ইনসাইড আর্টিকেল

৪৭তম পর্ব: ভাষা আন্দোলনের পর আ.লীগের প্রথম জনসভা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/02/2020


Thumbnail

আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সরকার ২০২০ এর ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ এর ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে। ১০ জানুয়ারি থেকে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। ১০ জানুয়ারি হলো জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এই মহামানবের জীবন, বেড়ে ওঠা, রাজনীতি এবং বাঙালির জাতির পিতা হয়ে ওঠার যে গল্প তা তিনিই তার বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতি, অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং ডায়রিতে লিখে গেছেন। সেখান থেকে সংগ্রহ করে মুজিববর্ষে বাংলা ইনসাইডারের এই বিনম্র নিবেদন:

আমি ঢাকায় এসে পার্টির কাজে আত্মনিয়োগ করলাম। মওলানা ভাসানী ও আমার সহকর্মীদের অনেকে আজও জেল থেকে মুক্তি পান নাই। বন্দি মুক্তি আন্দোলন জোরদার করা কর্তব্য হয়ে পড়েছে। পল্টন ময়দানে সভা দিলাম। আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে এক বিরাট সভা হল। আমি সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলাম। ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পরে এই আমার প্রথম সভা, যদিও আমাদের মুক্তির পরে ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে ছাত্রলীগ এক সভা করেছিল সদ্য কারামুক্ত কর্মীদের এখানে অভ্যর্থনা জানাবার জন্য। রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের সভাও কয়েকটা হয়েছিল বিভিন্ন বাড়িতে।আওয়ামী লীগ প্রতিষ্টানকে গরার কাজে আত্মনিয়োগ করলাম। সোহরাওয়ারদী সাহেবকে খবর দিলাম, পূর্ব বাংলায় আসবার জন্য। তিনি আমাকে পূর্বেই কথা দিয়েছিলেন এক মাস সমস্ত জেলা হেডকোয়ার্টারে একটা করে সভা হবে এবং বড় বড় কতগুলি মহকুমায়ও সভার বন্দোবস্ত করা হল। তিনি ঢাকায় আসলেন, ঢাকায় জনসভায়ও বক্তৃতা করলেন। পাকিস্তান হওয়ার পরে বিরোধী দলের এত বড় সভা আর হয় নাই। তিনি পরিষ্কার ভাষায় রাষ্ট্রভাষা বাংলা, বন্দি মুক্তি, স্বায়ত্তশাসনের সমর্থনে বক্তৃতা করলেন। সিলেট থেকে শুরু করে দিনাজপুর এবং বগুড়া থেকে বরিশাল প্রত্যেকটা জেলায়ই আওয়ামী লীগ কর্মীরা সভার আয়োজন করেছিল। একমাত্র রাজশাহীতে জনসভা হয় নাই, তবে নাটোরে হয়েছিল। রাজশাহীতে তখনও জেলা কমিটি করতে আমি পারি নাই। রাজশাহীর অনেক নেতা নাটোরে শহীদ সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাঁকে রাজশাহী নিয়ে গেলেন, সেখানে বসে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্টান গড়া হল। এই সময় প্রায় প্রত্যেকটি মহকুমায় ও জেলায় আওয়ামী লীগ সংগঠন গড়ে উঠেছে। শহীদ সাহেবের সভার পরে সমস্ত দেশে এক গণজাগরণ পড়ে গেল। জনসাধারণ মুসলিম লীগ ছেড়ে আওয়ামী লীগ দলে যোগদান করতে শুরু করেছিল। শহীদ সাহেবের নেতৃত্বের প্রতি জনগণের ও শিক্ষিত সমাজের আস্থা ছিল। জনগণ বিশ্বাস করত শহীদ সাহেব একমাত্র নেতা যিনি দেশের বিকল্প নেতৃত্ব দিতে পারবেন এবং তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করতে পারলে দেশের ও জনগণের উন্নতি হবে। দেশের মধ্যে দুর্নীতি, অত্যাচার ও জুলুম চলছে। কোনো সুষ্টু উন্নতিমূলক কাজে সরকার হাত না দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি শুরু করেছে। আমলাতন্ত্র ও ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি শুরু করেছে। খাজা সাহেবের দুর্বল শাসনব্যবস্থার জন্য তাদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, গোলাম মোহাম্মদ, নবাব গুরমানির মত পুরানা সরকারি কর্মচারীরা রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে শুরু করেছে। পাঞ্জাবি আমলাতন্ত্রকে খুশি করার জন্য চৌধুরী মোহাম্মদ আলীকে অর্থমন্ত্রী করে খাজা সাহেব নিজেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। জনগণের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে এবং তারা শহীদ সাহেবের নেতৃত্বের উপর আস্থা প্রকাশ করতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দল ছাড়া গণতন্ত্র সফল হতে পারে না। এই সময় মুসলিম লীগ দলের মোকাবেলায় একমাত্র আওয়ামী লীগই বিরোধী দল হিসাবে গড়ে উঠতে লাগল।

 

অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং- ২৩৪ ও ২৩৫)

চলমান……

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭