ইনসাইড গ্রাউন্ড

এখনো ফিরতে চান নাফিস?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/07/2017


Thumbnail

তিনি ক্রিকেটের যেকোনো ফরম্যাটে বছরে এক হাজার রান করা প্রথম বাংলাদেশি। ২০০৬ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩টি শতক ও ৪টি অর্ধশতকসহ করেন ১০৩৩ রান। সে বছর বিসিবির বর্ষসেরা ক্রিকেটারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সে বছর বিসিবির বর্ষসেরা ক্রিকেটার পর্যন্ত নির্বাচিত হয়েছিলেন। আইসিসির সেরা উদীয়মানের শর্ট লিস্টে ছিলেন তিনি। ২০০৬ সালেই ফতুল্লা টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরির ইনিংস (১৩৮ রান)।

তিনি শাহরিয়ার নাফিস। ডাকনাম আবির। টাইগারদের এক সময়কার সেরা ওপেনার। যার ভয়-ডরহীন ব্যাটিং মুগ্ধ করেছিল গোটা টাইগার সমর্থকদের। এত সব অর্জনের এই শাহরিয়ার নাফিস এখন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন।

২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ৪৩তম ক্রিকেটার টেস্ট এবং একই বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৭৬তম ক্রিকেটার হিসাবে ওয়ানডে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন শাহরিয়ার নাফিস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক বছরে ৭টি ওডিআই ম্যাচে দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৫৪ রান করে বুঝিয়ে দেন হারিয়ে যেতে আসেননি তিনি। ২০০৬ সালটা কাটিয়েছেন স্বপ্নের মতো। তখনো বাংলাদেশ সমীহ পাওয়ার মতো দল হয়ে উঠতে পারেনি। জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া তখনো বাংলাদেশের সঙ্গে সমানে-সমানে লড়াই করতো এবং বড় দলের বিপক্ষে জয় পেলে ক্রিকেট বিশ্ব সেই জয়কে দুর্ঘটনা হিসাবে দেখতো।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচে ১০ রান করে ফিরে গেলেও পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন, ৫৭ বলে খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। ওডিআইতে নিজের প্রথম অর্ধশতকও তুলে নেন অজিদের বিপক্ষে। ক্যারিয়ারের চতুর্থ এবং অজিদের বিপক্ষে দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে ১১৬ বলে করেন ৭৫ রান। নিরপেক্ষ ভেন্যু ক্যান্টারবেরিতে ওই ম্যাচে শাহরিয়ার নাফিসের ৭৫ রান এবং খালেদ মাসুদের ৭১* রানের উপর ভর করে বাংলাদেশ ২৫০ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে রিকি পন্টিংয়ের ৬৬ এবং মাইকেল ক্লার্কের অপরাজিত ৮০ রানের উপর ভর করে ৬ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নেয় অজিরা। মাইকেল ক্লার্ক ম্যাচজয়ী অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংস খেললেও ঐদিন ম্যাচ সেরার পুরস্কার উঠে শাহরিয়ার নাফিসের হাতে।

হঠাৎ যেন বিধিবাম! ২০০৮ সালে ভারতের বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগ আইসিএলে ঢাকা ওরিয়র্সের হয়ে নাম লিখিয়েই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২৩ মাস পর টেস্টে ফিরে প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করতে পারেননি। ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ৯৭ রানের সেই ইনিংসটি এখনো পোড়ায় তাকে আক্ষেপে। ওই টেস্টের পর ৭ ইনিংসে ফিফটি শূন্য, ২০১৩-এর পর টেস্টে আর ফিরতেই পারেননি। ২০১১-এর পর আর ফিরতে পারেননি ওয়ানডেতে, তা নিয়তি বলেই মেনে নিয়েছেন। তবে এখনো জাতীয় দলে ফেরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত বছর প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে ব্যাটিংয়ে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন (৩৫০ রান) ব্রাদার্সের হয়ে খেলা এই টপ অর্ডার। সে বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট জাতীয় লিগে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক (৬ ম্যাচে ৭১৫ রান) শাহরিয়ার নাফিস বরিশালকে দ্বিতীয় স্তর থেকে প্রথম স্তরে উঠিয়ে এনেছিলেন। বিসিএলে সাউথ জোনের হয়ে ৬ ইনিংসে করেছেন ৪০২ রান। ক্যারিয়ারে ৯০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ৬ সেঞ্চুরির ৩টিই সর্বশেষ মৌসুমে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ পরিসরের ম্যাচে এমন ব্যাটিং ধারাবাহিকতায় জানিয়ে দিয়েছেন, টেস্টে এখনো তার প্রয়োজন ফুরায়নি।

তাছাড়া বিপিএলের ৪র্থ আসরে ১৭টি ম্যাচ থেকে ৩৯৬ রান করেছেন নাফিস। রয়েছে তিনটি অর্ধশতকও। ব্যাটিং গড় ২৮.২৮।

শাহরিয়ার নাফিস এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ৭৫টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ খেলে ৩১.৪৪ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ২,২০১ রান। শতক ৪টি ও অর্ধশতক ১৩টি।

শাহরিয়ার নাফিস নিজের শেষ লিস্ট-এ ম্যাচে রুপগঞ্জের বিপক্ষে ৩১ রান করার পথে লিস্ট-এ ক্রিকেটে ৪ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন। এখন পর্যন্ত ১৪৫টি লিস্ট-এ ম্যাচে ২৯.৫৭ ব্যাটিং গড়ে ৪,০২২ রান করেছেন।

নাফিসের টেস্ট ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে একটি হলো, বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতক হাঁকানো। বাংলাদেশের হয়ে ২০১৩ সালে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলা নাফিস ২৪টি টেস্টে ২৬.৩৯ ব্যাটিং গড়ে ১,২৬৭ রান করেছেন।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও নিজের শেষ ইনিংসে ২০৭* রানের ইনিংস খেলার পথে ৭ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন। এখন পর্যন্ত ১০২ ম্যাচে ৪০.০২ ব্যাটিং গড়ে ৭,০৪৪ রান করেছেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৩টি শতক এবং ৪১টি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন।

বর্তমানে টপঅর্ডারে বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লড়াই চলছে ভালোই। তামিমের পাশে এই লড়াইয়ে আছেন সৌম্য, ইমরুল কায়েস, এনামুল বিজয়। এই তিনজনের সঙ্গে লড়াই করে জায়গা ফিরে পেতে কষ্ট হবে।

ব্যাপারটা কিন্তু সহজ নয়। তারপরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জায়গাটা ফিরে পেতে চান এই বাঁ হাতি। সম্প্রতি এক গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘এখন অনেক কম্পিটিশন, তাই দলে সুযোগ পাওয়া কঠিন।

আমরা দুই-তিনজন টপঅর্ডারে ঢোকার জন্য ফাইট করছি। এখন ফিটনেস ভালো আছে, ব্যাটিংয়ের অবস্থা ভালো আছে। যদি সুযোগ পাই তাহলে দলকে জেতানোর জন্য যতটুকু করা দরকার ততটুকু করার চেষ্টা করব।’

শাহরিয়ার নাফিসের বর্তমান বয়স ৩২ বছর। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে ৩২ বছরের পরেও অনেক ব্যাটসম্যান মাঠ কাঁপিয়ে গেছেন। শাহরিয়ার নাফিস এখনও ধৈর্য নিয়ে খেলে যাচ্ছেন, দারুণ পার্ফরমেন্স দিয়ে আবারও জাতীয় দলে খেলার সুযোগের অপেক্ষায় আছেন।

বাংলা ইনসাইডার/ডিআর




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭