ইনসাইড পলিটিক্স

রাজনীতিবিদদের প্রেম-পরিণয়-বিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/02/2020


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সুপরিচিত অনেকেই প্রেম করে বিয়ে করেছেন। রাজনীতির বাইরে তারা সফল প্রেমিকও। রাজনীতির বাইরে আজ ভালোবাসা দিবসে জানানো হলো তাদের প্রেমের খবর:  

তোফায়েল আহমেদও প্রেম করে বিয়ে করেছেন

তোফায়েল আহমেদও প্রেম করে বিয়ে করেছেন। ১৯৬৪ সালে ভোলা শহরের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের আলহাজ মফিজুল হক তালুকদারের জ্যেষ্ঠ কন্যা আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে তিনি পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তারা এক কন্যাসন্তানের জনক-জননী। তাদের কন্যা তাসলিমা আহমেদ জামান মুন্নী চিকিৎসক, জামাতা জনাব তৌহিদুজ্জামান তুহিন খ্যাতনামা কার্ডিওলজিস্ট, বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালে কর্মরত।

স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে তোফায়েল আহমেদের পরিবারে ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। নিজের বাড়িতে থাকতে পারেননি। তোফায়েল আহমেদ যখন কারাগারে, স্ত্রীকে কেউ বাড়ি ভাড়া দেয়নি।  কিন্তু সেসব দু:সময়ে স্ত্রীকে পেয়েছেন প্রকৃত লড়াকু নারীর চরিত্রে। ভেঙ্গে পড়েননি, দুর্বল করেননি স্বামীকে। সন্তানকে নিয়ে কষ্টেশিষ্টে দিন কাটালেও স্বামীর রাজনীতিতে বাধা দেননি।

৭-৮ বছর একসাথে চলার পর শিল্পী শেরিফাকে বিয়ে করেন কাদের


১৯৭৬ সালে জিএম কাদের বিয়ে করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের শিল্পী শেরিফাকে। পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে শেরিফার সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। এরপর প্রণয়। ৭-৮ বছর একসাথে চলার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন দুজনে। বড় ভাই এইচ এম এরশাদ তখন তার পাশে এসে দাঁড়ান। বিয়ের পর ছোট ভাই ও তার স্ত্রীকে নিজের বাসায় তোলেন। তখন তিনি যমুনা অয়েলে চাকরি করেন। প্রমোশন পেয়ে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের হন জিএম (জেনারেল ম্যানেজার)। যা তার নামের প্রথম অংশের সঙ্গে বেশ শোভা পেতো। তারপর প্লানিং ও অপারেশন ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। ততদিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু উলট-পালট হয়ে যায়। জিএম কাদেরও আস্তে আস্তে রাজনীতিতে জড়ান।

পরশের অনেক আগেই রাজনীতিতে সক্রিয় যুথী

শেখ পরিবারের উত্তরাধিকারী পরশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে কলরাডো স্টেট ইউনির্ভাসিটি থেকে স্নাতকোত্তর করে দীর্ঘদিন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় সংস্কৃতিমনা পরশ গান বাজনার প্রতিও বেশ সৌখিন। তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথীকে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। বর্তমানে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল’অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুলা) এর সভাপতির দায়িত্বে আছেন। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। পরশ রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন বেশিদিন না হলেও তার স্ত্রী অনেকদিন থেকেই রাজনীতিতে। রাজনীতি শুরু করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময়। শুরুটা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আইন বিভাগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে। যদিও কার্যক্রম পরিচালনা করা তখন প্রায় অসম্ভব ছিল। কেননা সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের তাণ্ডব চলত। পড়াশুনা শেষে সুপ্রিম কোর্টে এসে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন। এক-এগারোর রাজনৈতিক সংকটকালে বারের নেতৃত্বে ছিলেন। অনেক চাপ মোকাবেলা করতে হয়েছে, এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মিথ্যা ফৌজদারি মামলা হয়। কারণ এক-এগারোর সেই কলঙ্কিত সময়ে মার্শাল ল’কে চ্যালেঞ্জ করে যুথিসহ সুপ্রিম কোর্টের তিন ট্রেজারার মামলা করেছিলেন। এছাড়া রাজপথের আন্দোলনে তো ছিলেনই। ।

বিদেশিনী নওফেলের প্রেমে চট্টগ্রামে


মহিবুল চৌধুরী নওফেলের বিয়েটা বেশ আলোচিত ছিল। কারণ ঐতিহ্যবাহী পরিবারের এ সন্তান বিদেশিনী বিয়ে করেছিলেন। বিদেশিনী পুত্রবধূকে করে ঘরে তুলেছেন চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। আর এ বিয়েতে বরপক্ষ সাক্ষী হয়েছেন চট্টগ্রামের মেয়র এম মন্জুর আলম। বিয়ের আগে পবিত্র কলমা পড়ে মুসলমান হন নওফেলের দীর্ঘকালীন প্রেমিকা এমা, ধর্মান্তরের পর থেকে শ্বশুর মহিউদ্দিন যার নাম দিলেন সিতারা। আক্দ এর পর থেকে সিতারা মহিবুল হাসান চৌধুরী নামেই পরিচিতি পেয়েছেন এমা।

লন্ডনের `ইউনিভার্সিটি অব লেস্টার` এ পড়তে  গিয়ে বিয়ের আট বছর আগে নওফেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয় এমার। দীর্ঘ সম্পর্কের সূত্র ধরে ব্যারিস্টার নওফেল শেষ পর্যন্ত সামাজিক-ধর্মীয় রীতি মেনে বন্ধনে আবদ্ধ হন ব্যারিস্টার সিতারার সঙ্গে। লন্ডনে বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। বিয়ের আগে তিন দিন নওফেলের ভগি্নপতি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীর খুলশীর বাসায় ছিলেন এই বিদেশিনী। হাতে মেহেদির রঙ, পরনে সেলোয়ার-ওড়না নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে প্রবেশ করেন এমা। ঘরে ঢুকতেই বাঙালি রেওয়াজে শ্বশুর-শাশুড়ির পদধূলি নেন তিনি। অতঃপর বাড়ির ছাদে জোহরের নামাজ শেষে কলমা পড়ে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর পুত্রবধূ হওয়া সিতারাকে নগদ দেনমোহরের পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেন মহিউদ্দিন ও তার স্ত্রী। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোয়া চেয়েছেন। তবে নওফেল বিয়ে উপলক্ষে ধুমধাম কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করেননি। বিয়ে উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী মেজবান আয়োজন করছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। নওফেল- সিতারা এখন দুই সন্তানের জনক-জননী।

পার্থ- সায়রাও প্রেম করে বিয়ে করেছেন

পার্থ বিয়ে করেছেন ২০০০ সালের মার্চে। পূর্ব আত্মীয়তার সূত্রধরেই বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ হেলালের মেয়ে শেখ সায়রা রহমানকে বিয়ে করেন তিনি। এই দম্পতির তিন সন্তান। পার্থ নানা সময়ে বলেছেন, তাদের প্রেম ছিল। তবে ঠিক কতদিন প্রেম ছিল সে সম্পর্কে জানা যায়নি।

অসীম–অপুর সম্পর্কের নেপথ্যে ওবায়দুল কাদের


আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য (নেত্রকোনা-৩) অসীম কুমার উকিল তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের সঙ্গে সংসার করছেন ২৭ বছর ধরে। ছাত্রলীগের রাজনীতি করা অবস্থায় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন। বড় ছেলে শায়ক উকিল যুক্তরাষ্ট্রে আর ছোটছেলে শুদ্ধ উকিল কানাডায় পড়ালেখা করছেন।

রাজপথে মিটিং-মিছিল করতে গিয়ে অপুর সঙ্গে অসীমের সঙ্গে পরিচয়। ১৯৮৯-১৯৯৩ কমিটিতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অসীম। তখন অপু বদরুন্নেসা কলেজ শাখার সভাপতি।  সম্পর্ক শুরুটা তখনই। অনার্স প্রথম বর্ষে পড়া অবস্থায় একদিন ওবায়দুল কাদের বলেন- আমি তোমার বিয়ের পাত্র ঠিক করে ফেলেছি। হিন্দু মেয়েরা এমনিতে রাজনীতিতে আসেই না, আসলেও বেশিরভাগই বিয়ের পরে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়। কিন্তু আমি চাই তুমি রাজনীতিতে থাকো। সেজন্য একজন রাজনীতিবিদ ছেলে ঠিক করেছি।’

ওবায়দুল কাদের একইরকম কথা অসীমকেও বলেছিলেন। ‘আমি তোমার জন্য পাত্রী ঠিক করে রেখেছি। অনেক সময় স্ত্রীরা রাজনীতি করতে দিতে চায় না। তাই আমি এই রাজনীতিবিদ মেয়েটিকে ঠিক করেছি তোমার জন্য।’ বলেছিলেন কাদের। আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক এই জুটির বিয়ে নিয়ে প্রথম অপুর বাবা-মামার সঙ্গে কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের ও আব্দুর রাজ্জাকই দুই পরিবারে সম্মতি নেন।

অপু জানিয়েছেন, ‘দুইজনেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে যে কোনও অনুষ্ঠানে একসঙ্গে যেতে পারি। এভাবে রাজনীতির পাশাপাশি একে অপরকেও সময় দেওয়াও হয়ে যায়। দুই ভিন্ন পেশায় থাকলে হয়তো এই সুবিধাটা পাওয়া কঠিন হতো।’

তন্ময়ের স্ত্রী শিক্ষিকা



সুদর্শন, বিনয়ী, তেজোদীপ্ত ও তারুণ্যের প্রতীক শেখ সারহান নাসের তন্ময় শেখ পারিবারের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য। বঙ্গবন্ধু পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের মধ্যে রাজনীতিতে আসা এ তরুণ বাগেরহাট-২ আসন থেকে একাদশ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তন্ময় লন্ডন থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে ২০১৫ সালে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম শেখ ইফরাহ তন্ময়। তন্ময়ের স্ত্রী একজন শিক্ষক। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়।

রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই সাকি-তাসলিমার পরিবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্র ফেড়ারেশনের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন জোনায়েদ সাকি ও তার স্ত্রী তাসলিমা আক্তার। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ককারী সাকি আর বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা বিয়ে করেন ২০০০ সালে। তাদের কোনও সন্তান নেই। রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই তাদের কাছে পরিবারের মত। এখনো এই জুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিতই আড্ডা দেন।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭