ইনসাইড আর্টিকেল

৪২তম পর্ব; উর্দু কখনোই শেখেননি বঙ্গবন্ধু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/02/2020


Thumbnail

আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সরকার ২০২০ এর ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ এর ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে। ১০ জানুয়ারি থেকে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। ১০ জানুয়ারি হলো জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এই মহামানবের জীবন, বেড়ে ওঠা, রাজনীতি এবং বাঙালির জাতির পিতা হয়ে ওঠার যে গল্প তা তিনিই তার বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতি, অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং ডায়রিতে লিখে গেছেন। সেখান থেকে সংগ্রহ করে মুজিববর্ষে বাংলা ইনসাইডারের এই বিনম্র নিবেদন:

মে মাসে আমি করাচি পৌছালাম। আমাকে করাচি আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুল হক ওসমানী ও জেনারেল সেক্রেটারি শেখ মঞ্জুরুল হক দলবল নিয়ে অভ্যর্থনা করল। আমি ওসমানী সাহেবের বাড়িতে উঠলাম। আওয়ামী লীগ কর্মীদের এক সভা ডাকা হয়েছিল। সেখানে আমাকে ইংরেজিতেই বক্তৃতা করতে হল। উর্দু বক্তৃতা আমি করতে পারতাম না, তাঁরাও বাংলা বুঝতেন না।আমি পৌছেই খাজা সাহেবের কাছে একটা চিঠি পাঠালাম, তাঁর সাথে দেখা করার অনুমতি চেয়ে। তিনি আমার চিঠির উত্তর দিলেন এবং সময় ঠিক করে দিলেন দেখা করার অনুমতি দিয়ে।

আমানুল্লাহ নামে এক বাঙালি ছাত্র করাচিতে লেখাপড়া করত, সে আমার সেক্রেটারি হিসাবে সকল কাজকর্ম করে দিত। সর্বক্ষণ আমার সাথেই থাকত। সে করাচি আওয়ামী লীগের সভ্যও ছিল। সমস্ত কাজ করতে পারত, কোনো বিশ্রামের প্রয়োজন তার ছিল না বলে মনে হত। করাচির কফি হাউসই ছিল করাচির রাজনৈতিক কর্মীদের প্রধান আড্ডাখানা। সেখানেও সে আসর গরম করে রাখত এবং একাই লড়ত বাংলাদের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য। জনাব ওসমানী ও মঞ্জুর ঠিক করল আমাকে এক প্রেস কনফারেন্স করে পূর্ব পাকিস্তানে কি ঘটেছিল এবং কি ঘটছে তা বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করতে হবে এখানে।

কারণ, পশ্চিম পাকিস্তানে একতরফা প্রপাগান্ডা হয়েছে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সম্বন্ধে।আমি যথাসময়ে প্রধানমন্ত্রী খাজা সাহেবের সাথে দেখা করতে তাঁর অফিসে হাজির হলাম। প্রধানমন্ত্রীর এসিস্ট্যাট সেক্রেটারি মিস্টার সাজেদ আলী আমাকে অভ্যর্থনা করলেন। তাঁকে আমি পূর্ব থেকে জানতাম, তিনি কলকাতার বাসিন্দা। পূর্বে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রীর পিএ ছিলেন। আমাকে নিয়ে বসলেন তাঁর কামরায়। আমার জন্য বিশ মিনিট সময় ধার্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আমাকে খাজা সাহেব তাঁর কামরায় নিজে এগিয়ে এসে নিয়ে বসালেন। যথেষ্ট ভদ্রতা করলেন, আমার শরীর কেমন? আমি কেমন আছি, কতদিন থাকব-এইসব জিজ্ঞাসা করলেন। তিনিও জানতেন, ব্যাক্তিগতভাবে তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করি। আমি যে ভাল কর্মী সে কথা তিনি নিজেই স্বীকার করতেন এবং আমকে স্নেহও করতেন। আমি তাঁকে অনুরোধ করলাম, “মওলানা ভাসানী, শামসুল হক, আবুল হাশিম, মওলানা তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, খান সাহেব ওসমান আলীহস সমস্ত কর্মীকে মুক্তি দিতে। আরও বললাম, জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি বসাতে, কেন গুলি করে ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছিল?”

তিনি বললেন, “এটা প্রাদেশিক সরকারের হাতে, আমি কি করতে পারি?”আমি বললাম, “আপনি মুসলিম লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, আর পূর্ব বাংলায়ও মুসলিম লীগ সরকার, আপনি তাদের নিশ্চয়ই বলতে পারেন। আপনি তো চান না যে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক, আর আমরাও তা চাই না। আমি করাচি পর্যন্ত এসেছি আপনার সাথে দেখা করতে, এজন্য যে প্রাদেশিক সরকারের কাছে দাবি করে কিছুই হবে না।তারা যে অন্যায় করেছে সেই অন্যায়কে ঢাকবার জন্য আরও অন্যায় করে চলেছে”। তিনি বিশ মিনিটের জায়গায় আমাকে এক ঘন্টা সময় দিলেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭