ইনসাইড হেলথ

করোনায় সবচেয়ে বেশি দরকার মনের যত্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/04/2020


Thumbnail

সারা দেশে চলছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। আর এই সংক্রমণে সবচেয়ে বেশি ভাবা হচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিয়ে। শারীরিক চিকিৎসা। ভাইরাসটি থেকে প্রাণে বাঁচার চিকিৎসা নিয়ে।
কিন্তু মেডিসিনের এই চিকিৎসার বাইরে গুরুত্ব হারাচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারি একটি বিষয়। বলছি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট  মানসিক সমস্যার কথা। ভাইরাসে সৃষ্ট এই অচলতায় অনেকেই হারিয়েছেন চাকরি, তৈরি হয়েছে নানা অনিশ্চয়তা, দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দী থাকার ধৈর্যচূতি তো রয়েছেই।
মনোবিজ্ঞানীরা মানব শরীরকে যন্ত্রের সাথে তুলনা করে থাকেন। তারা বলে থাকেন মানব শরীর হল হার্ডওয়্যার, আর এখানে মানুষের মন হল সফটওয়্যার। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, আমাদের মোবাইল, কম্পিউটার ইত্যাদি বিভিন্ন যন্ত্রে সফটওয়্যার হেং করলে যেমন যন্ত্র কাজ করে না। তেমনি মানুষের মন বিকল হয়ে পড়লে মানব শরীরও বিমাতাসুলভ আচরণ করা শুরু করে।
ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ে অনেকের মধ্যেই ইতোমধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। সেইসাথে বেড়ে গেছে আমাদের নেতিবাচক বহিঃপ্রকাশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকলেই এমন অসংখ্য বিষয় চেখে পড়ছে। জাতি হিসেবে আমাদের যে বৈচিত্র্যপূর্ণতার খ্যাতি রয়েছে, জাতীয় দুর্যোগের এই সময়ে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে নেতিবাচক মানসিকতায়ও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ বুলেটিনে প্রতিনিয়ত স্বল্প পরিসরে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সতর্ক, সচেতন হওয়ার বিষয়ে অনুরোধ করা হচ্ছে। যদিও নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব নিয়ে বিশেষ বা পৃথক কোন কার্যক্রম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বিষয়টি থেকে বিরত রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইআরডিসি স্বাস্থ্য বিষয়ক সকল প্রতিষ্ঠান।
সংক্রমণের এই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত উদ্বেগ প্রকাশ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই বিষয়ে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়, পুরো বিশ্ব ব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে মানুষের মধ্যে মানসিক ভয়, দুশ্চিন্তা, শঙ্কা ও উদ্বিগ্নতা বেড়ে গেছে। আর কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে এই মানসিক বিপর্যয় সবচেয়ে বেশি বলে জানান বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে বয়সে বৃদ্ধ বা বয়স্ক ব্যক্তি, স্বাস্থ্যকর্মী ও বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন এমন মানুষ।
করোনাকালীন এই সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কিছু নির্দেশক চিহ্নিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাও। সংস্থাটির মতে, ভাইরাসের কারণে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হল মানুষের নিজের ও তার প্রিয়জনের বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে।
সেইসাথে মানসিক সমস্যার কারণে অনেকেরই ঘুম ও খাদ্যাভাসে একটা পরিবর্তন চলে এসেছে বলে উল্লেখ করেন তারা। আর এমন মানসিক সমস্যা থেকে বিভিন্ন ধরণের ড্রাগস গ্রহণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংস্থাটি।
ইতোমধ্যে ভাইরাসে সৃষ্ট মানসিক সমস্যার কারণে দেশটির বিভিন্ন স্টেটে শিশু নির্যাতন, গৃহ বিবাদ ও গুলিবিদ্ধের মতো কিছু অপরাধের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিগত দুইমাসের উপাত্ত দিয়ে তৈরি করা সমীক্ষায় এমন তথ্য জানাচ্ছে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও শেরিফ বিভাগ। আমাদের দেশে অবশ্য এই বিষয়ে তেমন কোন পরিসংখ্যান বা সমীক্ষা নেই।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে (পলিটিক্যাল ও সোশ্যাল ডিসকোর্স) যেভাবে নেতিবাচক বহিঃপ্রকাশের হার লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় ভাইরাসটির কারণে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি বা বিপর্যয় হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কয়েকজন মানসিক চিকিৎসকের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সাধারণ মানুষ মনের যত্ন নিতে জানে না। সবচেয়ে মারত্মক বিষয় হল মনের যে যত্ন নিতে হয়, মানসিক প্রশান্তির দরকার হয় এর প্রয়োজনীয়তাই তারা উপলব্ধি করতে জানে না।
অথচ ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার মানসিক প্রশান্তি। করণীয় দিকের বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা জানান এখন সবচেয়ে বেশি দরকার ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করা। অবশ্য এসব হটাৎ করে তৈরি হওয়ার বিষয় নয়। ভালো খাবার দাবার খাওয়া, বাড়িতে হালকা ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞরা।
সেইসাথে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে ঘরে বসে করা যায় এমন নানা কাজ করার পরামর্শও দেন তারা।            



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭