ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক : শুরুতেই শেষ?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/07/2017


Thumbnail

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময় চীনের কড়া সমালোচনা করেছিলেন ট্রাম্প। নির্বাচনে জয়ের পর বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হবে। ক্ষমতায় আসলে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ করবেন বলে জানান। কিন্তু মাস না যেতেই চীনা প্রেসিডেন্টের ফ্লোরিডায় আগমন অন্য এক বার্তা দিল বিশ্ববাসীকে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বললেন, আমাদের মধ্যে একটি রসায়ন আছে; শুধু ভালো নয়, চমৎকার রসায়ন।

তবে চীন-মার্কিন এ সম্পর্কে দিন দিন ভাটা পড়ে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের বার্ষিক প্রতিবেদনে মানব পাচারের জন্য চীনকে তাদের মর্যাদার তালিকার নিচে রেখেছে। উত্তর কোরিয়াকে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে অর্থায়নের জন্য চীনা ব্যাংক দাংদোংয়ের ওপর তাঁরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে বলে জানায় মার্কিন কোষাগার কর্তৃপক্ষ। মার্কিন কংগ্রেস তাইওয়ানের কাছে ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। তাইওয়ানকে চীন নিজেদের প্রদেশ বলে মনে করে। দক্ষিণ চীন সাগরে ট্রাইটন দ্বীপের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে পেন্টাগন একটি ডেস্ট্রয়ারও পাঠিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপ ভালোভাবে নিতে পারছে না চীন। বিশেষ করে ট্রাইটন দ্বীপে ডেস্ট্রয়ার পাঠানো নিজেদের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি বলে মনে করে চীন। দ্বীপটি ভিয়েতনাম নিজেদের বলে দাবি করে এবং চীন এটি দখল করে রেখেছে।

চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এ রাগের মূল কারণ হলো উত্তর কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের দিন উত্তর কোরিয়া আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে। মার্কিন বিশেষজ্ঞারা জানান এ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় নিক্ষেপ করা যাবে। উত্তর কোরিয়া বিষয়ে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চীনের ওপর ভরসা করেছিল ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্পের ভাষায় চীন ব্যর্থ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন চীনকে জানায়, যদি উত্তর কোরিয়াকে চীন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তবে তারা সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।

জিনপিং মনে করেছিলেন এক চীন নীতিকে মেনে নিবেন ট্রাম্প। কিন্তু ট্রাম্প সে বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। ট্রাম্পের বিশ্বায়ন ও পরিবেশবিরোধী নীতিকে সমর্থন করেনি চীন। উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসী মনোভাবে লাগাম দিতে চীন তেমন আগ্রহও দেখায়নি। চীনের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আঁচ করতে পারাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন। কারণ তাঁদের নীতি নির্ধারনের জন্য কোনোও ডেপুটি সচিব নেই। রাষ্ট্রটির প্রধান কর্মকর্তারাই সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা ধোঁয়াশার মধ্যেই থেকে যায়।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে অনেকে আশাবাদী হয়ে নড়েচড়ে বসলেও সম্পর্কটি ফিকে হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বও বেড়ে যাচ্ছে। যদিও ওবামার সময়ও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তেমন গভীর ছিল না। ২০১৬ সালে জি ২০ সম্মেলনে ওবামাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা না দিয়ে অসম্মান করেছিল চীন। এমনকি সম্মেলনে ওবামা ও জিনপিংয়ের ঠান্ডা যুদ্ধ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।

দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কের নতুন যে সূচনা হতে যাচ্ছিল তা খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পও এখানে সফল কূটনীতিকের ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে, যে যুক্তরাষ্ট্র একঘরে হয়ে যাচ্ছে। এবারের জি ২০ সম্মেলনে সেটিই প্রতিফলিত হল। উত্তর কোরিয়াকে দমন করতে চীনকেই প্রয়োজন ট্রাম্পের। তাই চীনের সঙ্গে সরাসরি দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে সমঝোতার মাধ্যমে উভয়পক্ষকে আগাতে হবে।


বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭