ইনসাইড হেলথ

জ্বর-শ্বাসকষ্টে মৃত্যু বাড়ছে কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/04/2020


Thumbnail

বাংলাদেশের গণমাধ্যম জুড়ে এখন শুধুই করোনা সংক্রমণের খবর। শুধু বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নয়, সারাবিশ্বের করোনা মহামারির খবর নিয়ে ব্যতিব্যস্ত বাংলাদেশের মূল ধারার গণমাধ্যমগুলো। আর করোনা সংবাদের পাশাপাশি একটি খবর খুব গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বর-শ্বাসকষ্টে মানুষ মারা যাচ্ছে এবং তাঁদের খবরগুলো ফলাও করে প্রচার করছে মূলধারার গণমাধ্যম। আর এই ধরণের জ্বর-শ্বাসকষ্টের মৃত্যুর খবরগুলো নিয়ে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন এবং আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন যে, এরা বোধ হয় আসলেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে, এদের চিকিৎসা হচ্ছেনা, রক্ত পরীক্ষা হচ্ছেনা এবং যে কারণে আসলে প্রকৃত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আমরা জানতে পারছি না। সমালোচকরা এটাও মনে করছেন যে, সীমিত আকারে পরীক্ষার কারণে সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঠিক কত সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী আছে- সে বিষয়ে আমরা সঠিক তথ্য পাচ্ছিনা। আসলে কি ব্যাপারটা তাই? নাকি অন্যকিছু?

বাংলাদেশের গণমাধ্যম সবসময়ই যখন যে ইস্যু হয়, সেই ইস্যু নিয়ে তোলপাড় করে। ইস্যুটি যখন মিইয়ে যায়, তখন সেটা ফলো আপ করার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা নিয়েই আমাদের গণমাধ্যমগুলো নানা রকম তথ্য প্রচার করছে, যেটা অবশ্যই দরকারি এবং জনগণকে অবশ্যই সঠিক সংবাদটি জানাতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, বাংলাদেশে জ্বর-শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি বা নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর নজির কি এটাই প্রথম? আগে কি কখনো এইসব উপসর্গে মানুষ মারা যায়নি? নাকি এখনো করোনার কারণে এসব মৃত্যুগুলো ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছে? ফলাও করে প্রকাশের ক্ষেত্রে কি আমরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছি? বাংলাদেশের পরিসংখ্যান এবং আমাদের বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর হার থেকে দেখা যা যে, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানির কারণে প্রতি বছর একটি বিপুল জনগোষ্ঠী মারা যায় এবং মৃত্যুর দিক থেকে এটা বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম রোগ, যেখানে শ্বাসকষ্ট-হাঁপানিতে মানুষ মারা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, অন্য সময় হলে সাধারণ একটি মৃত্যুর খবর কখনোই গণমাধ্যমে আসে না বা আসতো না। কারণ একটি মানুষ যদি হৃদরোগ, ক্যান্সার বা কিডনি ফেইলরের কারণে মারা যায়- তাহলে সেটা গণমাধ্যমের খবর নয়। এখন যখন করোণার সংক্রমণ হয়েছে আর যেহেতু করোনার উপসর্গের মধ্যে আছে হাঁচি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং নিউমোনিয়া। কাজেই আমাদের মূলধারার তথাকথিত দায়িত্বশীল গণমাধ্যম কি এই খবরগুলো দ্বারা মানুষকে প্রচ্ছন্নভাবে বার্তা দিতে চাইছে যে আসলে তাঁরা করোনা রোগী? 

যতক্ষণ পর্যন্ত একজন রোগীর মৃত্যুর পর রক্ত পরীক্ষা করে জানা যাবে যে, তিনি করোনায় আক্রান্ত ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানিজনিত মৃত্যুকে আমরা করোনা আক্রান্তে মৃত্যু বলতে পারি? এই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ আইইডিসিআর-এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন যে, যারা আইসোলেশনে বা সন্দেহজনক কারণে মৃত্যুবরণ করছেন, তাঁদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং এই রক্ত পরীক্ষায় তাঁরা পজিটিভ যদি না থাকেন তাহলে সেটিও তাঁরা জানিয়ে দিচ্ছেন। আইইডিসিআর-এর গবেষক জানিয়েছেন যে, করোনা পরিস্থিতিটা বিশ্ব মহামারিতে রূপ নেয়ার কারণে পুরো ব্যবস্থাটাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মনিটরিং করা হচ্ছে। কাজেই এখানে তথ্য গোপন করা বা করোনা আক্রান্তের তথ্য গোপন করার কোন সুযোগ নেই। কাজেই যারাই সন্দেহভাজন করোনা রোগী হিসেবে মারা যাচ্ছেন, তাঁদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং এই পরীক্ষার ফলাফল প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছে এবং সার্বক্ষণিকভাবে এই বিষয়টি নজরদারির ভেতর আছে। কাজেই করোনায় মৃত্যু নিয়ে লুকোচুরির বা বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। 

তবে বিষয়টি হচ্ছে আগে যে বিষয়গুলো গণমাধ্যমের কাছে ছিল উপেক্ষিত এবং সাধারণ মৃত্যুগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, এখন সেই খবরগুলোই এখন পাঠকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ যেন চিকিৎসকদের মতো। চিকিৎসকরা এখন জ্বর-কাশির উপসর্গ দেখলেই দশ হাত লাফিয়ে উঠছেন, চিকিৎসা দিচ্ছেন না। ঠান্ডা, সর্দি-কাশির কারণে কোন হৃদরোগী চিকিৎসার জন্য গেলেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না। আমাদের গণমাধ্যমও সেই পথে হাঁটছে, জ্বর-কাশি-হাপানি থাকলেই তিনি করোনা রোগী- এমন বার্তা দেয়া কি দায়িত্বশীলতা? আমাদের মূলধারার গণমাধ্যম কি সেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারছে? 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭