ইনসাইড পলিটিক্স

কর্মহীন মন্ত্রী-এমপিদের বেতন জনগণ কেন দেবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 25/04/2020


Thumbnail

করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। কিছু জনসচেতনতা গ্রহণ করছেন এবং গরীব মানুষ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সাহায্যের জন্য নানা পথ এবং উপায় খুঁজে বের করেছেন। এক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ড করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে সফল দেশগুলোর একটি। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গরীব মানুষদের সাহায্যের জন্য তাঁদের মন্ত্রিসভার বেতনের একটি অংশ কর্তন করেছে, যেটা গরীব-অসহায়দের দেয়ার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এছাড়াও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালনে অক্ষমতার জন্য তাঁদের দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে পদাবনতি দিয়েছেন এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও প্রশ্ন উঠেছে যে, দেশের গরীব মানুষদের খাওয়ানো এবং ভরণপোষণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ৯২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়া হয়েছে এবং এছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে গরীব মানুষদের নানা রকম সাহায্য দেয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন কিছুটা করতে হবে এবং অযাচিত খরচ, বাড়তি খরচ কমানোর ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি দেখি, বাংলাদেশে অযাচিত, বাড়তি এবং অবাঞ্চিত খরচ- যেটাকে আমরা লাক্সারি খরচ বলি, সেগুলো কি কি। তাঁর মধ্যে দেখা যায় যে, আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের পেছনে যে টাকাটা খরচ হয়, সেই টাকাটা এখন বাংলাদেশের জন্য অযাচিত, বাড়তি এবং অবাঞ্চিত খরচ। 

কারণ মন্ত্রী-এমপিরা কোয়ারেন্টাইনে চলে গেছেন, তাঁদের টিকিটি পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর একারণে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ বণ্টন থেকে শুরু করে সকল দায়িত্ব প্রশাসনের উপরে দিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসককে, সেখানে এমপিদের কোন দায়িত্ব নেই। আবার প্রত্যেকটি জেলার জন্য একজন সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেখানে মন্ত্রীরা ভূমিকাহীন। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী-এমপিদের উপর এক প্রকার অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। এই কারণে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে প্রশ্ন যে, এই মন্ত্রী-এমপিদের বেতন দেয়া হবে কেন? 

কারণ তাঁদের বেতন আসে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। এখন জনগণের আয়-উপার্জন রীতিমত বন্ধ থাকায় ট্যাক্সের টাকা পরিশোধে জনগণ হিমশিম খাবে। এই কষ্টার্জিত টাকায় এর থেকে কিছু গরীবদের খাবার দেয়া হলেও অনেক সাশ্রয় হয় এবং উপকার হয়। বাংলাদেশে মন্ত্রীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। আমরা যদি সর্বশেষ মন্ত্রীদের শুধুমাত্র মূল বেতনের সংখ্যাটা দেখি, পূর্ণ মন্ত্রীরা ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, প্রতিমন্ত্রীরা ৯২ হাজার টাকা এবং উপমন্ত্রীরা পান ৮৬ হাজার টাকা। তাঁর সাথে গাড়ি, বাড়ি, নানা রকম আনুষাঙ্গিক টাকা পয়সা তো আছেই। তবে আমরা হলফ করে বলতে পারি, কোন মন্ত্রীই এই বেতনের টাকায় চলেন না। তাঁদের উপার্জনের নানা তরিকা আছে, নানান পথ আছে, তাঁদের যে আয়-উপার্জন বা বিত্তবৈভব- সেই তুলনায় এই বেতনের টাকা কিছুই না। কাজেই সরকার এই ৪৭ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীর বেতনের টাকা কেটে যদি জনগণের পেছনে ব্যয় করেন, তাহলে তাতে জনগণের খুব বড় উপকার হবে। 

বাংলাদেশে প্রতিটি এমপি মাসিক বেতন পায় ৫৫ হাজার টাকা। বর্তমান সংসদ যেভাবে ‘বিজনেস ক্লাব’-এ পরিণত হয়েছে, তাতে এই টাকাও তাঁদের কাছে কোন বিষয়ই নয়। অথচ এই টাকা দিয়ে গরীব মানুষদের ব্যাপক সাহায্য সহযোগিতা করা যায়। কাজেই একদিকে যেমন মন্ত্রী-এমপিরা কাজ না করার জন্য বেতন পাবার নৈতিক অধিকার নেই, আবার অন্যদিকে এই বেতনটা তাঁদের জন্য কোন অপরিহার্য বিষয় নয়। এই বেতনটা তাঁদের জন্য বিলাসিতা। 

এই দুটোকে একত্রিত করলে আমরা বুঝতে পারি, বাংলাদেশে যতদিন করোনা সঙ্কট থাকবে এবং অর্থনৈতিক ঘনঘটা থাকবে, ততদিন এই মন্ত্রী-এমপিদের বেতন যদি না দেয়া হয়, তাহলে জাতির যেমন কোন অসুবিধা হবেনা, মন্ত্রী-এমপিদের ভেতরেও কোন আর্থিক অসুবিধা হবেনা বা না খেয়ে মারা যাবেননা। এই টাকায় রাষ্ট্রের গরীব মানুষদের পেছনে ব্যয় করা হলে তাঁদের বড় উপকার হবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টি ভেবে দেখবেন কি? 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭