে ব্যবসা চাঙ্গা রেখেছে। বর্তমানে দল ক্ষমতায় আসবে এমন নিশ্চয়তা দেখতে না পাওয়ায় আর অনুদানের নামে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না। পাঁচ বছর বিরোধী দলে থাকার অভিজ্ঞতা থাকলেও বর্তমানে প্রায় একযুগ ক্ষমতার বাহিরে থাকায় এই অনিশ্চয়তা বেড়েই চলছে।

এক কথায় বিশ্লেষকদের মতে, কোনো অঙ্গীকার থেকে নয়, শুধুই ব্যবসায়ীক কারণে বিনিয়োগের চিন্তা থাকায় ক্রমবর্ধমান অনীহা এসব বিনিয়োগকারীদের। দল ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা থাকলেই প্রত্যাশা বা দর কষাকষি হতো যে, কে মন্ত্রী হবেন, কে কোন মন্ত্রণালয় পাবেন বা কে কোন ঠিকাদারি পাবেন? সে বিবেচনায় তারা বিনিয়োগও করতেন।

তাদের মতে, সরকারের নজরদারিকে অজুহাত হিসেবে দেখানো যেতেই পারে। তবে আন্তরিকতা থাকলেও দলে অনুদান দেয়া যায়, যে কোনও বাধা এড়িয়েই তা দেয়া যায়।
জানা গেছে, বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও মোসাদ্দেক আলী ফালুসহ কয়েক জন ছাড়া অন্যরা এখন আর অনুদান দিচ্ছেন না বললেই চলে। আগে অনুদান দিলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এড়িয়ে চলা নেতারা হলেন, বরকতউল্লাহ বুলু, জয়নাল আবদীন ফারুক, মির্জা আব্বাস ও এহসানুল হক মিলন।

বিএনপির মাসিক স্বাভাবিক খরচ প্রতিমাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা। এরমধ্যে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের অফিস ও স্টাফদের মাসিক খরচ প্রায় ৬ লাখ টাকা। আর নয়াপল্টন কার্যালয়ের স্টাফ ও অফিস খরচ প্রায় ২ লাখ টাকা। এ ছাড়া সভা-সমাবেশ, যাতায়াত, নেতা-কর্মীদের মামলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বেশ কিছু টাকা খরচ হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতারা নিয়মিত মাসিক চাঁদা দিলেই কারও অনুদানের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। কিন্তু অঙ্গিকারের অভাবে তা হচ্ছে না। উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন, গত বছর মার্চে দলের জাতীয় কাউন্সিল পর্যন্ত সব কেন্দ্রীয় নেতারই চাঁদা পরিশোধিত। এরপর থেকেই অনেকেই চাঁদা নিয়মিত দিচ্ছেন না। কাউন্সিলের আগেও তারা নিয়মিত চাঁদা দিতেন না। কাউন্সিলকে সামনে রেখে দিয়েছেন। কাউন্সিল হয়ে যাওয়ার পর পদ-পদবী পাওয়া বা না পাওয়ার হিসেব শেষ। অর্থ্যাৎ চাাঁদার জন্য কারও পদ যাবে না, আবার নিয়মিত চাাঁদা দিলেও কারও পদ-পদবী পাওয়ার নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে না। অর্থ্যাৎ দলের প্রতি অঙ্গিকারের অভাব থাকায় এই অর্থসঙ্কট, বাকিটা অজুহাত।

তারা বলছেন, দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন করে জেলা, মহানগর, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির নেতাদের মাসিক চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইউনিয়নে ৫০ টাকা, মহানগরীর ওয়ার্ডে ১০০ টাকা, উপজেলা-থানা-পৌরসভায় ২০০ টাকা, মহানগরে ৪০০ টাকা ও জেলায় ৫০০ টাকা। এসব কমিটির ইউনিট ভেদে সহসভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক পদে ৪০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ২০০ টাকা ও ৩০০ টাকা। সম্পাদকদের ক্ষেত্রে ৩০ টাকা, ৪০ টাকা, ৫০ টাকা, ১৫০ টাকা ও ২০০ টাকা। সহ-সম্পাদকদের ক্ষেত্রে ২০ টাকা, ৩০ টাকা, ৪০ টাকা ও ১০০ টাকা। সদস্যদের ধরা হয়েছে ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৩০ টাকা, ৪০ টাকা ও ৫০ টাকা। তবে কেউ এর চেয়ে বেশি পরিমাণ চাঁদা দিতে চাইলে দিতে পারবে। কিন্তু সামর্থ্যরে অভাব বিবেচনা করে চাঁদা মওকুফ কিংবা পরিমাণ হ্রাস করতে পারবে। তবে জাতীয় নির্বাহী কমিটির চাঁদার পরিমাণ আগের পরিমাণই রয়েছে। চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১ হাজার টাকা। সমপরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্যদেরও। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টা ৫০০, যুগ্ম-মহাসচিব, সম্পাদক ও সহসম্পাদক ৩০০ এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদের নেতা ছাড়াও দল থেকে যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তারাও পদাধিকার বলে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাদেরও মাসিক চাঁদা ১ হাজার টাকা নির্ধারিত রয়েছে। অবশ্য নির্বাচন বর্জন করায় দশম জাতীয় সংসদে বিএনপির কোনো এমপি নেই।

জানা গেছে, পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনাসহ নানা মামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জর্জরিত থাকলেও অর্থের অভাবে ঠিকঠাক আইনী সহায়তা দিতে পারছে না বিএনপি। এক্ষেত্রে দলীয় আইনজীবী নেতারাও দায়সারা বলে পর্যবেক্ষণ বিশ্লেষকদের। ভালো ফি পাওয়া মামলার মতো করে তারা এই মামলাগুলোও দেখতেন যদি তেমন অঙ্গিকার থাকতো।


বাংলা ইনসাইডার/এমএএম




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭