ইনসাইড হেলথ

কবে থামবে করোনা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/03/2020


Thumbnail

সারা বিশ্বে এখন কোটি টাকার প্রশ্ন হলো- করোনা মহামারী থামবে কবে? এই মহামারীতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। পৃথিবীর মানুষ একটা অচলায়তনের মধ্যে চলে গেছে। যিনি অসুস্থ তিনি তো ভুগছেনই, যিনি সুস্থ তিনিও একটা দমবন্ধ করা অবস্থা পার করছেন। লকডাউনের মধ্যে অনেকটা মৃতপ্রায় জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে সবাই। এমন পরিস্থিতিতে সবার একটাই প্রশ্ন- আর কতদিন চলবে করোনার তাণ্ডব?

নোবেলজয়ী রসায়নবিদ মাইকেল লেভিট আশার বানী শুনিয়েছেন। তিনি বলেছেন, করোনার তাণ্ডব এখন শেষ পর্যায়ে। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইউরোপ আমেরিকাতেও কমতে শুরু করবে করোনার দাপট।

লেভিটের ভবিষ্যদ্বাণী হালকাভাবে নেওয়াটা অযৌক্তিক। কারণ চীনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, সেটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে। তাই করোনা আর বেশিদিন নেই, তার এমন কথায় ভরসা করাই যায়। কিন্তু এখানে আবার এসে বাগড়া দিচ্ছে বেশকিছু গবেষণা প্রতিবেদন এবং জার্নাল। অনেক গবেষণা পত্রেই বলা হচ্ছে, করোনা দীর্ঘমেয়াদী হবে। 

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও বলছেন, করোনা এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে না। বছর ঘুরে একই সময়ে আবার এটা ফিরে আসবে।

বিজ্ঞানী, গবেষক, চিকিৎসকরা এমন নানা কথা বলছেন। কিন্তু বিশ্ববাসী নানারকম তত্ত্বকথা নয়, বরং একটা নির্ভরযোগ্য উত্তর জানতে চায়। সেই উত্তরটা হলো কোনো মহামারীই রাতারাতি নিঃশেষ হয়ে যায় না। স্প্যানিশ ফ্লু, টাইফয়েড, কলেরা, গুটি বসন্ত- এরকম বহু মহামারীর কথা আমরা শুনেছি। এগুলোর কোনোটাই দু’এক মাসে বিদায় নেয়নি। করোনার ক্ষেত্রেও তেমনটি হওয়ার কোনো কারণ নেই।

চীন অবশ্য একটা আশার আলো দেখিয়েছে। তিন মাসের মধ্যে করোনাকে কুপোকাত করেছে তারা। ডিসেম্বরের শেষ দেকে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। তিন মাস যুদ্ধ করে মার্চের শেষে এসে করোনাকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে চীনারা। এই হিসেবটা যদি আমরা ধরি তাহলে বলা যেতে পারে যে, মে- জুনের দিকে আমেরিকা-ইউরোপে হার মানবে করোনা।

আমেরিকা-ইউরোপ না হয় তিন মাস বাদে করোনামুক্ত হবে। কিন্তু বাকি বিশ্বের কী হবে? এর উত্তরে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া কিছু তথ্য ভয়টা একটু হলেও বাড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষকদের একটা অংশ বলেছেন, করোনা ঠান্ডায় শক্তিশালী হয়। আর বেশি তাপমাত্রায় দুর্বল হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে জুন- জুলাই থেকে অনেক দেশেই শীত পড়তে শুরু করে। অর্থাৎ তখন আবারও সেই দেশগুলোতে জাকিয়ে বসতে পারে করোনা। আর আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় নভেম্বরের থেকে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ওই সময়টায় এই অঞ্চলেও বাড়তে পারে করোনার প্রকোপ।

তবে দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের খুব বেশি ভয়ের কারণ নেই বলে মনে করছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একটি গবেষক দল। তারা তথ্য উপাত্ত হাজির করে দেখিয়েছে যে, করোনায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই হলো শীতপ্রধান এলাকাগুলোর বাসিন্দা। যেখানে তাপমাত্রা ৩ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সেখানেই করোনায় আক্রান্ত বেশি। অন্যদিকে উষ্ণ অঞ্চলগুলোতে করোনায় আক্রান্ত মাত্র ১০ শতাংশ। এই গবেষণা প্রতিবেদন আমাদের আশাবাদী করতেই পারে। তবে চূড়ান্ত স্বস্তি দেওয়ার মতো কোনো কথা নয়। কারণ একটা অঞ্চলে মানুষ একের পর এক প্রাণ হারাবে আর অন্য অঞ্চলে শান্তি বিরাজ করবে সেটা কখনোই হতে পারে না। তাই আমাদের সবারই প্রত্যাশা হলো মহামারীমুক্ত পৃথিবী। সেটাই কবে দেখবে বিশ্ববাসী? কবে ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে মানুষ বুক ভরে নির্মল বাতাস নিতে পারবে? এর উত্তর দিয়েছেন, এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিষয়ক অধ্যাপক মার্ক উলহাউজ। তিনি বলেছেন, তিনটি কাজ হয়ে গেলেই এটা সম্ভব। এগুলো হলো- ১. ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কার। ২. বহু মানুষের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের ফলে তাদের মধ্যে করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠা। অথবা, ৩. স্থায়ীভাবে মানুষ এবং সমাজের আচার-আচরণে পরিবর্তন নিয়ে আসা।

এগুলো কোনোটাই যে বছরখানেকের আগে হচ্ছে না, তা নিশ্চিতভাবেই বলে দেওয়া যায়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনসহ সরকারি বেসরকারি অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যক্তির দেহে পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়াও হয়েছে। তবে এর ফলাফল এখনও জানা যায়নি। ফলাফল যদি ইতিবাচকও হয়, চূড়ান্তভাবে সেটা বাজারে আসতে লেগে যেতে পারে এক থেকে দেড় বছর। ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসলেও মানুষ অসুস্থ হবে না। যত বেশি সংখ্যক মানুষকে টিকা দেয়া যাবে ততই ভালো। যদি মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশকে টিকা দেয়া হয়, তাহলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে না। গুটিবসন্তসহ বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধীর ক্ষেত্রে আমরা যেমনটি দেখেছি যে, সেগুলো আস্তে আস্তে শক্তি হারিয়েছে। তবে সেখানে সময় লেগেছে। করোনা দৈত্যকেও চূড়ান্তভাবে বোতলবন্দি করতে অন্তত বছরখানেক সময় লেগে যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হবে, যতদিন পর্যন্ত এর সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রটোকল আবিষ্কার না হবে, ততদিন এই দমবন্ধ করা অবস্থা থেকে মানবজাতির মুক্তি নেই। এর আগে হয়তো আবহাওয়া, তাপমাত্রা বা অন্য কোনোভাবে করোনার মহামারী আকার কিছুটা কমে যাবে, কিন্তু বিশ্বে যে আতঙ্ক তৈরি করেছে, এবং এটা ফিরে আসার যে শঙ্কা, তা দূর হবে না।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭