ইনসাইড থট

করোনা পরীক্ষার কিট ও পিপিই’র মজুতে সরকার ব্যর্থ কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/03/2020


Thumbnail

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও তার চিকিৎসায় নেওয়া সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের ব্যবস্থা এখন সারা দুনিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ এর বাইরে নয়। করোনাভাইরাস আক্রান্ত চীন থেকে যখন আমাদের দেশের কিছু মানুষ দেশে ফিরে এলেন তখন সরকার সফলভাবে তাঁদের এয়ারপোর্টের পাশে অবস্থিত অস্থায়ী হজ্ব ক্যাম্পে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু করোনাভাইরাস আক্রান্ত ইতালি বা ইউরোপ থেকে যখন বাংলাদেশীরা ফিরে এলেন, তখন তাঁদের অস্থায়ী হজ্ব ক্যাম্পে রাখা সম্ভব হয়নি নানা কারণে। এরা দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে সম্মান দেখিয়ে সরকার সেলফ কোয়ারেন্টাইনের শর্তে বাড়ি ফিরে যাবার অনুমতি দিলেও তাঁরা তাঁদের কথা রাখেননি। ফলে বাধ্য হয়ে এক পর্যায়ে সরকার সারা দেশে সেনাবাহিনী নামাতে বাধ্য হয়েছেন। জনমনে স্বস্তি এলেও হুড়োহুড়ি করে ছুটিতে ঘরে ফেরা নিয়ে কমিউনিটি সংক্রমণের চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে প্রায় তিন মাস সময় পাবার পরেও সরকারের ভাণ্ডারে করোনাভাইরাসের টেস্ট কিট, আর পিপিই’র স্বল্পতা নিয়ে নানামুখী সমালোচনা চলছে। এটা নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায় যে-           

করোনাভাইরাসের সংক্রামণ থেকে আক্রান্তদের ভাল করার বা সংক্রমণ বন্ধ করার মূলত তিনটি উপায় রয়েছে। প্রথমত: পুরোপুরি ভাইরাস সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত করতে একটা এলাকা লক-ডাউন করা বা মানুষের মুক্ত গতিবিধি বন্ধ করে দেওয়া,  জনসমাবেশ বন্ধ করা, ব্যাপক আকারে পরীক্ষা করা। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তা অসম্ভব কারণ ১৫০টির ও বেশি দেশে করোনাভাইরাস ছোবল পড়েছে।  

দ্বিতীয়টি হচ্ছে ভ্যাকসিন দেওয়া যা সবাইকে রক্ষা করতে পারে তবে এটি এখনও কোন দেশ আবিষ্কার করতে পারেনি, তবে চেষ্টা চলছে।     

তৃতীয়টি বিবেচনা সম্ভাব্য কার্যকর তবে ভয়াবহ। পর্যাপ্ত (৮০%) লোকের মধ্যে এটি ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকলে অবশেষে বহু লোক সংক্রামিত হয়ে পড়ে এবং (যদি তারা বেঁচে থাকে) তাঁদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ এমন ক্ষমতা হয়ে যায় যে রোগের জীবাণুটির সংবেদনশীল হোস্ট খুঁজে পেতে কঠিন হয়। এই ঘটনাটি হার্ড ইমিউনিটি বা পশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা হিসাবে পরিচিত।      

যেহেতু প্রথম পদক্ষেপটি দেশকে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে আর দ্বিতীয়টি অসম্ভব তাই তার উন্নত দেশের অনেকগুলো দেশ তৃতীয় পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করেছিলো বা বিবেচনায় নিয়ে মহা সংকটে পড়েছে। তাই ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে রূপ নিয়েছে।

এক সেট পিপিই’র উপাদানের আনুমানিক মূল্য ৩৫ মার্কিন ডলার বা  ৩০০০ টাকার মত। একটা বিশেষ ধরণের উপাদান দিয়ে পিপিই সেট তৈরি করা হয়। একইভাবে করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট এর দাম ১৩৫ থেকে ১৬৫ মার্কিন ডলার বা গড়ে ১৩,০০০ টাকার মত। তবে ফিনিসড পিপিই আর করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট এর পরিবহণ খরচ মিলে তার মূল্য সময়, চাহিদা ও পরিস্থিতিতে অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশে যারা গার্মেন্টস তৈরি করেন তাঁরা জানেন যে, যে পলো সার্টটি মাত্র ২০০ বা ২৫০ টাকায় আমরা বিদেশী ক্রেতার কাছে বিক্রি করি তা বিদেশে কত টাকায় বিক্রি হয়।   

অনলাইন সূত্রে জানা যায় যে, পিপিই’র পুরো সেট (গ্লাভস, গাউন, মাস্ক, গগলস ইত্যাদি) পরতে হবে শুধুমাত্র করোনা রোগীর অথবা রোগের উপসর্গ যার আছে, তার সংস্পর্শে আসার ঠিক আগ মুহূর্তে এবং ব্যবহারের পরপরই বিশেষ ডিসপোজাল বিনে ফেলে দিতে হবে। প্রতিটি সেট পিপিই একবার ব্যবহার করার জন্য। তবে সেটা পরা থাকা অবস্থায় একই রোগীর কাছে দ্বিতীয়বার যাওয়া যায়। তাই বলে এটা পুনঃ-ব্যবহারযোগ্য নয়।   

সব চেয়ে বড় কথা হচ্ছে পিপিই, আর করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট শুধু দুর্যোগ জাতীয় মহামারি টাইপের অসুখের সময় কাজে লাগে। পক্ষান্তরে এটা তুলনামূলক ব্যয়বহুল আর এর ব্যবহার সচরাচর নেই বলেই কোন দেশই এটা তৈরি করে মজুত করে রাখে না। সে কারণে ইউরোপ আমেরিকার মত উন্নত দেশও পিপিই আর করোনাভাইরাস টেস্টিং কিটের কোন মজুত ছিল না। তাই তাঁরা রোগের ভয়াবহতায় রোগ মোকাবিলায় যখন বাধ্য হয়ে প্রথম উপায়টি অবলম্বন করেন। তখন তাঁরাও এখন পিপিই আর করোনাভাইরাস টেস্টিং কিটের মহা সংকটে পড়েছে।  এ জন্যই অর্থনৈতিকভাবে আর অন্যদিকেও শক্তিশালী দেশও করোনাভাইরাসের আগ্রাসী থাবায় একেবারে নাজেহাল।   

আরেকটি সমস্যা হচ্ছে এই করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোন ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি।  বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করতে পারেন নি যে, কোন ওষুধে করোনাভাইরাস আক্রান্তের চিকিৎসা করা হবে। এটা নিয়ে নানাভাবে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কোন কোন ক্ষেত্রে ভালো ফল পেয়েছেন।

এমতাবস্থায় আমাদের মত গরীব দেশের সরকারের পক্ষে দেরিতে হলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাধাগ্রস্ত বা রোধ করতে তাঁদের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে করনীয় সব কিছুই করছেন। দেশি-বিদেশী বিশেষজ্ঞ নতুন কোন পরামর্শ দিলেও হয়তো করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশের সরকারগণ গ্রহণ করবেন। কারণ করোনাভাইরাস টেস্ট আর চিকিৎসায় কিট ও পিপিই’র স্বল্পতা কাটিয়ে উঠতে সব দেশের সরকারই তাঁদের আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু সেই তুলনায়  কিট ও পিপিই’র স্বল্পতা রয়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই চীন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য দেশ থেকে বেশ কিছু কিট ও পিপিই’র সংস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। এমতাবস্থায় সবাইকে সচেতন হয়ে নিজেকে সংযত রাখার কোন বিকল্প অবস্থা এখনো তৈরি হয় নি। তাই ভয় না পেয়ে পথ্য দিয়ে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমরা বাড়ানোর চেষ্টা করাই উত্তম পন্থা।

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭