ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিকে যেভাবে ‘নবজন্ম’ দিচ্ছেন শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/03/2020


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাই নন। তিনি জাতির অভিভাবক। দলমত নির্বিশেষে সবাই মনে করেন যে বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উন্নয়ন অগ্রগতির পথিকৃৎ তিনি। তিনি প্রতিটি মানুষের মঙ্গল কামনা করেন, দলমত নির্বিশেষে সকলের কল্যাণকামিতায় আবিষ্ট থাকেন। এক মানবিক মানুষের মুখচ্ছবি হলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু মানবিকতা, ক্ষমাশীলতা এবং কল্যাণকামীতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন প্রতিপক্ষকে দুর্বল না ভাবা। প্রতিপক্ষের প্রতি কঠোর আচরণ করা, প্রতিপক্ষ যেন আবার অনিষ্ট না করতে পারে, প্রতিপক্ষ যেন আবার মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে- সেই সুযোগের পথকে বন্ধ করে দেওয়া।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী কি তা করছেন? বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। শুধু বেগম জেয়ার মুক্তি কেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে বিএনপিকে শেখ হাসিনাই পুনর্জন্ম দিচ্ছেন। না হলে এই রাজনৈতিক দলটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যেতো। শেখ হাসিনার কৃপায়ই শেখ হাসিনা এখনো দল হিসেবে টিকে আছে এবং ভবিষ্যতে হয়ত শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবেও আবির্ভূত হতে পারে।

আসুন দেখা যাক বিএনপিকে শেখ হাসিনা ঠিক কীভাবে নবজন্ম দিয়েছে-

১. ২০১৪ এর নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপির অবস্থা ছিল বেসামাল, টালমাতাল। সাধারণ মানুষ বিএনপিকে প্রত্যাখান করেছিল। সেসময় সারাদেশে বিএনপি জ্বালাও পোড়াও, মানুষ হত্যা, অগ্নিসংযোগের যে হিংস্র রাজনীতি শুরু করেছিল, তার বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছিল সাধারণ মানুষ। অথচ ২০১৩-১৪ সালে বিএনপির যে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষকে পুড়িয়ে মারার সেই বিচার একটিও আজ পর্যন্ত শেষ হয়নি। অথচ রাষ্ট্রযন্ত্র চাইলে এই বিচারগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি এবং শেষ করতে পারতো। এটা কি তাহলে শেখ হাসিনার অনুকম্পা?

২. ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সারাদেশে যে দুর্নীতি এবং লুণ্ঠন করেছে, বিশেষ করে হাওয়া ভবনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সূচনা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেন সরকার এসে কিছু দুর্নীতির মামলা করেছিল। সেই মামলাগুলো এখনো চলছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, তার দুই-একটি ছাড়া অসংখ্য মামলা পড়ে আছে বছরের পর বছর। মির্জা আব্বাসের মামলা, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মামলাগুলোর শুধু আদালতে তারিখই পড়েছে। এটাও কি শেখ হাসিনার অনুকম্পা?

৩. ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ শুরু করে। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সেসময় বলা হয়েছিল যে, যদি কোনোদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় তাহলে এ সমস্ত অপকর্ম এবং সন্ত্রাস, অত্যাচারের বিচার হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা ১১ বছর পেরিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সেসব অত্যাচার এবং হত্যার বিচার হয়নি। এটাও কি শেখ হাসিনার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টির একটি উদাহরণ?

৪. ২০১৮ এর ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপি যখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে, বিএনপি যখন দিশাহীন, সেসময় বিএনপিকে সংসদে আসার সুযোগ করে দেওয়া হলো এবং বিএনপি যেন সংসদে এসে কথা বলতে পারে সেজন্য সব ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো। আমরা জানি যে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় অবশ্যই সংসদে বিরোধীপক্ষের প্রতিটি মতামত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই তিনি বিএনপির সংসদে আসার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু যে বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তাদের জন্য সংসদের সমান সুযোগের নামে যা ইচ্ছা তাই বলার লাইসেন্স দেওয়া কি উদার গণতান্ত্রিক নীতি?

৫. সর্বশেষ আলোচনা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিকে কেন্দ্র করে। বেগম জিয়ার মুক্তির যখন সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে গেলো তখন শেখ হাসিনা নিজেই তালা খুলে দিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলেন। খালেদাকে মুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা বিএনপিকে নতুন জন্ম দিলেন। কারণ খালেদা যদি আর কিছুদিন আটকা থাকতেন, তাহলে দলটি আপনাআপনি মৃত্যুমুখে পতিত হতো। কিন্তু কোমায় থাকা একটি রাজনৈতিক দলে নেত্রীকে মুক্তি দিয়ে শেখ হাসিনা দলটির পুনর্জন্ম দিলেন।

এই পুনর্জন্ম দেওয়ার ফলে কি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে? বাংলাদেশের নির্দলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে ধারা, সেই ধারা কি উন্নত হবে? নাকি এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা বিদ্বেষের রাজনীতিকে আরেকবার সুযোগ দিলেন? নাকি প্রতিপক্ষকে আরেকবার সুযোগ দিলেন, যেন তারা গুছিয়ে উঠে নতুন করে ষড়যন্ত্র করতে পারে? এটা নিশ্চয়ই এখন ভেবে দেখার বিষয়। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭