ইনসাইড পলিটিক্স

প্লিজ প্রধানমন্ত্রী, ব্যর্থ মন্ত্রীদের বরখাস্ত করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/04/2020


Thumbnail

বাংলাদেশ করোনা সংকট ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। করোনা এখন আস্তে আস্তে চোখ রাঙানো শুরু করেছে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে। আজ সর্বশেষ ১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। যদিও মাত্র ৩৬৭ জনের রক্তপরীক্ষা করে এই ১৮ জন রোগী পাওয়া গেছে। মানে বাংলাদেশ করোনার তাণ্ডব শুরু হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

আর এই করোনার তাণ্ডব শুরু হওয়ার পিছনে আমাদের সমন্বয়হীনতা, আমাদের ব্যক্তিপর্যায়ের দায়িত্বহীনতা এবং সরকারের সমন্বয়হীনতা ও কিছু কিছু ব্যর্থতা অবশ্যই দায়ী। এই সংকট মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রয়োজন একটি দক্ষ, কর্মক্ষম, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারঙ্গম একটি টিম। বর্তমানে যে মন্ত্রিসভা বা টিম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন, এই টিমের অনেকেই অযোগ্য,ব্যর্থতা এবং দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন। এখন প্রয়োজন তাদেরকে অপসারণ করে যোগ্যদেরকে সামনে নিয়ে আসা। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন করোনা হলো একটি যুদ্ধের মতো, এই যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে।

এই যুদ্ধজয়ের জন্য প্রয়োজন দক্ষ সৈনিক। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দক্ষতা, দুরদৃষ্টিতা, দিনরাত একাকার করে দিয়ে তিনি যেভাবে পরিশ্রম করছেন, তা নজিরবিহীন এবং অবশ্যই অনুসরণীয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর যারা সহযোদ্ধা, যারা প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন উদ্যোগ এবং পরিকল্পনাগুলোকে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বাস্তবায়ন করবেন তাদের অনেকের যোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা নিয়ে গত একমাসে অসংখ্য প্রশ্ন উঠেছে। আর এই প্রশ্নের কারণে তাদেরকে দিয়ে এখন বাংলাদেশ করোনা মহামারী কীভাবে ঠেকাবে, সেই কথাটা এখন জনমনে উঠছে।

বিশেষ করে আমরা যদি ব্যর্থতার জায়গাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করি তাহলে আমরা দেখবো সবচেয়ে বেশি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি যে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তথাকথিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে গার্মেন্টস খোলা রাখা যেতে পারে বলে যে ‘ফতোয়া’ দিয়েছিলেন, সেই ফতোয়ার কারণে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একজন ব্যক্তির জন্য বাংলাদেশে আজ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে সরকার ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করেছে, সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী আজ রোববার (৫ এপ্রিল) থেকে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত দেন কিসের ভিত্তিতে?

প্রধানমন্ত্রী, আমরা জানি যে আপনি অতি ক্ষমাশীল, আপনি উদার এবং কেউ ব্যর্থ হলেই আপনি তাকে সরিয়ে দেন না। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত কোনো ব্যর্থতা নয়, এটা অমার্জনীয় অপরাধ। এই অমার্জনীয় অপরাধের জন্য তার শাস্তি পাওয়া উচিৎ।

আমরা দেখেছি যে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হলো চীনে, তখন থেকেই আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা। দেশে যখন প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হলো, তখন দেখা গেলো যে বাংলাদেশে করোনার প্রস্তুতি শুধুমাত্র মুখের কথাতেই। এক আইইডিসিআরের শ’খানেক রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা দিয়েই আমরা করোনা মোকাবেলার চেষ্টা করলাম। তারপর ধাপে ধাপে একমাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমরা দেশে ১৪টির মতো ল্যাব প্রস্তুত করতে পেরেছি। আবার সেই ল্যাবগুলোর কার্যক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

এখনো দেশের হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত করার কথা মুখে বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত করোনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতালের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি সেই হাসপাতালগুলোর অনেকগুলোই এখনো প্রস্তুত নয়।

এখানেই শেষ নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা, সেটা সবসময় চোখে পড়ছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরেও করোনা পরীক্ষার সংখ্যা হাজারে নেওয়া যাচ্ছে না। পিপিই নিয়েও চলছে সংকট। বেসরকারি চিকিৎসকরা হাসপাতালেই যাচ্ছে না। এরকম সবকিছুর মধ্যে দেশে করোনা রোগী কতো সেই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে যেন গ্যালারি প্রদর্শনেরই প্রতিযোগীতা চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।

এছাড়াও আরও অনেক মন্ত্রী আছেন যারা করোনা মোকাবেলার জন্য যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন না, করতে পারছেনও না।  প্রধানমন্ত্রী, এখন যুদ্ধের সময়। যুদ্ধে যেমন এমন আপনার প্রকৃত কমান্ডার নিতে হবে, প্রকৃত সৈনিক নিতে হবে, তেমনি এখনই মন্ত্রিসভাকে ঢেলে সাজানো, অযোগ্য ব্যর্থ এবং যারা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য জনগণের জানমালকে জিম্মি করেছেন- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা না হলে এই মহামারীর যে দায়, তা সরকারের ওপরই বর্তাবে নিঃসন্দেহে।

বাংলা ইনসাইডার



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭