ইনসাইড পলিটিক্স

তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/03/2020


Thumbnail

‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,

তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?’

-বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং শেখ হাসিনার নীলকণ্ঠ মানসিকতার পর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এই দুটি লাইন যেকোন পাঠকের মনে পড়তেই পারে। শেখ হাসিনা একজন বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক সেটাতে যেমন সন্দেহ নেই, তেমনি তিনি যে মানবিকতার সর্বোচ্চ শেখরে উঠেছেন- সে ব্যাপারেও সন্দেহ থাকার কথা না। তাঁকে যারা হত্যা করতে চেয়েছিল, যারা তাঁর রাজনীতিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, যারা তাঁকে বারবার বিপদে ফেলতে চেয়েছিল, তাদেরকেই তিনি বারবার ক্ষমা করেছেন। এ যেন নীলকণ্ঠ পাখির মতো নিজের বিষ গ্রহণ করে অন্যকে ক্ষমা করা। এটা একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ক্ষমা করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করলেন যে, ক্ষমায় তিনি অতুলনীয়। তিনি যে তাঁর চরম শত্রুদের প্রতিও রাগ-অনুরাগ, বিদ্বেষের বশবর্তী হননা এই উদাহরণ তৈরি করলেন। অবশ্য এই উদাহরণ আজ কেন? এই উদাহরণ তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে দেখতে পারি।

আমরা যদি পেছনে ফিরে দেখি, ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করার সময় সেনাপ্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ, বিমান বাহিনীর প্রধান ছিলেন এ কে খন্দকার। তারা প্রত্যেকেই কাপুরুষোচিত ভূমিকা পালন করেছিলেন। জাতির পিতার রক্তে উপর পা বাড়িয়ে বেতারে খুনী মোসতাককে সমর্থন করেছিলেন। অথচ শেখ হাসিনা তাদের ক্ষমা করেছিলেন। এই শফিউল্লাহ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে এমপি হয়েছেন একাধিকবার, এ কে খন্দকার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে শুধু এমপি হননি, মন্ত্রীও হয়েছেন। এটা বোধ হয় একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব।

শুধু শফিউল্লাহ গং কেন? ড. কামাল হোসেনের কথা যদি আমরা বলি? ৭৫ এর ১৫ই আগস্ট ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা রহস্যময়, তিনি এই হত্যার প্রতিবাদটুকু পর্যন্ত করেননি। এরপরেও ১৯৮১ দেশে ফিরে শেখ হাসিনা তাঁর চাচাকে কাছে পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনীতির দাবায় ড. কামাল হোসেন বারবার শেখ হাসিনার কিস্তিমাত করতে চেয়েছিলেন, তবে সফল হননি। ৯১ সালের নির্বাচনের পর দলের ভেতর ক্যু করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ড. কামাল হোসেন চলে যান, কিন্তু তারপরেও শেখ হাসিনা তাঁর চাচাকে খাওয়ানোর জন্য ব্যাকুল থাকেন। এটা একমাত্র শেখ হাসিনার কাছেই সম্ভব। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুর রাজ্জাক বাকশালতন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে শেখ হাসিনাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন, করেছিলেন অনেক কুকীর্তি, মন্তব্য করেছিলেন শেখ হাসিনার সঙ্গে আর যাই হোক রাজনীতি করা যায় না। কিন্তু তারপরে আবারও শেখ হাসিনা ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে এনেছিলেন, এই উদারতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে তো বটেই, বিশ্ব রাজনীতিতে আর কজনের ভেতর আছে- তা খুঁজতে ইতিহাস ঘাটতে হবে। ওয়ান ইলেভেনের সময় আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আব্দুর রাজ্জাক, মুকুল বোসরা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিল, শেখ হাসিনা মাইনাস হননি; বরং বিপুল শক্তিতে আওয়ামী লীগের সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী হয়েছেন। কিন্তু তারপরেও শেখ হাসিনা তাদেরকে ক্ষমা করেছেন, তাদেরকে দলে রেখেছেন, কয়েক দফায় মন্ত্রীত্বের আসনও দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা এমনই। হন্তারকদেরকে তিনি আপ্যায়ন করেন আর এই রাজনীতি বোধ হয় শেখ হাসিনাকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। শেখ হাসিনার আকাশসম উদারতার সবশেষ উদাহরণ হলেন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়াই শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর দিন, যেটা জাতীয় শোকাবহ দিন ১৫ই আগস্টে ভণ্ডামি করে মিথ্যা জন্ম উৎসব পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে জিয়াউর রহমান কূটনৈতিক চাকরি দিয়েছিলেন, বেগম জিয়া ক্ষমতায় এসে তাদের পদোন্নতি দিয়েছিলেন। তিনি খুনী রশিদকে সংসদে নিয়ে এসে জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করেছিলেন। বেগম জিয়া হত্যার রাজনীতির পুনরুত্থান করে শেখ হাসিনাকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেখুন, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! শেখ হাসিনার কলমে খোঁচায় বেগম জিয়ার বন্দিত্ব ঘুচেছে। শেখ হাসিনার একটি স্বাক্ষরে বেগম খালেদা জিয়া দুই বছরের বেশি সময় পর মুক্ত বাতাস পেলেন। রাজনীতির এই উদারতার শিক্ষা দেশের রাজনীতিবিদরা কি নিবেন?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭