ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৩ লাখ ছাড়ালো, ভারতেও নতুন রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/04/2020


Thumbnail

যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়িয়েছে। বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে করোনা সংক্রমণের এই রেকর্ড গড়লো যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনা পজিটিভ হয়েছেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৩৫৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৮ হাজার ৪৫২ জন। শুধুমাত্র শনিবারই সেখানে মারা গেছে ১ হাজার ৩৩১ জন। অন্যদিকে ভারতেও একদিনে করোনা সংক্রমণের নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৬০১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এক দিনের হিসাবে দেশটিতে এটি সর্বোচ্চ সংক্রমিত সংখ্যা। সব মিলিয়ে গত রাতে প্রতিবেশী দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানে আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৭০০ পেরিয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশে। মোট আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশই সেখানকার বাসিন্দা। জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির হিসাব অনুযায়ী, গতকাল পাকিস্তানে ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ২৭০৮-এ পৌঁছেছে। এর মধ্যে ১০৭২ জনই পাঞ্জাব প্রদেশের।

দেশটির ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রতিবেদন বলছে, পাঞ্জাবের পরই দুরবস্থা সিন্ধু প্রদেশের। সেখানে কভিড-১৯ পজিটিভ ৮৩৯ জন। খাইবার-পাখতুনখোয়াতে সংক্রমিত ৩৪৩, বেলুচিস্তানে ১৭৫, গিলগিট-বালটিস্তানে ১৯৩, ইসলামাবাদে ৭৫ এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ১১ জন। পাকিস্তানে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ আছে। রেল যোগাযোগও বন্ধ। তবে রাস্তাঘাট, দোকান-বাজারে লোকজন অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামাজিক মেলামেশাও বন্ধ হয়নি। ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের হিসাবে গত রাতে  উত্তর কোরিয়া বাদে এ অঞ্চলের বাকি ১০ দেশে মোট সাত হাজার ৫১১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ভারতে ৩০৭২, ইন্দোনেশিয়ায় ২০৯২, থাইল্যান্ডে ২০৬৭, শ্রীলঙ্কায় ১৫৯, বাংলাদেশে ৭০, মিয়ানমারে ২০, মালদ্বীপে ১৯, নেপালে ছয়, ভুটানে পাঁচ ও পূর্ব তিমুরে একজন। এখন পর্যন্ত এ অঞ্চলে মারা গেছে ৩০০ জন। অর্থাৎ মৃত্যুর হার ৩.৯৯ শতাংশ। এ অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায় ১৯১ জন। আর এখন পর্যন্ত মৃত্যুশূন্য আছে মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান ও পূর্ব তিমুর।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত শুক্রবার সকালে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৩০১। গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৯০২। এক সপ্তাহ আগে ২৯ মার্চ এ সংখ্যা ছিল ৯০২। এর পর থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।

করোনা সংক্রমণ এড়াতে বর্তমানে ভারতজুড়ে ২১ দিনের লকডাউন চলছে। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এ অবস্থা। এরপর পরিস্থিতি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে দেশটির সরকার। তবে আশার কথা হলো, আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে সেই সংখ্যা ২১২।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির দেশে পরিণত হয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটিতে প্রথমবারের মতো করোনা শনাক্ত হয় গত ২ মার্চ। এক মাসের মাথায় গতকাল সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ২০৯২ জনে। এর মধ্যে মারা গেছে ১৯১ জন। গত শুক্রবার করোনায় ইন্দোনেশিয়ায় মৃত্যুহার ছিল ৯.১ শতাংশ, একই সময়ে বৈশ্বিক মৃত্যুহার ছিল ৫.২ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়ার পাদজাদজারান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেডিসিনের ফ্যাকাল্টি মেম্বার পানজি ফরচুনা হাদিসোয়েমাত্রো বলেন, ‘করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ে সরকার কয়েক কদম পিছিয়ে আছে দেখতে পাচ্ছি। ল্যাবরেটরি ও পরীক্ষার যন্ত্রপাতির ব্যবস্থায় বিলম্ব এবং কমসংখ্যক পরীক্ষা করা হয়েছে।’ করোনা সংক্রমণের পর চীন থেকে প্রায় পাঁচ লাখ কিট সংগ্রহ করে ইন্দোনেশিয়া। অনলাইন সংবাদমাধ্যম কাটাডাটাডটকমের হিসাব অনুযায়ী, ২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতি দশ লাখের মধ্যে মাত্র ২৫ জনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে এই হার সর্বনিম্ন।

বিশ্বের ২০৬টি দেশ ও অঞ্চল কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ১ হাজার ৭৬৭ জনে। মোট মৃত্যু হয়েছে ৬৪ হাজার ৭১০ জনের। সুস্থ হয়েছে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৪৬৯ জন।

ইতালিতে করোনাভাইরাসে গতকাল শনিবার নতুন করে ৬৮১ জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৬২ জন। কভিড-১৯ মহামারিতে ভয়ংকর ক্ষতিগ্রস্ত দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও এ মহামারি কাটিয়ে ওঠার ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বেসরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থার নতুন পরিসংখ্যানে দৈনিক নিবন্ধিত আক্রান্তদের সংখ্যা ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় যারা পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে তাদের হার ১৭.৩ শতাংশ বেড়ে ১৯ হাজার ৭৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। ইতালির সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকার পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে এমন আভাস মিলেছে। ইতালির উত্তরের লোমবারডিতে আক্রান্তদের সংখ্যা কমছে। সেখানে প্রধান হাসপাতাল কর্মকর্তা গিউলি গ্যাললেরা বলেছেন, আক্রান্তদের সংখ্যা কমছে। আমাদের হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে।

মৃত্যুর মিছিলে এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরই আছে ফ্রান্স। শনিবার সেখানে মারা গেছে ১ হাজার ৫৩ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৭ হাজার ৫৬০ জনে। ইউরোপের আরেক দেশ যুক্তরাজ্যে গতকাল মারা গেছে ৭০৯ জন। এ নিয়ে সেখানে মোট করোনায় মৃত্যু হলো ৪ হাজার ৩১৩ জনের।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭