ইনসাইড আর্টিকেল

৮৬তম পর্ব: যেই না মাথার চুল তার আবার লাল ফিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/04/2020


Thumbnail

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ এর ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে সরকার। এই মহামানবের বেড়ে ওঠা, রাজনীতি এবং বাঙালির জাতির পিতা হয়ে ওঠার যে গল্প তা তিনি নিজেই তার বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতি, স্মৃতিচারনা এবং ডায়রিতে লিখে গেছেন। সেখান থেকে সংগ্রহ করে মুজিববর্ষে বাংলা ইনসাইডারের এই বিনম্র নিবেদন:

৯ ই জুন ১৯৬৬, বৃহস্পতিবার

ভোর বেলা বাহির হয়েই চোখে পড়লো পুরানা বিশে যাদের রাখা হয়েছে তারা দরজার ফাঁক দিয়ে আমার দিকে চেয়ে রয়েছে। আমি আসতে আসতে ওদের দিকে এগিয়ে গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম ওদের অবস্থা। বলল, করুণ কাহিনী। রাস্তা থেকে ধরে এনেছে। সারা দিন রাত থানায় একটা ঘরে বন্ধ করে রেখছে। এত লোক থানা হাজতে রেখেছে যে বসতে পর্যন্ত পারে নাই, সেখানেই পায়খানা, প্রসাব করেছে। যখন এঁদের ধরে আনে তখন খুব মারপিট করছে। কয়েকজনের কপালে মারার দাগ আমি দেখলাম।  ছোট ছোট জখম। কয়েকজন কলেজের ছেলেও আছে। এখানে ১২টা সেল ৭২ জন লোককে রেখেছে। এক এক সেলে ৬ জন করে রেখেছে। পরনের কাপড় আর কয়েকজনের গায়ে জামা ছাড়া কিছুই নাই। এই দুই দিন দুই রাত্রে তাদের যা অবস্থা হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা কষ্টকর। আমি পানি দফার লোকদের বললাম ওদের পানি দিতে, গামছা এনে দিতে বললাম। জমাদার সাহেব, মেট, পাহারা, সকলকেই গামছা জোগাড় করে আনতে বললেন। দুই চারজন গোসল করেছে। খবর এল, কেস টেবিলে নিয়ে যেতে। আবার সকলকে বের করে লাইন ধরে ফাইল করে গুনে নিয়ে চললো কেস টেবিলে। স্বাস্থ্য পাশ হবে। নাম ঠিকানা ঠিক করে লিখবে। নাস্তা সেখানেই খাওয়াবে। আমি কেস টেবিলের ডিউটি জমাদারকে খবর দিলাম ওদের খাবার দিতে। কেস টেবিলের সামনে সকলকে ফাইল করে বসান হয়েছে। কাহাকেও উঠতে দেয় না। ওখানেই বসে ওদের খেতে হয়। গোসল-টোসল তো হলোই না। যাদের শাস্তি দিয়েছে তাঁদের কয়েদি কাপড় পরায়ে দিয়েছে। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে দরজা খুললে ওদের অনেককে দেখা যায়। আমি খোঁজখবর নিতে ছিলাম। এমন সময় ডাক্তার সাহেব সেই পথে আসছিলেন। দরজা খুলে গেছে, আমাকে ওরা দেখতে পেয়েছে, প্রায় দুই তিন শত হবে। আর হাত তুলে চিৎকার করে উঠেছে। আমিও ওদের হাত তুলে অভিনন্দন জানালাম। তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ হয়ে গেল, আমি সরে আসলাম; কারণ যদি হৈ চৈ বেশি করে তবে ওদের উপর অত্যাচার হতে পারে। এক জমাদার নাকি ওদের গালাগালি করেছে আর মারধর করেছে। তাকে আমি খবর দিয়ে বললাম, এ কাজ আর করবেন না। সে আমার কাছে কসম করল, আর বললো, আমাদেরও ছেলে মেয়ে আছে স্যার, আমারও মানুষ। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। যাদের ধরে নিয়ে এসেছে এঁরা গরিব, দিন মজুরি না করলে বাঁচতে পারবে না। অনেক রিকশাওয়ালাকে এনেছে, বোধ হয় বাড়িতে তাঁদের ছেলেমেয়ে না খেয়েই আছে। দুই মাসের সাজা দিয়েছে অনেককে। দুপুর হয়ে গেল এই ভাবেই। কাগজ এল, দেখলাম তথাকথিত জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ থেকে বিরোধী দল ওয়াক আউট করেছে প্রতিবাদে। কারণ মুলতবি প্রস্তাব স্পিকার সাহেব উঠাতে দেন নাই। একেই বলে আইন সভা! আর একেই বলে আইন সভার ক্ষমতা! চমৎকার ফার্স। ডিবেটিং ক্লাব বললেও চলে। তাহাও সব ক্ষেত্রে বলা চলে না। আমাদের দেশে একটা কথা আছে, ‘যেই না মাথার চুল তার আবার লাল ফিতা’।সরকার স্বীকার করেছে আরও একজন হাসপাতালে মারা গিয়াছে। এই নিয়ে ১১ জনের মৃত্যু হলো। যারা আহত হয়েছে তাঁদের কোনো সংবাদ নাই আজ পর্যন্ত। প্রশ্ন জাগে, ’১১ জন মারা গেছে না অনেক বেশি মারা গেছে?’

(কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর লিখিত ডায়েরি; ‘কারাগারের রোজনামচা’ থেকে…)

চলবে...

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭