ইনসাইড পলিটিক্স

কংগ্রেসে ঝুঁকছে আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/02/2020


Thumbnail

আগামী ১৭ মার্চ জাতীয় পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সরকার বছরব্যাপী কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসছেন। ধারণা করা হচ্ছে এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যুতে সম্পর্কে যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছিল সেই টানাপোড়েনগুলো দূর হবে।

বিশেষ করে নাগরিক পঞ্জি এবং এনআরসি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে এক চাপা অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিজেপি সরকারের একটি বড় অংশই মনে করছে এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আর এই সব বিষয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং নেতারা যে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন তা অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার। কারণ এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে যদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাহলে তাতে ভারতেরই ক্ষতি হবে।

অন্যদিকে নাগরিক পঞ্জি এবং এনআরসি নিয়ে চাপে থাকা বাংলাদেশ ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ একদিক থেকে এই বিষয়টিকে যেমন অপ্রয়োজনীয় মনে করছে। আবার অন্যদিকে বিজেপির পাশাপাশি কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার খবর পাওয়া গেছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশাপাশি কংগ্রেসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাও আসছেন। বিশেষকরে ২২ এবং ২৩ মার্চ জাতীয় সংসদে যে বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে সেই বিশেষ অধিবেশনে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেসের এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা প্রণব মুখার্জি বক্তব্য রাখবেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের নেতা সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সমস্ত কংগ্রেস নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তাদেরকেও বছরজুড়ে আয়োজন করা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা অবশ্য বলেছেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে কংগ্রেস যেহতেু ক্ষমতায় ছিল এবং মিসেস ইন্দিরা গান্ধী জাতির পিতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়েছিলেন। আর সে সময় মিসেস গান্ধীর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। সে কারণেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে কংগ্রেসের যে প্রাধান্য পাবেন এটা অনস্বীকার্য।

কিন্তু কুটনীতিকরা মনে করছেন শুধু জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীই নয় বরং বিজেপিকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকছে। আর আওয়ামী লীগ দেখিয়ে দিতে চায় তারা শুধু ক্ষমতাশীল বিজেপির ওপর নির্ভরশীল নয়। বরং ভারতের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আঞ্চলিক শান্তি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। এই বার্তাটা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিজেপিকে দেওয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেলে সেখানে তিনি প্রিয়াঙ্কার গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন। এ নিয়েই প্রথম হৈচৈ হয় আর বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা বলছে কংগ্রেস বা গান্ধী পরিবারের সাথে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এটাকে চাইলেও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।

কুটনীতিকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের এই কৌশল বেশ কাছে দিচ্ছে। কারণ বিজেপি বুঝতে পারছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক না থাকে এবং আওয়ামী লীগের কারণে দুই দেশের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে সুসম্পর্কগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে কংগ্রেসই লাভবান হবে। বর্তমানে রাজনীতিতে খুবই কৌশলে এগুচ্ছে, যে এলাকাগুলোতে তাদের সম্ভাবনা নেই সেখানে তারা আঞ্চলিক দলগুলোকে সুবিধা দিচ্ছে। যেনো তারা বিজেপিকে পরাজিত করতে পারে। যার বড় প্রমাণ সাম্প্রতিক সময়ে দিল্লিতে হয়ে যাওয়া নির্বাচন।

তবে আওয়ামী লীগের এই কুটনীতির ফলে বিজেপি-আওয়ামী লীগ মুখোমুখি হবে নাকি আওয়ামীগের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে সেটাই দেখার বিষয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭