ইনসাইড পলিটিক্স

শেখ হাসিনার পাশে কেউ নেই?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/04/2020


Thumbnail

করোনা মোকাবেলা শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এ কথা অস্বীকার করার কোনো কারণ নেই যে শেখ হাসিনা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়েই রাজনীতির এই পর্যায়ে এসেছেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই টানা তিনবারসহ মোট চারবারের প্রধানমন্ত্রী, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই তিনি বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু প্রতিটি চ্যালেঞ্জের সময়ই দেখা গেছে যে শেখ হাসিনার দুরদৃষ্টিতা, প্রত্যুৎপন্নমতিতা, বিচক্ষণতার পাশাপাশি তার একটি দক্ষ টিম ছিল। যেই টিম তাকে সহযোগীতা করেছে, যেই টিম তার ভাষা এবং অভিপ্রায় বুঝেছে, তার অভিপ্রায় অনুযায়ী কাজ করেছে নিঃস্বার্থভাবে।

আমরা যদি দেখি যে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে তিনি যখন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন, তখন রাজনীতিতে তিনি একটি প্রতিকূল সময় অতিবাহিত করেছিলেন। সেসময় শুধুমাত্র বিএনপির ভ্রুকুটি এবং মিথ্যাচার নয়, দলের ভেতরেও ষড়যন্ত্রকারীরা তার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। কিন্তু সেসময় শেখ হাসিনা একটি চমৎকার টিম তৈরি করেছিলেন। জোহরা তাজউদ্দিন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমুর মতো নেতারা শেখ হাসিনার পাশে ছিলেন। তারা পাশে থাকার কারণেই শেখ হাসিনা দলের মধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের যেমন পরাজিত করতে পেরেছেন, তেমনি আওয়ামী লীগকেও শক্তিশালী করতে পেরেছিলেন।

আমরা দেখি যে ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে, তখনও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, নেতৃত্ব, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উপস্থাপনের মতো সাহস দিনি দেখিয়েছিলেন। সেসময়েও তার সঙ্গে একটি বিচক্ষণ রাজনীতিবিদদের টিম ছিল। আমরা বলতে পারি যে তৎকালীন বিরোধী দলের উপনেতা প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ, তৎকালীন চিফ হুইপ মোহাম্মদ নাসিম, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ আরও কয়েকজন নেতাদের টিম সেসময় সংসদের ভেতরে এবং বাইরে আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করেছিলেন।

আমরা ওয়ান ইলেভেনের সময়ে দেখি যখন সেনাসমর্থিত ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অনির্বাচিত সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করেছিল এবং তাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত করেছিল। ঠিক সেসময়েও শেখ হাসিনার পাশে কিছু বিশ্বস্ত মানুষ ছিল, যারা শেখ হাসিনার পাশে দাড়িয়েছিল এবং শেখ হাসিনাকে বিজয়ী হতে সহযোগীতা করেছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন প্রয়াত জিল্লুর রহমান, প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী সহ আরও অনেকে।

মনে করা হয়, শেখ হাসিনার পাশে যারা ছিল তাদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা এবং ত্যাগের কারণেই ওয়ান ইলেভেনের অনির্বাচিত সরকারকে পরাস্ত করে শেখ হাসিনা একটি নির্বাচনের জন্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন।

আমরা দেখি যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর ২০০৯ সালে যখন শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন, এর পরপরই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাটি ঘটে। সেই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাও ছিল তার জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা। সেসময়েও শেখ হাসিনার পাশে ছিল বিশ্বস্ত কিছু মানুষ, যারা শেখ হাসিনাকে সার্বক্ষণিকভাবে সহযোগীতা করেছেন, তার রাজনৈতিক অভিপ্রায় এবং প্রজ্ঞাকে সঞ্চারিত করার জন্য নির্ভীকভাবে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বেগম মতিয়া চৌধুরী, জেনারেল তারেক সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আযমের মতো নেতৃবৃন্দ।

এখন শেখ হাসিনা আরেকটি সংকটকালীন সময় পার করছেন, আরেকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি তিনি। আমরা জানি যে শেখ হাসিনার যে রাজনৈতিক দৃঢ়তা, তার যে সততা এবং বিচক্ষণতা- সবমিলিয়ে তিনি সব সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু এবার শেখ হাসিনার পাশে কে আছে? শেখ হাসিনার টিম কারা? কারা শেখ হাসিনার সবকিছু উজাড় করে দিয়ে নির্ভীকভাবে কাজ করবে? কারা শেখ হাসিনার অস্তিত্ব বাস্তবায়নের জন্য নিঃস্বার্থভাবে সবকিছু উজাড় করে দেবে? আমরা কি সেরকম টিম দেখতে পাই?

আমরা জানি রাজনীতিতে ব্যক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, রাজনীতিতে নেতার ভূমিকা প্রধান। কিন্তু নেতার পাশাপাশি নেতার জন্যই কিছু সুযোগ্য, বিশ্বস্ত সহযাত্রী লাগে। সেই সহযাত্রীর অভাব কি শেখ হাসিনা বোধ করছেন?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭