ইনসাইড বাংলাদেশ

বিএনপি নির্বাচনে যাবে শেখ হাসিনার অধীনেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/07/2017


Thumbnail

একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সবধরনের সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তারা নতুন নির্বাচন গঠনের শুরুতে সিইসি কে এম নূরুল হুদার বিরোধিতা করলেও এখন তাঁকে মেনে নিয়েছে। তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন সময় কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন বিএনপির প্রতিনিধিরা। এমনকি মুখে বিরোধিতা করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ারও সিদ্ধান্ত রয়েছে তাঁদের। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সরকারকে চাপে রেখে নির্বাচনে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে তারা।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লল্ডন সফর শেষে ঢাকায় ফিরে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেবেন বলে জানা গেছে। তবে শেখ হাসিনা সরকারকে চাপে রাখতে একটি সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিতে পারেন খালেদা জিয়া।

জানা গেছে, সবদল থেকে নেওয়া এ ১০ জন উপদেষ্টা নির্বাচনকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁরা আলোচনার মাধ্যমে একটি সুন্দর নির্বাচন করতে সহায়তা করবেন। অর্থ্যাৎ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা থাকলেও একটি নিরপেক্ষ আবহে নির্বাচন করতে হবে।

বিএনপির ধারণা তারা নির্বাচনে সক্রিয় ভাবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা অব্যাহত রাখলে সরকারের আমলা, পুলিশ, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন স্তরে ভাঙ্গন দেখা দেবে। এতে করে নির্বাচনের আগ থেকেই সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বিএনপির সুযোগ তৈরি হবে। আর কৌশলগত এ সুযোগ নিতে পারবে বিএনপি। বিএনপি নেতাদেও মতে, নির্বাচন যদি ৫০ভাগও সুষ্ঠুভাবে করা যায় তাহলেও বিএনপিকে জেতানো সম্ভব হবে।

নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে বিএনপি ইতিমধ্যে তাদের ইতিবাচক মনোভাব জানিয়ে দিয়েছে। সিইসি নুরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করে দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকরেও বলেন, ’সিইসি সজ্জন ব্যক্তি।’ এই নতুন ইসির অধীনে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তাতে ইসির ভূমিকায় অসন্তুষ্ট নয় বিএনপি।

ইতিমধ্যে ইসি একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে সংলাপ আহ্বান করেছে তাতে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যে তারা প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দেশের বর্তমান বাস্তবতায় সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কি কি প্রস্তাবনা দেওয়া যায় তার খসড়া প্রণয়নের। এই প্রস্তাবনায় মূল দাবি থাকবে সকল দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করবে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশনের সংলাপের উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। আমাদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রস্তবনা থাকবে। এসব প্রস্তাব তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে, সেজন্য নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরবেন তারা। নির্বাচন কমিশনকে সর্বাধিক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। এ জন্য দরকার নির্বাচনকালীন একটি দল-নিরপেক্ষ সরকার যারা ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে পারবে।

বিএনপি সূত্র জানায়, সংলাপে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) পাঁচটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করবে বিএনপি। এছাড়া নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে কমিশনের নিজস্ব সচিবালয় গঠন, কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ, কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা, দলীয় মনোভাবাপন্ন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর থেকে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত সরকারের স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রভৃতি বিষয় থাকবে প্রস্তাবনায়। পাশাপাশি ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নতুন ভোটার তালিকা নিবন্ধীকরণ যোগ্য সব নাগরিক, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, কারাবন্দি ও নানা মামলায় যুক্ত ব্যক্তিদের ও নেতা-কর্মীদের ভোটার করার বিষয়ে প্রস্তাব থাকবে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন সময়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন ও তাদের ম্যাজিস্টেরিয়াল ক্ষমতা প্রদানের দাবী জানানো হবে। প্রস্তাবনায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ন্যূনতম তিন বছরের পূর্বে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থাকে দেশের প্রচলিত আইন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিবন্ধিত হতে হবে। রাজনৈতিক দলের প্রকাশ্যে আনুগত্যপোষণকারী কোনো প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষক করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ন্যূনপক্ষে ৭ দিন আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সব পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তা অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপিল কর্তৃপক্ষ, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, রিভাইজিং অথরিটি, নির্বাচন কার্যে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হবে প্রস্তাবনায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসিকে সব ধরনের সহযোগিতার করবে বিএনপি। সংলাপে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার বিষয়ে আগেই বিএনপি মতামত দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) প্রকাশ করেছে।


বাংলা ইনসাইডার/ জেডএ




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭