নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 17/02/2020
তিনি ছিলেন একজন কালসচেতন ও ইতিহাসসচেতন কবি। আধুনিক কাব্যকলার বিচিত্র ‘ইজম’ প্রয়োগ ও শব্দ নিরীক্ষার ক্ষেত্রে ও তার অনন্যতা বিষ্ময়কর। বিশেষত কবিতার উপমা প্রয়োগে জীবননান্দের নৈপুন্য তুলনাহীন। কবিতাকে তিনি মুক্ত আঙ্গিকে উত্তীর্ণ করে গদ্যের স্পন্দনযুক্ত করেন, যা পরবর্তী কবিদের প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছে। জীবনবোধকে নাড়া দিয়েছে। তিনি জীবনানন্দ দাশ, যিনি হাজার বছর ধরে পথ হেঁটেছেন পৃথিবীর পথে, জেনেছেন পুরোবিশ্বকে, ভালোবাসেন পুরোবিশ্বকে।
কবি জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। আজ তার জন্মদিন, জন্মদিনে অশেষ ভালোবাসা।
তার পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন স্কুল শিক্ষক ও সমাজ সেবক । তিনি ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। মাতা কুসুম কুমারী ছিল একজন বিখ্যাত কবি। জীবনানন্দ দাশের বাল্যশিক্ষার সূত্রপাত হয় মায়ের কাছেই। তারপর তিনি বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলে ভর্তি হন। ১৯১৫ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন জীবনানন্দ দাশ। ১৯১৭ সালে ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএ প্রথম বিভাগে এবং ১৯১৯ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। ১৯২১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন। ১৯২২ সালে কলকাতা সিটি কলেজে ইংরেজি ভাষা সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। জীবনানন্দ দাস ১৯৩৫ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের কিছু আগে তিনি স্বপরিবারে কলকাতায় চলে যান।
জীবনান্দকে ছাড়া প্রকৃতি অধরা, গ্রামের নারী অধরা, নারীর চালধোয়া হাত অধরা। সে যে কতটা গভীর, কতটা শ্বাশত তা অনুভব করে বাঙালি একমাত্র জীবনানন্দের কবিতায়। নাটোরের বনলতা সেনকে তিনি চিনিয়ে দিয়ে গেছেন আমাদের, সেই শ্বাশত বনলতা সেন।
‘আমি কবি, সেই কবি-
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি
ঝরাপালকের ছবি’
তার কবিতা বাংলার রূপ, প্রকৃতি, মানুষের জীবনধারা, মাটি, তাদের কর্ম, দুঃখ-কষ্ট, বৃটিশ শাসনবিরোধী, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা উঠে এসেছে। কবিতা নির্মিতিতে ভিন্ন আঙ্গিকে, ভাষাগতভাবে পূরাণকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন জীবনানন্দ। রবীন্দ্রোত্তর কবিতায় তার মতো ভিন্নভাবে সৃষ্টিশীলতা আর কারও মধ্যে কাজ করেনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবি ততটা জনপ্রিয়তা না পেলেও মৃত্যুর পর তার সৃষ্টিশীলতাই তাকে শ্রেষ্ঠ কবির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে।
এক জীবনের ভঙ্গুর প্রেম, দেখা-না-দেখা অসফল মোহগ্রস্থ সম্পর্ক জড়ো করলে জীবনানন্দের প্রেমের ভুবনটা ছিল মূলত শুষ্ক। ব্যক্তিগত জীবনে যেসব প্রেম আরাধ্য ছিল সেগুলো অধরাই থেকে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতে বা প্রেমের ফলাফলে লাভালাভ গুনতে গিয়ে দেখেন সকলই শূন্য! স্ত্রীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিল তিক্ত।
অসফল হলেও তাঁর প্রেমের সম্পর্কগুলি নিয়ে লিখতে গেলে যে অবয়বের দেখা মেলে সেখানে ধূসরতা, রয়েছে একটি মস্তবড় গ্রে এরিয়া। অনেকটা আবছায়া আর অনুমান নির্ভর তথ্য হাতড়েই অগ্রসর হতে হয়।
এক বিকেলে হাঁটতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি জীবনানন্দ। শহরের ট্রামলাইনে তাঁর পথ চলা থেমে গিয়েছিল। কিন্তু যে ট্রাম তাঁর আজীবনের পথ চলা থামিয়ে দিয়েছিল, সেই ট্রাম পরে নিজেই এক অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যায়! তার আর কোনও অস্তিত্বই নেই। শুধু থেকে গিয়েছে অফুরান শব্দস্রোত। তিনি আর ফিরে আসেননি তার সেই ধানসিড়িটির তীরে। সব পাখি ঘরে আসে, সব নদী, আসেন না জীবনানন্দ!
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭