ইনসাইড হেলথ

যেভাবে মহামারি ঠেকাতে পারে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/04/2020


Thumbnail

ভারত এবং পাকিস্তান যে সুযোগটি হাতছাড়া করেছে, বাংলাদেশের সামনে সেই সুযোগটি এখনো রয়েছে। ভারতে ইতিমধ্যে করোনা মহামারি আকার ধারণ করা শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার পররবর্তী মৃত্যুপুরি হতে পারে ভারত। আর সেই বিবেচনায় বাংলাদেশও ঝুঁকির মাঝে আছে এবং বাংলাদেশেও করোনা মহামারির শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন এবং দায়িত্বশীল হই, তাহলে এই মহামারি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো। যে সীমিত সংক্রমণ, সেই সীমিত সংক্রমণের মাঝেই কোভিড-১৯ কে আটকাতে পারবো। বাংলাদেশে মহামারি ঠেকাতে কি করতে হবে? একাধিক বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, বাংলাদেশের এখনো সুযোগ রয়েছে এবং মহামারি ঠেকাতে বাংলাদেশকে ৫টি কাজ করতে হবে।

মসজিদসহ গণজমায়েতের স্থানগুলো আগামী ৭ দিন বন্ধ রাখা

বাংলাদেশে এখনো সাধারণ ছুটি চলছে এবং আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত এই ছুটি কার্যকর থাকবে। কিন্তু এই সাধারণ ছুটির মাঝেও মসজিদগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না, বরং জুম্মার নামাজসহ অন্যান্য নামাযেও মুসল্লিরা সেখানে ভিড় করছেন। আমরা যদি ভারত-পাকিস্তানের উদাহরণ দেখি, ভারতে তাবলীগ জামায়াত থেকে এবং পাকিস্তানে এখনো মসজিদগুলোর গণজমায়েত বন্ধ না করতে পারার ব্যর্থতায় সেখানে এখন লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশের জন্য এখনো সুযোগ রয়েছে। মসজিদসহ গণজমায়েতের বিভিন্ন স্থান যেমন- ভিড় করে ত্রাণ দেয়া, বিভিন্ন শ্রমিকদের কাজ করা, বাজার-হাটসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষ মিলিত হচ্ছে তা অবিলম্বে আগামী ৭ দিনের জন্য অন্তত বন্ধ করে দেয়া।

আগামী ৭ দিন কঠোরভাবে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বজায় রাখা

সরকার সামাজিক বিচ্ছিন্নতার জন্য ইতিমধ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। তারপরেও দেখা যাচ্ছে যে, মানুষ নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হচ্ছে। বিশেষ করেঢাকার অলিতে-গলিতে, ঢাকার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষদের জমায়েত, আড্ডা ইত্যাদি এখনো চোখে পড়ছে। করোনা মহামারি ঠেকাতে অন্তত আগামী ৭ দিন সামাজিক বিছিন্নতা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। কারণ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী ৭ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ৭ দিনেই নির্ধারিত হবে বাংলাদেশ কোন পথে যাবে।

করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা বেগবান করা

আশার কথা হচ্ছে, যেখানে আগে প্রতিদিন মাত্র ৩০/৪০ জনের রক্ত পরীক্ষ হতো এবং সেই পরীক্ষা ছিল শুধুমাত্র ঢাকাকেন্দ্রীক, গত দুই দিনে সেই ব্যাপ্তি বেড়েছে। গত পরশু ৫১৩ জনের রক্ত পরীক্ষা হবার পরে আজ ৫৫৩ জনের রক্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার প্রকোপ কমানো যেতে পারে দুইভাবে। প্রথমত সারা দেশে যারা বিদেশফেরত বা সন্দেহভাজন রয়েছে- তাঁদের পরীক্ষা করা যেমন জরুরী, তেমনিভাবে সারাদেশে দৈবচয়নের ভিত্তিতে পরীক্ষা করাটাও জরুরী। কারণ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাঁচশ নয় প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার পরীক্ষা করা এখন প্রয়োজন এবং যত বেশি পরীক্ষা হবে, তত বেশি প্রকৃত অবস্থা আমরা বুঝতে পারবো এবং তত আমরা মহামারি ঠেকানোর জন্য কাজ করতে পারবো।

কোভিড-১৯ পজিটিভদের আলাদা করা

আমরা জেনেছি যে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭০ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ রয়েছেন। এই কোভিড-১৯ এ যারা আছেন তাঁদের একটি বড় অংশ এখনো বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা জানি যে, আমাদের সামাজিক ব্যবস্থাপনা এমনই যে, বাড়িতে থেকে কেউ বিচ্ছিন্ন থাকতে পারেনা এবং আমাদের সামাজিক বন্ধন এতটাই দৃঢ় যে বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে তাঁর স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন কিংবা বাবা-মা আক্রান্তের সেবা করবেই এবং এটার ফলে সামাজিক সংক্রমণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। একারণে যাদের করোনা শনাক্ত হবে তাঁদেরকে খুব দ্রুতই হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, বাড়িতে চিকিৎসার পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

অফিস আদালত খুললেও সতর্কতা অব্যহত রাখা

আগামী ৭ দিন পর ১১ এপ্রিল সরকার যদি মনে করেচন অফিস-আদালত খোলা সম্ভব, তারপরেও গণজমায়েত-সমাবেশসহ নানা ধরণের কার্যক্রমকে আপাতত বন্ধ রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং যত রকমভাবে ভিড় এড়ানো যায়, সেই ভিড় এড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে হবে অত্যন্ত ধীরে ধীরে এবং সতর্কতার সাথে এবং সেটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে আমরা হয়তো করোনার মহামারি ঠেকাতে পারবো এবং বাংলাদেশের সামনে সেই সুযোগ এখনো রয়েছে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭