ইনসাইড আর্টিকেল

৮৭তম পর্ব: বেগম সাহেবা ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/04/2020


Thumbnail

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ এর ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে সরকার। এই মহামানবের বেড়ে ওঠা, রাজনীতি এবং বাঙালির জাতির পিতা হয়ে ওঠার যে গল্প তা তিনি নিজেই তার বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতি, স্মৃতিচারনা এবং ডায়রিতে লিখে গেছেন। সেখান থেকে সংগ্রহ করে মুজিববর্ষে বাংলা ইনসাইডারের এই বিনম্র নিবেদন:

৯ ই জুন ১৯৬৬, বৃহস্পতিবার

সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন একটি চমৎকার কথা বলেছেন। কথাটি একেবারে সত্য। ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা সম্পর্কে বলেছেন, ‘জয়ের সাধ্য নাই, ফেরারও পথ পাইতেছে না’।

পাঁচটার সময় বাইরে যেয়ে একাকী বসে চিন্তা করছি এমন সময় জমাদার সাহেব এসে বললেন, চলুন আপনার ইন্তারভিউ আছে, বেগম সাহেবা ছেলেমেয়ে নিয়ে এসেছেন। হঠাত এল, ব্যাপার কি! আজকাল তো ১৫ দিনের কমে দেখা করতে দেয় না। আগে যখন জেলে এসেছি তখন দেখা করতে অনুমতি দিত। কোনো খারাপ খবর কিনা! তাড়াতাড়ি রওয়ানা হলাম জেল গেটের দিকে। প্রায় দুই তিন শত ছেলে-কয়েদির কাপড় পরে, ফাইল করে বসে আছে। আমাকে দেখে তারা দাঁড়িয়ে গেল। আমাকে হাত তুলে এক সাথে অভিবাদন জানাল, আমিও তাঁদের অভিনন্দন দিলাম। দাঁড়াবার হুকুম নাই, জেলের আইনে। তাই গেটের দিকে চললাম। শুভেচ্ছা জানিয়ে চললাম ছোট্ট ছেলেটা পূর্বের মতোই ‘আব্বা’ বলে চিৎকার করে উঠলো। আমি তাকে কোলে নিলাম। আদর করলাম। বাচ্চা মেয়েটি দরজার কাছে দাঁড়াইয়া ছিল। তাকেও আদর করলাম। জামালের জ্বর, দূরেই বসেছিল, কাছে ডেকে আনলাম। বড়মেয়ে, বড় ছেলে, খোকা, আমার স্ত্রী একে অন্যের দিকে চাইছে, কি যেন বলতে চায় বলতে পারছে না। আমি বললাম এত তাড়াতাড়ি দেখা করার অনুমতি দিল – ব্যাপার কি? আমার স্ত্রী আস্তে আস্তে বলল যে, “টেলিগ্রাম এসেছে মার শরীর খুব খারাপ। বুঝতে আর বাকি রইলো না, মার শরীর বেশি খারাপ না হলে আমার আব্বা কোনোদিন টেলিগ্রাম করতেন না”। তিনি খুব বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোক। মনটা আমার খুবই খারাপ হয়ে পড়ল। ছেলে-মেয়েদের বুঝতে দিলাম না যে আমি খুব মুষড়ে পড়েছি। কিছু সময় বসলাম, কোনো কথাই আমার আর ভালো লাগল না। বেগম সাহেবার কাছ থেকে একটা পান খেলাম। ঢাকার ও অন্যান্য স্থানের অবস্থা যে খুব খারাপ বুঝতে বাকি রইলো না। আমার স্ত্রী বললো প্যারোলের জন্য দরখাস্ত করতে। আমি বললাম “কয়েকদিনের জন্য যেয়ে মার শরীর যদি ভালো নাহয় তাকে ফেলে আবার জেলে ফিরে আসলে তার হার্টফেল করে যেতে পারে। মুক্তি দেয় যাব, নতুবা নয়। কাউকে সত্বর পাঠাইয়া দেও, নাসেরকে খবর দেও বাড়ি যেতে”।ফিরে এলাম আবার সেই নির্জন কারাগারে। আসার পথে কয়েদিরা আমাকে আদাব করল। কিন্তু ওদের দিকে চাইতে পারলাম না। শুধু হাত তুলে সালাম দিলাম ও লইলাম। আমার মনের অবস্থা দেখে মেট আলিমুদ্দি, বাবুর্চি, ফালতু ছুটে এল। বললাম, “আমার মায়ের অসুখ”।

(কারাগারে অন্তরীণ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর লিখিত ডায়েরি; ‘কারাগারের রোজনামচা’ থেকে…)

চলবে...

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭