ইনসাইড বাংলাদেশ

১৪ দিন সবকিছু বন্ধ থাকলে কি প্রলয় হতো?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/04/2020


Thumbnail

সরকার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যে পদক্ষেপ এবং ব্যবস্থাগুলো নিয়েছে, দৃশ্যত সেই ব্যবস্থাগুলো অচল হয়ে গেছে, সেই ব্যবস্থাগুলো কার্যকর হচ্ছে না। বরং করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার বড় ধরণের আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর বড় বড় রাষ্ট্রগুলো যেখানে লক ডাউন হয়ে গিয়েছিল, অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো কারফিউ জারি করেছিলে সেখানে বাংলাদেশ এই দুটির কোন পথে না যেয়ে গণতান্ত্রিক সহনশীলতা এবং শিষ্টাচারের একটি নজির স্থাপন করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। এই দুই দফায় সাধারণ ছুটির মেয়াদে যদি আমরা সবাই ঘরে থাকতাম,আমরা যদি নিজেদেরকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাখতাম- তাহলে অবশ্যই আমরা করোনা মোকাবেলা করতে পারতাম। কিন্তু দেখা গেছে যে সরকারের সমন্বয়হীনতা এবং নানা ধরণের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশে করোনার ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। আমরা যদি একটু দেখে নেই যে, কি কি ধরণের ভুল সিদ্ধান্ত এবং সমন্বয়হীনতা ঘটেছে-   

প্রথমত, মন্ত্রী পরিষদ ২৪শে মার্চ ঘোষণা করলেন যে ২৬ শে মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি কার্যকর হবে। সাথে সাথেই গণপরিবহনগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু গণপরিবহনগুলো বন্ধ করা হলো ১ দিন পর ২৫ শে মার্চ। ২৪শে মার্চ রাত থেকেই মানুষ গ্রামে চলে যাওয়া শুরু করলো, গণপরিবহনগুলো বাসে, ট্রেনে এবং লঞ্চে উপচে পড়া ভির করোনা সংক্রমণের শঙ্কা তৈরি করলো।

দ্বিতীয়ত, সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর সবকিছু যদি বন্ধ করে দেয়া হতো এবং মানুষের বাইরে না যেতে পারা নিশ্চিত করা যেত তাহলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকতো। কিন্তু দেখা গেল যে, সাধারণ ছুটি একটি বনভোজনের আমেজ সৃষ্টি করে দিয়েছে। লোকজন বাজার-হাট করছেন, একজন আরেকজনের বাসায় যাচ্ছে এবং সাধারণ ছুটির প্রথম ৩ দিন- ২৬, ২৭ এবং ২৮ মার্চ মানুয়াহ মোটামুটি ঘরে থাকলেও ২৯ শে মার্চ থেকে মানুষ আবারও বেরিয়ে যাওয়া শুরু করে। বাজারে-হাটে, অলিতে-গলিতে আবারও মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ফলে যে উদ্দেশ্যে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য ব্যহত হয়।

তৃতীয়ত, গরীব-দুঃস্থদের মাঝে সাহায্য করার যে উদারতা সেই উদারতা বিপর্যয় ডেকে আনে। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তিরা গরীব মানুষদের সাহায্যের নামে লোক জড়ো করেন। এমনকি ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের মেয়র, বিভিন্ন এমপিরাও প্রথম দুই-তিনদিন গরীব অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করেন। এই বিতরণ-ও একটি বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

সবশেষ বাণিজ্য মন্ত্রী বৈঠক করে যে গার্মেন্টস খোলা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, এই সিদ্ধান্তের পরপরই বিভিন্ন কারখানাগুলো খোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ফলে গতকাল মানুষ গ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার একটি প্রাণান্ত চেষ্টায় মেতে ওঠে এবং এর মাধ্যমে যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তা কেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই প্রশ্ন যে, আমরা যদি ১৪ দিন জনস্বাস্থ্য আর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে ঘরে থাকতাম এবং আমাদের ঘরে থাকা বাধ্যতামূলক করা হতো তাহলে এমন কি প্রলয় হতো? এর ফলে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে বাঁচতে পারতাম। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজ অনেকগুলো প্রণোদনা দিয়েছেন এবং তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আমাদের অর্থনীতিতে যে ক্ষত হবে সেই ক্ষত পুষিয়ে নিতে সম্মলিতভাবে কাজ করবো। কাজেই আমরা যদি ১৪ দিন ঘরে থাকতাম তাহলে সেটা হয়তো দীর্ঘমেয়াদি দেশের জন্যই মঙ্গলজনক হতো। এখন প্রশ্ন হলো যে, এই আধা বন্ধ এবং আধা চলাফেরার কারণে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হলো, সেই ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো এবং সেই পদক্ষেপের উপর নির্ভর করবে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭