ইনসাইড থট

করোনায় এখন করণীয় কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/03/2020


Thumbnail

এঁকে অপরকে দোষ দিয়ে নিজের গা বাঁচানো অভ্যাসটা আমাদের খুব পুরনো। জ্ঞাতসারে, অজ্ঞাতসারে বা অদ্ভুতভাবে হোক আমরা নিজের শরীরটা কচুপাতার মতো পানি মুক্ত রাখতে ভালোবাসিনিরন্তর চেষ্টা করি কাদাপানিতে ডুব দেওয়া ব্যাঙয়ের চোখের মত নিজেকে পরিষ্কার রাখার। একই সাথে যেকোনো উপায়ে অন্যের সামান্য হলেও দোষ ধরার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টার ত্রুটি করি না।            

নিজের ১ বছরের ছেলে বা মেয়ের জন্মদিনে হোটেল সোনারগাঁওওয়েস্টিন বা রেডিসনে ৫০০ অথবা ১০০০ লোক নিয়ে জন্মদিনের উৎসব করিটাকা ওড়াই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কাটছাঁট করার পরেও তা নিয়ে নব্য বঙ্গবন্ধু প্রেমিকেরা বা চ্যুত বঙ্গবন্ধু প্রেমিকারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঁকা কথা বলছেন। কারো বিয়ে বা অনুষ্ঠানে খাবার আয়োজন সম্পন্ন করার পরে কোন দুর্ঘটনায় কী আমরা খাবার ফেলে দিই না কী অনুষ্ঠান কাটছাঁট করি! অনেকে বলছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের এই টাকা দিয়ে করোনার জন্য টেস্ট কিটওষুধকিংবা ডাক্তার- মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের নিরাপত্তা পোশাক আনবেন যারা করোনা আক্রান্তদের সেবা করবেন তাঁদের জন্য কেনা ভালো ছিল।

আমেরিকান এক বিশেষজ্ঞ বলেছেনএই করোনাতে যুক্তরাষ্ট্রে ২০ লাখেরও বেশি আর যুক্তরাজ্যে ৫ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যেতে পারে। এসবই অনুমান। কারণ গতকাল রাতে ইউটিউবে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত নিউইয়র্কের একজন ডাক্তার ইউটিউবে বললেন যেতাঁরা কয়েকদিন আগে করোনা পরীক্ষার জন্য টেস্টিং কিট আর নিরাপদ পোশাক চেয়েছেনপাবেন। কিন্তু হয়তো ৫/৭ দিন সময় লাগবে। হাসপাতালগুলোতে এমন চাহিদা আগে হয়নি বলে এসবের উৎপাদনও বেশি ছিল না। যে গতিতে করোনা ছড়াচ্ছেসেই গতিতে টেস্টিং কিট আর নিরাপদ পোশাকহাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট খোলা বাস্তবে সম্ভব নয়। সে কারণে সব মানুষকে সচেতন হতে হবেযাতে রোগটা না বিস্তার লাভ করে।

মার্কিন সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল অস্টারহোম বলেন, ‘এটা তো কেবল শুরু। আঘাতব্যথাদুর্ভোগসংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যার কথা বিবেচনা করলে বোঝা যায় যেএটা কেবল আসলেই শুরু। এই অবস্থা সামনের মাসগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। আর মানুষও আক্রান্ত হতেই থাকবে।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেনসবচেয়ে মারাত্মক সিজনাল ফ্লুর তুলনায় করোনাভাইরাস আরো ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে।

এর মাঝেও একটা ভালো খবর হচ্ছে কিউবার তৈরি ওষুধ আলফা টু-বি করোনায় দারুণ সফল বলে জানা গেছে। ‘এরপর থেকে সারাবিশ্ব থেকে এই ওষুধ কেনার অর্ডার পেতে শুরু করে কিউবা। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ল্যাটিন আমেরিকানক্যারিবীয় ও ইউরোপীয় বেশ কয়েকটি দেশ কিউবার কাছ থেকে চিকিৎসা সহায়তার অনুরোধ করেছে। চলতি মাসের ১৪ তারিখে ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা বায়কিউবা ফার্মা গ্রুপের সভাপতি এডুয়ার্ডো মার্টিনেজ বলেনসারাবিশ্বের বিপুল সংখ্যক দেশ থেকে এই ওষুধ বিক্রির অনুরোধ পাওয়ার পরেই এর উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে চলেছে। তিনি আশ্বস্ত করেন যেসিআইজিবির হাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ সরবরাহ রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদাও মিটাতে পারবে।’     

কিন্তু এটা অনেকটা সেই সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপন ‘দাগ আচ্ছি হ্যায়’ এর কাপড় ময়লা করে সার্ফ এক্সেল দিয়ে কাপড় ধোয়ার মত। তার চেয়ে আমরা যদি এই রোগের বিস্তার রোধ করতে পারি তাহলে আমাদের আর এত টেস্টিং কিট, নিরাপদ পোশাকওষুধ কেনা কিংবা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট খোলার ব্যবস্থা করতে হবে না। হাসপাতালে আইসিইউ এর যন্ত্রপাতি কোথা থেকে আসবে! সব দেশের সাথেই তো যোগাযোগ প্রায় বন্ধযারা এগুলো বিক্রি করবেন তারাও তো মহাসংকটে।

আমাদের দেশে সচরাচর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সীট পেতে ৩/৪ দিন সময় লাগে। তাও মেডিক্যাল ষ্ট্যান্ডার্ডে যেখানে ১০ টা সীট বসানো যায় আমরা সেখানে ২০/৩০ টা সীট ফেলে আবার ফ্লোরেও বেড ফেলি। কারণ করোনায় চিকিৎসা দেবার মত হাসপাতাল সুবিধা উন্নত দেশেও নেই। কিন্তু করোনায় কি তা করা যাবেঅবশ্যই না। তাহলে আমাদের একমাত্র উপায় করোনার সংক্রমণ  রোধ করা। তার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বা আমাদের দেশের অভিজ্ঞ  চিকিৎসকদের পরামর্শ মত নিজেদের সংযত করে চলাফেরা করা। যেসব সূত্র দিয়ে করোনার সংক্রমণ ছড়াতে পারে তা এড়িয়ে চলাপরিবারের সংক্রমিত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরে থাকানিজে আর পরিবারের সদস্যদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাপ্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে টেলিফোনে কথা বলা। আমাদের ধরেই নিতে হবে যে, মহামারী দেখা দিলে হাসপাতাল সেবা পাওয়া খুউব কঠিন হবে।       

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন যদি আমরা পুরোপুরি পালন করতে নাও পারি তাহলে আমাদের হাতে অন্য উপায় আছে। আমাদের সমাজে একঘরে করার প্রথা প্রচলিত আছে। যদি কারো শরীরে করোনা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দেয় তখন আমরা আমাদের প্রিয়জনের জীবন বাঁচাতে নিজেরাই একঘরে হয়ে যাবোযে বাড়িতে একাধিক মানুষ আক্রান্ত হবে সেই বাড়িকে একঘরে করবোযে পাড়ায় বেশি হবে সেই পাড়াকে আমরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবো নিজেদের উদ্যোগে। যেমনটি চীন করেছিলো উহান প্রদেশকে। সেখানে জরুরী যানবাহন ঢোকার সময় আর বেরুনোর সময় যানবাহনগুলোকে স্প্রে করে জীবাণু মুক্ত করে নেব। তাহলেই এই সংক্রমণ এড়াতে অনেকটা সক্ষম হব।   

এবার আসি খাদ্য সংকটের কথায়। উন্নত দেশে বাজারে ভোগ্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে। এমতাবস্থায় আমরা রোজার মত অটোফেজি করে দেখতে পারি যাতে অনেক উপকারের মধ্যে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবেবার্ধক্য প্রতিরোধ করবে। এমনকি জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির কিছু গবেষণা থেকে দেখা যায়- আলঝেইমার বা পার্কিনসন্স জাতীয় বয়সজনিত রোগগুলো যে কারণে হয়তার প্রতিরোধও করে অটোফেজি। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জীবাণু ধ্বংস-প্যাথোজেনব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি জীবাণুকে ধ্বংস করে দেহকে সুস্থ রাখবে। এই অটোফেজি করা গেলে খাদ্য সংকট আর তেমন বড় সংকট থাকবে না। বাংলায় নিরাপদ পানির সংকট হবে না বলেই ধারণা করা হয়। কারণ দুর্যোগকালীন সময়ে আমাদের সেনাবাহিনী সব সময় আমাদের জরুরী সেবা দিয়ে থাকে। পানি হচ্ছে অটোফেজির অন্যতম উপাদান।    

আসুন না এই দুর্যোগে আমরা ভীতি না ছড়িয়েমানুষের দোষ না খুঁজে নিজেরা সচেতন হই। সীমিত সমর্থের মাঝে সবাই মিলে একসাথে বাঁচার চেষ্টা করি। দোষ ধরার সময় পরেও পাওয়া যাবে। এটা এখন দোষ ধরার সময়  না, সময় সবাই মিলে বাঁচার চেষ্টা করা। এটাই আমাদের জন্য এখন আশু করণীয়।   

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭