ইনসাইড পলিটিক্স

নিমকহারামের তকমা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 27/02/2020


Thumbnail

নিমকহারাম শব্দের অর্থ হচ্ছে কৃতঘ্ন বা অকৃতজ্ঞ। এই শব্দটা আমাদের এই অঞ্চলে বহুলভাবেই প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।  ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ২৯ তারিখে অন্য একটা ঘটনা ঘটিয়েছিল গুগল। তাঁদের একটা খবরের শিরনামে  ভারতকে ‘নিমক হারাম দেশ’ দেশ হিসেবে উল্লেখ করছিল। ‘নিমক হারাম কান্ট্রি’ লিখে গুগলে সার্চ করলে প্রথমেই উঠে এসেছিল ভারতের নাম।  

বিষয়টি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নজরে আসার পর অনেকেই তার স্ক্রিন শট নিয়ে টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে থাকেন তখন। এরপর ‘দ্যা একপ্রেস ট্রিবিউন’সহ পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে।

এরপর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ বিষয়টির বর্ণনা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। প্রকাশিত সংবাদে সংবাদমাধ্যমটি দাবি করে, ১৯৭৩ সালে অমিতাভ বচ্চন, রাজেশ খান্না এবং রেখা অভিনীত একটি সিনেমার নাম নিমক হারাম। গুগলে যখন লোকজন নিমক হারাম বলে সার্চ করেছে তখন হয়তো সার্চ ইঞ্জিনটি বুঝতে পেরেছে যে সিনেমাটি কোন দেশে নির্মিত হয়েছে তার নাম জানতে চাওয়া হচ্ছে। আর সেকারণেই নিমক হারাম লিখে সার্চ দিলে ভারতের নাম আসে।

ষে যাই হউক, ইদানীং সত্যি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের চরিত্র হারিয়েছে ভারত। মোটাদাগে এখন ভারত একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে! যদিও সেদেশে মুক্তচিন্তার মানুষের সংখ্যা আমাদের উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু মোদিজীর সরকারের বর্তমান কর্মকাণ্ডে ভারত সরকারের আসল কদর্য রূপ দেখছে বিশ্ব! দুঃখজনক হলেও সত্য, যে ভারত পৃথিবীর কাছে আদর্শ হয়ে উঠছিল, সে ভারত আজ হিংসার বীজ বুনছে। ধর্মশালার বাইরে ধর্ম টেনে রাজনীতির চর্চা কখনোই মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়নি। গত কয়দিন ভারতের দিল্লির হানাহানি তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন বলেছেন, একদা উপনিবেশ গড়ে তোলা আর তা টিকিয়ে রাখার জন্য হানাহানি ছিল ইউরোপে। সেখানকার মানুষ এর অসারতা বুঝতে পেরে তা ঝেটিয়ে বিদায় করেছে। আমাদের উপমহাদেশ এখনো বুঝতে পারেনি, তাই ওরা যখন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটছে আমরা তখন পরস্পরকে রক্তাক্ত করতে, প্রতিবেশীর ঘর জ্বালাতে ব্যস্ত।

ধর্ম নির্ভর রাজনীতি মনেপ্রাণে ত্যাগ না করা অব্দি তিন খণ্ডের এই উপমহাদেশ অশান্তির আগুনে জ্বলতেই থাকবে, রাজনীতির বলি হতেই থাকবে। আজ দিল্লি তো কাল অন্যত্র! এই আগুনের মধ্যে বিলম্বে হলেও "মানুষ" যে এখন জেগে উঠছে হানাহানির বিরুদ্ধে দিল্লির বুকে, এইটুকু এক চিলতে ভরসা।

‘ঘর পড়ানো আগুনে আলু পুড়িয়ে খাওয়া’ যাঁদের অভ্যাস সেই সুযোগ সন্ধানী বঙ্গবন্ধু প্রেমিক আর দেশ প্রেমিক কিছু মিডিয়া এই সুযোগ উঠে পড়ে লেগেছে। তারা নানাভাবে ভারত তথা  ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে নানা বিভ্রান্তিকর মন্তব্য শুরু করেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘স্বীকৃত দাঙ্গাবাজ’ বলে আখ্যায়িত করে ডাকসুর ভিপি) নুরুল হক বলেছে, মোদীর হাতে মুসলিমসহ গণ-মানুষের রক্ত লেগে আছে- এমন মন্তব্য করে নুরুল বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে মোদী এলে ছাত্রসমাজের রক্তের গঙ্গা বয়ে যাবে। তারা বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর মতো একটি মহৎ অনুষ্ঠানে মোদীকে অংশ নিতে দেব না। তার এই বক্তব্য ফলাও করে প্রচার করছে দেশ প্রেমিক আর বঙ্গবন্ধু প্রেমিক দাবিদার কিছু বাংলাদেশী মিডিয়া।  

এদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে কিভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মত ঘৃণ্য ব্যক্তিকে প্রধান বক্তা হিসেবে সরকার আমন্ত্রণ করে তাঁরা তা বোঝেন না। আজকে মোদীকে এদেশে আমন্ত্রণ করা মানে শেখ মুজিবকে অপমান করা, বলে তিনি দাবি করেন। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সাহায্যকারী ও সবচেয়ে বড় মিত্র দেশ ভারত। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে ভারতের প্রতিনিধিত্বকে আমরা বাদ দেবো-এটাতো চিন্তাও করা যায় না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনে কক্ষে সমসাময়িক ইস্যুতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সাহায্যকারী ও মিত্র দেশ হিসেবে ভারতকে মুজিববর্ষে আমন্ত্রণ করেছি। তাদের দেশের অভ্যন্তরের কোনো বিষয়ে যে সংঘাত, সংঘর্ষ, রাজনৈতিক বিরোধ-এটা চিন্তা করে তো আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানাইনি।

কিন্তু এ রকম একটা অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বড় মিত্র দেশ ভারত এবং স্বাধীনতার যুদ্ধে সহযোগিতাকারী প্রধান দেশ হিসেবে সে  দেশের প্রতিনিধিত্বকে আমরা বাদ দেবো-এটাতো চিন্তাও করা যায় না।

‘বঙ্গবন্ধু আর স্বাধীনতা এক অভিন্ন নাম। স্বাধীনতা বাঙালির রক্তঝরা এক ইতিহাস ও বাঙালির স্বাধীনতা ইতিহাসের এক মহাকাব্য। এই মহাকাব্যের মহানায়কের নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস যতদিন থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অম্লান থাকবেন। পৃথিবীর ইতিহাসে, স্বাধীনতার ইতিহাসে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারিত হবে শ্রদ্ধার সঙ্গে। ভালবাসার সঙ্গে। বাঙালি যতদিন বেঁচে থাকবে, বাংলা ভাষা পৃথিবীতে যতদিন উচ্চারিত হবে বঙ্গবন্ধুর নামও ততদিন ধন্য ধন্য বলে ধ্বনিত হবে’। 

কিন্তু ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মানে ভারত নয়, তিনি সেই দেশের সরকারের প্রধান মাত্র। আমরা ভারতের কাছে, ভারতে আপামর জনগণের কাছে ঋণী, চির কৃতজ্ঞ আমাদের মহান স্বাধীনতায় তাঁদের ত্যাগ ও আন্তরিক সহযোগিতার জন্য।  

বঙ্গবন্ধুর মত নরেন্দ্র মোদী আর ভারত সমার্থক নয় এটা কি আমরা বুঝি না!

তাই মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে কী আমরা নিজেদের ‘নিমক হারাম দেশ’এর তকমা লাগাব নিজেদের গায়ে!



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭