কালার ইনসাইড

সমস্যা হলো কমিটমেন্ট ও নিয়ম-নীতি যথাযথভাবে না মানার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/07/2017


Thumbnail

বাংলা চলচ্চিত্রের সময় খারাপ যাচ্ছে। তার সঙ্গে নতুনভাবে যোগ হয়েছে যৌথ প্রযোজনা নিয়ে দ্বিধা বিভক্তি। এই অবস্থা থেকে কোনো উত্তোরণের পথ আছে? এই মুহূর্তে চলচ্চিত্রের সমস্যাগুলো নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর।

বাংলা ইনসাইডার: অভিযোগ এনে আপনাকে বয়কট করেছে হল মালিক সমিতি, প্রতিক্রিয়া কী ?

মিশা সওদাগর: সিনেমা হল মালিকদের এমন করার পিছনে কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না। তাঁদের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। আমরা অভিনেতা। আমাদের সঙ্গে তো তাঁদের কোনো ঝামেলা হওয়ার কথা না। আজ যে আমি মিশা, তার অবদান হল মালিকদেরও রয়েছে। আমার ওপর তাঁদের আস্থা ছিল বলেই আজ এতটা বছর অভিনয় করতে পারছি। সিনেমা হল না চললে আমরা কীভাবে অভিনেতা হতাম? তাঁরা যদি মনে করে এই যৌথ প্রযোজনার ছবি নিয়ে তাঁদের আর আমাদের মত বিরোধ রয়েছে সেটা ভুল। যৌথ প্রযোজনার বিরুদ্ধে আমি নই, এই আয়োজনের সঠিক নিয়ম-নীতির জন্যই দেন দরবার করছি। নীতিমালা না মেনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে দর্শকই একদিন এসব সিনেমা দেখা ছেড়ে দেবে। তখন অস্তিত্ব সংকটে পড়বে সিনেমা হল। আর  সিনেমা হল বাঁচাতে হলে মালিকদের হয়ে সরকারকে বলেছি সিনেমা হল সংস্কারের জন্য অনুদান দিতে হবে। আমরা সিনেমা হল মালিকদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে সিনেমা হল রক্ষা করতে চাই। হয়তো সাময়িক ভুল বোঝাবুঝির জন্য বয়কটের মতো একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। আশা করি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এই যে গেল কিছুদিন ধরে সবাই বয়কটের খেলায় মেতেছে তা নিয়ে কী বলবেন?

নিয়ম-নীতি বিহীন যৌথ প্রযোজনার আন্দোলনের অস্থির সময়ে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো ঘটছে। আসলে বয়কট কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়, সাময়িক মান অভিমান। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। চলচ্চিত্র পরিবার কাউকে বয়কট করলেও আলোচনার পথতো আর বয়কট করেনি। সুতরাং বিষয়টির একটি ইতিবাচক সমাধান শিগগিরই হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

আন্দোলন করতে গিয়ে সিনেমা হল মালিক আর সেন্সর বোর্ডের সদস্য ইফতেখার নওশাদের ওপর চলচ্চিত্র পরিবার রাজপথে হামলা চালিয়েছে, এতে আপনাকেও দায়ী করা হয়েছে, কাজটি কতটা শোভন হয়েছে?

দেখুন, নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র পরিবার সব সময় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছে। সেদিনের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ করে এই কাজটি চলচ্চিত্র পরিবার করেনি। কিছু সুযোগ সন্ধানী বহিরাগত লোক চলচ্চিত্র পরিবারকে হেয় করতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে। এর জন্য চলচ্চিত্র পরিবার বা আমি দায়ী নই। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কখনো চাই না। ইফতেখার নওশাদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

আপনিও তো যৌথ প্রযোজনার সিনেমা করেছেন, জাজের ব্যানারে ?

২০১২ সালে নতুন নীতিমালার অধীনে ওই ছবিটি নির্মিত হয়েছিল, ওই নীতিমালায় উল্লেখ ছিল দুদেশের নির্মাতারা বসে সমঝোতার মাধ্যমে এই নিয়মের ছবি নির্মাণ করবে। ছবিটি যখন মুক্তি পেল তখন দেখলাম আমাদের দেশের শিল্পী কলাকুশলীকে ঠকানো হয়েছে। আর তখন থেকেই এই নীতিমালার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। এর পর থেকে একাধিক প্রস্তাব পাওয়ার পরেও আমি কিন্তু আর এই আয়োজনের ছবি করছি না। এই আয়োজনে অনিয়মের কারণে আমাদের শিল্পী কলা কুশলীরা বঞ্চিত হচ্ছে, ওয়ার্কপারমিট ছাড়া শিল্পীরা কাজ করছে, সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। উভয় দেশের স্বার্থ ও কৃষ্টি কালচারকে সমুন্নত রেখে সমতার ভিত্তিতে যৌথ আয়োজনের ছবি হতে হবে।

অনেকে বলছেন এই আন্দোলন শাকিব বিরোধী। তাকে ঠেকাও আন্দোলন?

এটি সম্পূর্ণ ভুল। আমরা কেন শাকিবকে ঠেকাতে যাব? সমস্যাটি হলো কমিটমেন্ট ও নিয়মনীতি যথাযথভাবে না মানার।

মৌসুমীকে ‘বয়স্ক’ বলে সম্বোধন করায় সমলোচনার ঝড় ওঠে ?

তাঁর প্রতি সম্মান জানাতেই তাঁকে ‘বয়স্ক’ বলেছি। অন্য কিছু নয়। মানে, তিনি অনেক সিনিয়র অভিনেত্রী। সেই ১৯৯২ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে শুরু করেছেন। অনেক দিন ধরেই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন। ফলে তিনি সব বিষয়েই জানেন, বোঝেন। এটা কেউ যদি অন্যভাবে ব্যখ্যা করে। সেটা দু:খজনক। সে যদি এর জন্য অভিমান করে থাকেন। তাহলে তার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। শিল্পী সমিতির পদত্যাগ পত্র প্রত্যাহার করে মৌসুমীকে আবার ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করছি।

দেশীয় চলচ্চিত্রের পুনরুজ্জীবনে চলচ্চিত্র সমিতিগুলোর কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন ?

চলচ্চিত্র পরিবার প্রযোজকদের পুঁজি ফেরত নিশ্চিত করতে পাইরেসি রোধ, এফডিসিতে সেন্ট্রাল সার্ভার স্থাপন, কমপক্ষে ২০০ সিনেমা হল সংস্কার ও আধুনিকায়ন, মানসম্মত গল্প বাছাই, শিল্পীদের কাজের সময় মেনে চলার বিধান, নতুন মুখের সন্ধানের আয়োজন, প্রশিক্ষণ, গানের মান রক্ষা, সিনিয়রশিল্পীদের পরামর্শ ও তাঁদের উপযুক্ত চরিত্রে কাস্ট করা ইত্যাদি উদ্যোগ নেবে। সম্প্রতি তথ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে কথা হয়েছে, সরকার আমাদের সার্বিক সহযেগিতা দেওয়ার কথা দিয়েছে। সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। দেশীয় চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরাতে চলচ্চিত্র পরিবার বদ্ধপরিকর।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭