ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদার মৃত্যু হলে কার লাভ, কার ক্ষতি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/02/2020


Thumbnail

গতকাল বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ নাকচ করে দিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বিএনপির আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছিলেন, বেগম জিয়াকে যদি জামিন না দেওয়া হয়, এবং তার যদি উন্নততর চিকিৎসা না হয় তাকে বাঁচিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে যাবে। তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বেন। প্রশ্ন উঠেছে যে। বেগপম খালেদা জিয়া যদি এতই অসুস্থ হন, তিনি যদি জীবন-মৃত্যুর সন্দিক্ষণেই থাকেন তাহলে তাঁর প্যারোল কিংবা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে অসুবিধা কোথায়।

বিশ্বে রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অনেক দুর্নীতিবাজ, স্বৈরশাসক, অপশাসক এভাবে গ্রেপ্তার হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত বাঁচার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, মার্জনা পেয়েছেন। বলা হচ্ছে যে, মানবিক কারণে খালেদার মুক্তি চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু মানবিক কারণেই যদি বেগম জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গটি আসে, তাহলে কেন তার জন্য প্যারোল আবেদন করা হচ্ছে না? কেন বিশেষ বিবেচনায় রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি দণ্ড মওকুফের জন্য আবেদন করছেন না? বিএনপি নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী খালেদাকে বাঁচিয়ে রাখাই যদি মুখ্য হয়, তাহলে তো যেকোনো মূল্যেই তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা উচিৎ। কারণ খালেদা জিয়ার প্যারোল কিংবা রাষ্ট্রপতির কাছে দণ্ড মওকুফের আবেদন করা ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সরকারের করণীয় তেমন কিছুই নেই। কারণ এটি এমন একটি মামলা যেটি দায়ের করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। একটি মামলায় নিম্ন আদালতে দণ্ড হয়েছে এবং উচ্চ আদালত সেই দণ্ড বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় মামলায় নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার দণ্ড হয়েছে।

১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত একজন মানুষ কেমন করে জামিনের আবেদন করেন? তাও আবার জামিন নিয়ে বিদেশে যাওয়ার কথা বলেন, এটা নিয়ে বিএনপির অনেক আইনজীবীরাই নীরবে মুখ টিপে হাসেন। কাজেই বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এবং তিনি যে রোগে-শোকে মৃত্যু পথযাত্রী এই বক্তব্যের পেছনে বস্তুনিষ্ঠ এবং যুক্তিনিষ্ঠ তথ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেননি বিএনপির আইনজীবীরা। প্রশ্ন উঠেছে যে, বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে মারা যান, (সব মানুষকেই একসময় মারা যেতে হবে) তাহলে কার কী লাভ হবে?

বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে বা জেলে অন্তরীণ থাকা অবস্থায় যদি মারা যান তবে সরকারের কোনো লাভ হবে না। বরং সাধারণ মানুষ, যারা একটু আবেগি, তারা মনে করবে যে, সরকার চাইলেই একটু অনুকম্পা দেখাতে পারতো বা সরকার খালেদা জিয়ার প্রতি অমাণবিক আচরণ করেছে ইত্যাদি। ফলে বেগম জিয়া যদি কারান্তরীণ অবস্থায় বা দণ্ডিত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সরকারের কোনো লাভ নেই। এরকম পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যু হলে আওয়ামী লীগেরও কোনো লাভ নেই। কারণ আওয়ামী লীগ কখনই প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। একজন রাজনীতিবিদকে আওয়ামী লীগের কারণে যদি জেলে থেকে মরতে হয়, সেটা আওয়ামী লীগের জন্য কোনো ইতিবচক ফলাফল বয়ে আনবে না। আওয়ামী লীগের নেতারাও এটা সম্পর্কে ভালো জানেন। তাহলে কারাগারে খালেদার মৃত্যু হলে কার লাভ হবে?

দেখা যায় যে, বেগম জিয়ার কারাগারে মৃত্যু হলে সবচেয়ে লাভবান হবেন যে ব্যক্তিটি তিনি হলেন তারেক জিয়া। কারণ তারেক জিয়া এর ফলে সারা জীবনের জন্য একটা এফডিআর পাবেন। সারা জীবণের জন্য তিনি একটি অস্ত্র পাবেন, যেটি তিনি তার রাজনীতিতে ব্যবহার করতে পারবেন। তিনি আবেগী এই জাতিকে সবসময় বলতে পারবেন যে, তার মা খালেদা জিয়া কারান্তরীণ অবস্থায় মারা গেছেন। এটা তার কালীমালিপ্ত, কলংকিত রাজনৈতিক জীবনে একটু হলেও হিমেল বাতাস বইয়ে দেবে,

যদি কারাগারে খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়, তাহলে বিএনপিরও কিছুটা লাভ হবে। কারণ, এই মৃত্যুকে ইস্যু করে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত বিএনপি কিছুটা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে বেগম জিয়ার যদি কারাগারেই মুক্তি হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে অবশ্যই তারেক জিয়া। কারণ প্রথমত, মায়ের মৃত্যুতে তারেক জিয়া দলের একচ্ছত্র নেতৃত্ব পাবে।

দ্বিতীয়ত, তারেক রাজনীতি করার একটি বিষয়বস্তু পাবে।

তৃতীয়ত, তারেকের প্রতি অনেকের একটি সহানুভূতি তৈরি হবে। 

এসব কারণেই কি বেগম জিয়া যেন কারাগার থেকে বের হতে না পারেন, তিনি যেন প্যারোল বা বিশেষ বিবেচনায় মুক্তি না নেন সেজন্য তারেক জিয়া লন্ডন থেকে কলকাঠি নাড়াচ্ছে? কারণ শেষ পর্যন্ত সবাি নিজের লাভটাই ভালো বোঝে।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭