ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বৃত্তান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/07/2017


Thumbnail

মানবাধিকার নিয়ে গবেষণা ও ওকালতি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সারা বিশ্বে পরিচিত। ১৯৭৮ সালে হেলসিংকি অ্যাকর্ডের অধীনে গঠিত হওয় হেলসিংকি ওয়াচের বর্তমান রূপ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তাঁদের মিত্র দেশগুলোতে কী পরিমাণ মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছিল তা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করাই ছিল হেলসিংকি ওয়াচের দায়িত্ব। ১৯৮০ সালের পরে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে প্রতিষ্ঠানটি।

আমেরিকানদের দালাল বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা অভিহিত করেন। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা, ইরিত্রিয়া ও ইথিওপিয়ায় মানবাধিকার বিষয়ে প্রতিবেদন করার সময় সঠিক চিত্র তাঁরা তুলে ধরেনি বলে অনেকে অভিযোগ করেন। মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিষ্ঠানটি সবসময় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরি করে এমন অভিযোগ তুলেছে দেশটি। সৌদি আরবের কাছ থেকে অনুদান পেতে তাঁরা আরবদের বিপক্ষে যায় এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করে না।

মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক তথ্যের জন্য গাজা বা আফগানিস্তানে প্রতিষ্ঠানটি বেসামরিক ব্যক্তির সাক্ষীকেই গুরুত্ব দেয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট বার্নস্টেইন নিজেই প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে অভিযোগ তুলে বলেন, শুধুমাত্র প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষী নিয়ে কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায় না। কারণ প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেক সময় রাজনৈতিক মদদপুষ্ট থাকে অথবা কর্তৃপক্ষের ভয়ে আসল তথ্য জানায় না।

২০১৪ সালের মে মাসে এক খোলা চিঠিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মার্কিন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে উল্লেখ করা হয়। খোলা চিঠিতে শান্তিতে নোবেল জয়ী অ্যাডলফ পেরেল এসকুইভেল, জাতিসংথের সাবেক কর্মকর্তা মেইরিড করিগান, জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক রিচার্ড এ. ফক সহ শতাধিক বিশেষজ্ঞ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি স্বাক্ষর করেন। চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মকর্তারা অধিকাংশই মার্কিন পররাষ্ট্রে দপ্তরে কর্মরত ছিল। তাই তাঁরা আমেরিকার স্বার্থকেই গুরুত্ব দেয় বেশি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়াশিংটন দপ্তরের ওকালতির পরিচালক টম ম্যালিনওস্কি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিশেষ উপদেষ্টা ছিলেন। চিঠিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ভেনিজুয়েলার অন্তর্ভূক্তি নিয়ে হিউম্যান রাইটসের আপত্তি নিয়ে সমালোচনা করা হয়। তাঁরা উল্লেখ করেন, গুয়াতানামোতে বন্দীদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি হিউম্যান রাইটস সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে গেছে।

২০০৮ সালে ভেনিজুয়েলার সরকার দুইজন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের কর্মীকে রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালানোর জন্য দেশ থেকে বহিষ্কার করেন। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোলাস মাদুরো দাবি করেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আসলে মানবাধিকারের রক্ষকের মুখোশ পড়ে আছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তাঁদের অর্থায়ন করেছে। তাঁরা দেশটির নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকে বানচাল করার জন্য আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ চাভেজ সরকারের বিরুদ্ধে নির্যাতনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করে থাকেন অনুদান পাওয়ার সুবিধার্থে প্রতিষ্ঠানটি পক্ষপাত করে থাকে। ২০০৬ সালের আগে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব থেকে অনুদান পেতে প্রচুর পরিমাণ ইসরায়েল বিরোধী প্রতিবেদন তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। দ্য টাইমস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১৪ মাসেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ৫টি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি, যেখানে গত ২০ বছরে কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে তাঁরা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মাত্র চারটি। আবার ২০০৬ সালে ইসরায়েল-লেবানন যুদ্ধে জঙ্গি প্রতিষ্ঠান হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুললেও ইসরায়েলের দিকে আঙুল তোলেনি তাঁরা।

ইসরায়েলভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জোনাথন কুক জানান, ইসরায়েলের কাছ থেকে অনুদান পেতেই তাঁরা এই পক্ষপাত করে। একইভাবে মিসরের মুরসি সরকারের বিরুদ্ধেও মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযোগ তোলে প্রতিষ্ঠানটি। মুরসি সরকার অভিযোগ করে, আন্দোলনকারীরা যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তা উল্লেখই করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন দেশ এবং বিশেষজ্ঞরা। মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে তাঁরা আসলে কতটুকু কাজ করে সেটি নিয়ে আসলে প্রশ্ন রয়ে গেছে। যে কোনো দেশ অর্থ দিয়েই তাঁদের প্রতিবেদনে নিজেদের অনুকূলে আনতে পারেন এ বিতর্ক রয়ে গেছে।

বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি/টিআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭