রাতারাতি দিল্লির ‘রক্ষাকর্তা’ কে এই বিচারপতি?

একরাতেই দিল্লির ‘রক্ষাকর্তা’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মধ্যরাতে তার বদলি নিয়ে এখন ভারতজুড়েই তোলপাড় চলছে। দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবীরা এই বদলির প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বইছে নিন্দার ঝড়। রাতারাতি নায়ক হয়ে যাওয়া দিল্লি হাইকোর্টের এই বিচারপতি এস মুরলীধরের ইতিহাসটা একটু জেনে নেওয়া যাক-

# ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে চেন্নাইয়ে প্রথম আইনজীবী হিসাবে প্র্যাকটিস শুরু করেন মুরালিধর। তারপর ১৯৮৭ সালে দিল্লিতে চলে যান। দিল্লি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন।

# প্রযুক্তি আইন এবং গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ উষা রামানাথন তার স্ত্রী।

# সুপ্রিম কোর্টে ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এবং নর্মদা বাঁধ তৈরির জন্য ঘরহারা মানুষদের জন্য লড়াই করে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন।

# মুরালিধর জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করেছেন।

# ২০০২ সালের ডিসেম্বরে ল’কমিশন-এর আংশিক সময়ের সদস্য হন তিনি।

# ‘ল, পভার্টি অ্যান্ড লিগাল এইড: অ্যাকসেস টু ক্রিমিনাল জাস্টিস’ নামে ২০০৪ সালের আগস্টে নিজের লেখা একটি বইও প্রকাশ করেন মুরালিধর।

# বিচারপতি হিসেবে ২০০৬ সা্লের ২৯ মে দিল্লি হাইকোর্টে কাজে যোগ দেন।

# দীর্ঘ ১৪ বছর দিল্লি হাইকোর্টে বিচারপতি থাকাকালীন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নানা গুরুত্বপূর্ণ মামলা সামলেছেন মুরালিধর। যার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গা মামলা। সমকামিতাকে ফৌজদারি অপরাধের তকমা থেকে মুক্ত করার রায়ও তিনিই দেন।

# ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বরাবরই বিচারপতি মুরলিধরেরকে টার্গেট করে আসছে। দিল্লি হাইকোর্ট থেকে তাকে বদলির প্রসঙ্গ এর আগেও দুবার উঠেছিল। ২০১৮-র ডিসেম্বর ও ২০১৯-এর জানুয়ারিতে।

# সম্প্রতি দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে তৎপরতা দেখিয়ে বদলি হতে হলো তাকে। দিল্লির মুস্তাফাবাদে দাঙ্গায় আহতদের অনেকে স্থানীয় ছোট্ট একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পুলিশের থেকে কোনও সাহায্য না পেয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিচারপতি মুরলীধরের বাড়িতে যান চিকিৎসক ও মানবাধিকার কর্মীরা। রাতেই তাদের আর্জি শুনতে রাজি হন মুরালিধর। এ ঘটনা তাকে একজন দায়িত্বশীল এবং মানবিক বিচারপতি, একই সঙ্গে দিল্লির রক্ষাকর্তার তকমা এনে দিয়েছে।

# ব্যক্তিগত মহলে ‘ফিটনেস ফ্রিক’ হিসেবে পরিচিত তিনি। প্রতিদিনই নিয়ম করে লোধি গার্ডেনে মর্নিং ওয়াক এবং জগিং করেন। আর তার রোববার বরাদ্দ দিল্লির সেন্ট্রাল রিজ এলাকায় সাইক্লিংয়ের জন্য।

# শাসক দলের রোষানলে পড়ে দিল্লি বদলি হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ থেকে পঞ্জাব এবং হরিয়ানা হাইকোর্টের বিচারপতির আসনে বসবেন এস মুরলিধর।

এমন একজন বিচারপতির বদলি দেশের বিচার ব্যবস্থা ওপর চরম আঘাত বলে মনে করছেন ভারতের বিশিষ্টজনেরা। এই বদলির প্রতিবাদে দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবীরা কর্মবিরতিও পালন করেছেন।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি