ইনসাইড হেলথ

শেষ ভরসা টিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/04/2020


Thumbnail

করোনাভাইরাস এখন আর শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্যের কোনো ইস্যু নয়। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলছে এই ভাইরাস। করোনার সংক্রমণে কতজন মারা যাবে তার থেকেও বড় প্রশ্ন এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, লক ডাউনের বোঝা বইতে গিয়ে কত মানুষ নিঃস্ব হবে?

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে করোনা দুর্ভিক্ষ ডেকে আনবে, এমন শঙ্কাও জাগতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনার এই শঙ্কা, করোনার এই আতঙ্ক দূর করতে দরকার ভ্যাকসিন বা টিকা। বহু আরাধ্য সেই ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কার করতে এখন কাজ করছে বিশ্বের অন্তত ৭টি দেশ। এর মধ্যে তিনটি দেশের গবেষক দল আবার টিকা আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। সবচেয়ে মজার কথা হলো, করোনার ভয়াবহতা গবেষকদের চরিত্র আমূল বদলে দিয়েছে।

গবেষকরা নিজেরাই স্বীকার করেন যে, তাদের মধ্যে গবেষণালব্ধ তথ্য বা আবিষ্কার লুকানোর বা চেপে যাওয়ার একটা প্রবণতা থাকে। অর্থাৎ কোনো কিছু আবিষ্কারের একেবারের শেষে গিয়ে তারা সেটা প্রকাশ করেন। না হলে একজনের কৃতিত্ব অন্যজনের দখলে চলে যাওয়ায় ভয় থাকে। কিন্তু করোনার টিকা আবিষ্কারের গবেষকদের এই প্রবণতাটাই পুরোপুরি বদলে গেছে। কৃতিত্বের লোভে গবেষকদের কেউই তথ্য নিয়ে কোনো ধরনের লুকোচুরি করছেন না বলে জানা গেছে। কে কোন দেশের, কে কোন প্রতিষ্ঠানের এসব বাছ বিচার না করে উন্মুক্তভাবে তথ্য দিয়ে গবেষকরা একে অন্যকে সাহায্য করছেন। অর্থাৎ করোনাকে হারাতে এক হয়ে কাজ করছেন গবেষকরা।

এই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ফলে ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আবিষ্কার হতে যাচ্ছে করোনার ভ্যাকসিন। প্রথম ধাপের পরীক্ষা পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি টিকা মানুষে ব্যবহার করে দেখা হচ্ছে। একটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে, একটি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে এবং অন্যটি চীনের উহানে। করোনা ভাইরাস যতটা দ্রুত ছড়ায়, এর টিকাও আবিষ্কার হচ্ছে ঠিক ততটাই দ্রুতগতিতে।

কোনো কোনো টিকা মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে প্রায় ১০০ বছর লেগেছে। কিন্তু কোভিড–১৯–এর টিকা ১২-১৮ মাসের মধ্যে মানুষ পেয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি সেটা হয়, তাহলে তা হবে দ্রুততম সময়ে পাওয়া কোনো টিকা।

বেশ কিছু স্তর পার হয়ে একটি টিকা মানুষের ব্যবহার উপযোগী হয়। প্রথম স্তরে টিকা তৈরি হয় ল্যাবরেটরিতে। এরপর তা ইঁদুর, গিনিপিগ, বানর, শিম্পাঞ্জি বা অন্য প্রাণীতে ব্যবহার করে দেখা হয় তার বিষক্রিয়া দেখা দেয় কি না। এই স্তরকে বলে প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। এরপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়। এই স্তরে টিকা মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হয়। দেখা হয়, এটা কতটা কার্যকর, এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি না।

প্রথম ধাপে (ফেজ–১) অল্প সংখ্যক মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে (ফেজ–২) মানুষের সংখ্যা বাড়ানো হয়। তৃতীয় ধাপে (ফেজ–৩) র‌্যান্ডোমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল করা হয়। অর্থাৎ কিছু সংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া হবে এবং সমান সংখ্যক মানুষকে ‘ছদ্ম টিকা’ দেওয়া হবে। তারপর ফলাফল বিশ্লেষণ করা হবে।

সিয়াটল, অক্সফোর্ড ও উহানের টিকাগুলো বিভিন্ন পশুর দেহে প্রয়োগের ধাপ শেষ হয়েছে। এখন সেটা মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ৬৫০ জন সুস্থ মানুষকে এই ট্রায়ালে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১১টি টিকা প্রিক্লিনিক্যাল স্তরে আছে। এর বাইরে আরও ৩৩টির ওপর গবেষণা চলছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিকার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ৫০-৬০ শতাংশ মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ (হার্ড ইমিউনিটি) ক্ষমতা গড়ে তোলা সম্ভব হলে ভাইরাসকে প্রতিহত করা গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কারণ ৫০-৬০ শতাংশের মধ্যে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে উঠলে ভাইরাসটি অনেকাংশে দুর্বল হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে ওই জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশ মানুষকে নির্দিষ্ট সংক্রমণ থেকে নিরাপদে রাখা যায়।

গবেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডে এবং চীনের উহানে যে তিনটি টিকার কাজ চলছে সেগুলো হলো নিউক্লিক অ্যাসিড ভ্যাকসিন। এমন টিকার সুবিধা হচ্ছে এটি দ্রুত ও একই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তৈরি করা যাবে। এর ফলে খুব দ্রুতই সেটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। আর তখনই করোনা হার মানবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭