ইনসাইড গ্রাউন্ড

মিরপুর স্টেডিয়ামের যত অক্রিকেটীয় ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/04/2020


Thumbnail

১৯৮০ সালের দিকে নির্মিত হওয়া আজকের শের এ বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম বা মিরপুর স্টেডিয়াম। ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে পরিচিত হোম অব ক্রিকেট নামে। টাইগারদের জয়-পরাজয়ের অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত এই স্টেডিয়ামে ক্রিকেটের ইতিহাসটা খুব কমই। শের এ বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যকার ওয়ানডে ম্যাচের মধ্য দিয়ে।

তবে ক্রিকেটের তুলনায় ফুটবলে কয়েকগুণ বেশি সমৃদ্ধ আজকের মিরপুর স্টেডিয়াম। আবাহনী-মোহামেডানের সেই কালজয়ী দ্বৈরথ কিংবা দেশের ফুটবলের সোনালী অতীতের সাক্ষী এই মাঠ। টাইগাররা টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিয়মিত ফুটবল-অ্যাথলেটিকস আয়োজিত হতো শের এ বাংলা স্টেডিয়ামে। আজকের ‘হোম অব ক্রিকেট’ নিয়ে অক্রিকেটীয় এবং অজানা কিছু ইতিহাস নিয়েই আজকের প্রতিবেদন-

ইতিহাস দিয়ে শুরু

১৯৮৮ সালে মিরপুর স্টেডিয়ামে প্রথম অনুষ্ঠিত হয়েছিল অষ্টম এশিয়ান ক্লাব কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের খেলা। মাঠটি তখন আনকোরা, ফ্লাডলাইট টাওয়ার বসলেও সেটি কার্যকর ছিল না। এশিয়ান ক্লাব কাপে (এখনকার এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ) বাংলাদেশের লিগ শিরোপাধারী দল মোহামেডান খেলেছিল শ্রীলঙ্কার স্যান্ডার্স ক্লাব ও ইরানের পিরুজি ক্লাবের বিপক্ষে।

স্যান্ডার্সের সঙ্গে ড্র করলেও মোহামেডান সেবার ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল পিরুজিকে। ইরানের ক্লাবটি তখন এশিয়ার অন্যতম সেরা ও শক্তিধর। পিরুজিকে হারিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামের শুরুর ইতিহাসটা দারুণভাবে রাঙিয়েছিল মোহামেডান।

প্রথম আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ

২০০৪ পর্যন্ত মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আবাহনী-মোহামেডানের অনেক ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে প্রথম ম্যাচটা ছিল ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে, ফেডারেশন কাপের ফাইনাল। প্রথম আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে দর্শক সমাগম নিয়ে সংশয় ছিল সবার মধ্যে। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে সেদিন মিরপুর স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় ভরা। ফখরুল ইসলাম কামালের (এফআই কামাল) গোলে সে ম্যাচে মোহামেডানকে হারায় আবাহনী।

ফুটবল ম্যাচে প্রাণহানি

আশির দশকে মিরপুর এলাকা মূল ঢাকা থেকে একটু বিচ্ছিন্নই ছিল। এমন অবস্থা ছিল নব্বই দশকের শুরু দিকেও। মিরপুরে লিগের অনেক ম্যাচে গোলযোগ হয়েছে—এমন ঘটনা আছে। কোনো এক রহস্যজনক কারণে মোহামেডানের সমর্থকেরা মিরপুরে আসতে পছন্দ করতেন না। এর মূল কারণ অনেকেই বলেন মিরপুরের অধিবাসীদের মধ্যে আবাহনী সমর্থকদের আধিক্য। এমনকি মিরপুরের অবাঙালি অধিবাসীরাও আবাহনীকে সমর্থন করতেন। আজকের পাঠকদের কাছে ব্যাপারগুলো রূপকথার মতো মনে হলেও এগুলো সবই সত্যি। এ মাঠে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ মানেই হলো মাঠের বাইরেও দুই দলের সমর্থকদের লড়াই। বড় অঘটনটা ঘটে যায় ১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উচ্ছৃঙ্খল দর্শকদের ছুরির আঘাতে নিহত হয়েছিলেন এক তরুণ।

সবুজ দলের ভারত-বধ, লাল দলের শিরোপা

১৯৮৯ সালে হলো প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ। জমজমাট টুর্নামেন্টে ভারতের জাতীয় দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছিল তরুণ ও উঠতি ফুটবলারদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশ সবুজ দল। অলোক মুখোপাধ্যায়-বিকাশ পাঁজি-কৃষাণু দে-সুদীপ চট্টোপাধ্যায়দের ভারতীয় দল তখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। বাংলাদেশ সবুজ দল ভারতকে হারিয়েই থেমে যায়নি, হারিয়ে দেয় সে সময়ে এশিয়ার অন্যতম সেরা ক্লাব চীনের লিয়াওলিং এফসিকেও।

তবে বাজিমাতটা করে জাতীয় ফুটবল দলের মোড়কে বাংলাদেশ লাল দল। থাইল্যান্ড ও ইরান অনূর্ধ্ব-২৩ দলের সঙ্গে ড্র করে সেমিতে সবুজ দলকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে তাঁরা টাইব্রেকারে হারিয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় দলকে। কোরিয়ার দলটির নাম ‘বিশ্ববিদ্যাল দল’ হলেও সেটি ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সেরা উঠতি ফুটবলারদের নিয়ে গড়া। স্বাধীনতার পর ওটাই ছিল কোনো আমন্ত্রণমূলক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রথম শিরোপা জয়।

দ্রুততম মানব বিমল

১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সাফ গেমসে ফুটবল ও অ্যাথলেটিকসের ভেন্যু ছিল মিরপুর স্টেডিয়াম। গেমসের আগে এখানে বসে অ্যাথলেটিকস ট্র্যাক। সেবার সাফে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে রেকর্ড গড়ে সোনা জেতেন বাংলাদেশের স্প্রিন্টার বিমল চন্দ্র তরফদার। মিরপুরের মাঠে এটি স্মরণীয় এক স্মৃতি হয়েই আছে এখনো।

ঈদের দিন ম্যাচ

এ মাঠে ফুটবলের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি ছিল ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ ও তাজিকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি ফিফার দেওয়া যে তারিখে হয়েছিল, সেদিন ছিল ঈদুল ফিতর। ফিফার সময়সূচি তো মানতেই হবে। অগত্যা ঈদ ভুলে মাঠে নামতে হয়েছিল বাংলাদেশ দলকে।

বাংলা ইনসাইডার/এসএম



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭