ইনসাইড হেলথ

৫ কারণে করোনা মহামারী হচ্ছেনা বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/04/2020


Thumbnail

আজ বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা হয়েছে। ৫১৩ জনের উপর চালানো এই পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৫ জনের। বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ এবং আজ ২৬ তম দিনে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ৬১ জনে পৌঁছেছে। 

বিশ্বে যে সমস্ত দেশগুলোতে করোনা মহামারি আকার ধারণ করেছে, সেই সমস্ত দেশগুলোতে পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১৪ থেকে ২১ দিন সময়ের মধ্যে করোনা মহামারির প্রকোপ স্পষ্ট হয়েছিল। চীনে ৩১শে ডিসেম্বর প্রথম করোনা শনাক্তের পর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে করোনা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে এবং তখন এটার জন্য সর্বোচ্চ অবস্থা জারি করেছিল। ইতালিতে ১৯ তম দিনে করোনার মহামারি স্পষ্ট হয়, স্পেনে ২৩ তম দিনে এই করোনার তাণ্ডব শুরু হয়। ইরানে আরো আগে, ১২ তম দিনে করোনার মহামারি রূপের মুখোমুখি হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে অবশ্য একটু বিলম্বে হয়েছিল, তাঁরা ২৪ তম দিনের মাথায় পরিস্থিতি মহামারি আকার ধারণ করেছিল বলে স্বীকার করে। সেই হিসেব করলে বাংলাদেশ তাঁর বিপদকালীন সময় পার করে ফেলেছে বলেই ধারণা করছেন চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা। 

তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হলো, এই ২৬ দিনে যে পরিমাণ পরীক্ষা হবার কথা ছিল, সেই পরিমাণ পরীক্ষা হয়নি। কাজেই আমরা প্রকৃত চিত্রটা হয়তো জানিনা। কিন্তু তারপরেও যেটুকু পরীক্ষা হচ্ছে, সেই পরীক্ষার মাধ্যমে একটি প্রাথমিক ধারণা করা যেতে পারে যে, করোনা মহামারির শঙ্কা থেকে বাংলাদেশ সম্ভবত বেরিয়ে এসেছে।

তাঁর প্রথম কারণ হলো- দুই হাজার পরীক্ষায় মাত্র ৬১ জন শনাক্ত হয়েছে এবং যে দেশগুলোতে করোনা মহামারি হয়েছে সেই দেশগুলোর হিসেব পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে যে, দুই হাজার পরীক্ষায় কোথাও ৭০০ জন, কোথাও ৬০০ জন, এমনকি কোথাও ৯০০ জনের করোনা ধরা পড়েছিল। অর্থাৎ পরীক্ষা থেকে করোনা শনাক্তের হার ছিল পঞ্চাশ থেকে সত্তর ভাগের কাছাকাছি। সেই তুলনায় বাংলাদেশে দুই হাজার পরীক্ষায় ৬১ জন শনাক্ত হওয়াটা বাংলাদেশ যে মহামারির দিকে যাচ্ছে এমন ইঙ্গিত বহন করেনা।

দ্বিতীয়ত, যেটা আশার কারণ। যে কারণে মনে করা হচ্ছে বাংলাদেশে করোনা মহামারি আকার ধারণ করছে না বা মহামারির শঙ্কা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে তা হলো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরত যাবার হার। ৬১ জনের মধ্যে ৬ জন মারা গেছে এবং ২৬ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং অন্যান্য দেশে এই হার পর্যালোচনা করি তাহলে সেখানেও আশা জাগানিয়া তথ্য পেতে পারি। পৃথিবীর কোন দেশে এত দ্রুত এবং এত ব্যাপক হারে বাড়ি ফেরার হার দেখা যায়নি। এখানেও বলে রাখা ভালো, আমদের সীমিত আকারে যেহেতু পরীক্ষা হয়েছে, সেহেতু এই তথ্য-উপাত্তগুলো থেকে উপসংহার করার মতো বা সিদ্ধান্ত নেবার মতো যথেষ্ট তথ্য আমাদের হাতে নেই। কিন্তু একটা ধারণা এবং পর্যবেক্ষণ এখান থেকে আমরা করতেই পারি।

তৃতীয়ত, এখন পর্যন্ত যেটা দেখা যাচ্ছে যে, মৃদু সংক্রমণের হার বেশি এবং যেহেতু সীমিত আকারে পরীক্ষা হচ্ছে, সেহেতু অনেক স্থানেই হয়তো অনেকে সংক্রমিত হয়েছেন। হয়তো ঠান্ডা-জ্বর, সর্দি কিংবা শ্বাসকষ্টের উপসর্গ দেখা দিয়েছে এবং হয়তো বাড়িতেই বিশ্রাম নিয়ে বা নির্দেশনা অনুযায়ী দেয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চিকিৎসা করে মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। যার কারণে আমাদের দেশে মৃদু সংক্রমণের হার বেশি হওয়ার কারণে এটা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এখন অনেক কমে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চতুর্থত, ২৬শে মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তারপরেও চলাফেরা কমেনি। অনেক স্থানে মানুষ বেরিয়ে পড়ছে, কথা বলছে। কিন্তু স্বাস্থ্য সচেতনতাগুলো মানুষ মানছে- এটা প্রমাণিত হয়েছে। কারণ বারবার হাত ধোঁয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, লেবু বা ভিটামিন সি খাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো- ইত্যাদি স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানার কারণে আমাদের দেশে করোনার যে ব্যাপক বিস্তৃতি হওয়ার কথা ছিল, সেই ব্যাপক বিস্তৃতি হয়নি বলে অনেকে মনে করেন।

আর সর্বশেষ হলো, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের সমন্বিত পদক্ষেপ। শুরু থেকেই রোগটা যেন সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য সমন্বিতভাবে সরকার একের পর এক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। গণজমায়েত, সমাবেশ স্কুল-কলেজগুলো বন্ধ করা হয়েছে, এই পদক্ষেপগুলো সামাজিক সংক্রমণ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। 

২৬ শে মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময় চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন যে আগামী দুই সপ্তাহ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের সময় এবং এই দুই সপ্তাহটা চ্যালেঞ্জিং। এখন আমরা দুই সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছি এবং কোন বড় ধরণের দুর্ঘটনা না ঘটলে হয়তো আমরা করোনার মহামারি থেকে পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছি।  

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭