নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 18/07/2017
বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ ছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার পর থেকেই দারুণভাবে বদলে গেছে টাইগাররা। একের পর এক জয় তুলে বিশ্ব ক্রিকেটে আজ প্রতিষ্ঠিত একটি দল বাংলাদেশ। কিন্তু ওই আসরটা যেন অভিশাপ হয়েই এসেছিল এক টাইগারের জন্য। বিশ্বকাপের মধ্যেই ইনজুরিতে পড়ে দেশে ফিরতে হয় তাঁকে। এরপর তার জায়গায় খেলতে নেমে একাদশে দারুণ পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন সৌম্য সরকার-ইমরুল কায়েসরা। তাই টিম কম্বিনেশনের কারণে দলে আর জায়গাটা ফেরত পাননি। মাঝে টি-টুয়েন্টিতে সুযোগ পেলেও মেলে ধরতে না পারায় একরকম ব্রাত্যই হয়ে আছেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
তিনি বিজয়, এনামুল হক বিজয়। অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অনবদ্য পারফর্মেন্সের কারণেই নজর কাড়েন তিনি। এরপর ২০১২ সালে ওয়েস্ট-ইন্ডিজ এর সঙ্গে দলে চান্স পান তিনি। বাংলাদেশ পেয়ে যায় পারফেক্ট ওপেনার।
বিজয় এক সময় বাংলাদেশের নির্ভরশীল ব্যাটসম্যান ছিলেন। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং উইকেটরক্ষক অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন। আইসিসি ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ৬০.৮৩ গড়ে টুনার্মেন্টের সর্বোচ্চ রান (৩৬৫) করেন এনামুল। জাতীয় দলে ঢোকার আগেই তিন মৌসুমে সব ধরনের ক্রিকেটে করেছিলেন ১৩টি সেঞ্চুরি। এরপর ২০১২-১৩ মৌসুমের ওয়েস্ট-ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজের মাধ্যমে তার ওডিআই অভিষেক হয়।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই তিনি পূর্ণ করেছেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। তারপর থেকেই এনামুলের যাত্রা শুরু। এনামুল হক গ্রামীণফোন-প্রথম আলো বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রীড়া পুরস্কারে পেয়েছিলেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি২০ খেলেছেন তিনি। তামিমের সাথে অনেকদিন ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসাবে খেলেছিলেন।
২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপে এবং এশিয়া কাপে এনামুল হক বিজয় ছিলেন বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক । তিনি টি২০ বিশ্বকাপ ২০১৪ তে ৭ টি ম্যাচ খেলেছেন । ৭ ম্যাচে তিনি ১৮৪ রান করেন ৩০.৬৬ গড়ে । সর্বোচ্চ রান ৪৪* । স্ট্রাইক রেট ১১৮.৭০ এশিয়া কাপে তিনি ৪ ম্যাচে ২২৭ রান করেছিলেন ৫৬.৭৫ গড়ে । সর্বোচ্চ রান ১০০ । স্ট্রাইক রেট ৬৮.১৬ ।
তবে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে দুর্ভাগ্য সঙ্গী হওয়ার পর থেকেই কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়েন তরুণ এই টাইগার ওপেনার। জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত বছর নভেম্বরে, টি-টোয়েন্টি। ওয়ানডে খেলেছেন অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। টেস্টতো খেলেছেন আরও আগে। সবমিলিয়ে তাই এনামুলের অপেক্ষার প্রহর বেড়েই চলছে। তবে তিনি অপেক্ষাটা আর বাড়াতে চান না। নিজের ব্যাটিং প্রতিভার প্রমাণ আবারও রাখতে চান তিনি।
৩০ ওয়ানডেতে ৩৫.১৮ গড়ে ৯৫০ রান করা এনামুলকে আর সুযোগ দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গড় তার, তারপরও একরকম হারিয়েই গেলেন তিনি। তবে আগের জায়গাটা পুনরুদ্ধার করতে চান এনামুল। এ জন্য কঠোর পরিশ্রমও করছেন।
এনামুলের পারফরম্যান্সের চেয়ে তার ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল বেশি। দলের সিনিয়র এক ক্রিকেটারের অভিযোগ, এনামুল দলের জন্য `নিঃস্বার্থভাবে` খেলেন না। কিছুটা `ব্যক্তিগত স্বার্থ` নিয়েই মাঠে নামেন তিনি। সব মিলিয়ে তাই এনামুল অনেকটাই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন! তবে বিষয়টি নিয়ে খুব সিরিয়াস এনামুল। আসন্ন প্রিমিয়ার লিগে ‘নিজের জন্য খেলে’ এমন অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে চান তিনি। জানালেন, প্রিমিয়ার লিগে নতুন এক বিজয়কে দেখা যাবে। ভক্ত থেকে শুরু করে সমালোচকদের জন্য নতুন চমক হয়ে আসবেন তিনি।
এনামুলের টেস্ট ক্যারিয়ার ভাল না হলেও ওয়ানডেতে মাত্র ৩০ ম্যাচে ৩৫.১৮ গড়ে করেছেন ৯৫০ রান। যেখানে ৩ টি অর্ধশতক এবং ৩টি শতক রয়েছে। স্ট্রাইক রেট ৭০। সেরা ১২০ রান। আর টি২০ ক্যারিয়ারে ১৩ ম্যাচে ৩২.২৭ গড়ে করেছেন ৩৫৫ রান। স্ট্রাইক রেট ১১৭.৯৪। সেরা ৫৮ রান।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এনামুল ৬২ ম্যাচে ১১০ ইনিংসে, ৪০.৯১ গড়ে করেছেন ৪১৭৩ রান। স্ট্রাইক রেট ৫৬.০৮। শতক ১২টি ও অর্ধশতক ২২টি। সেরা ১৯৩ রান। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১০০ ম্যাচ খেলে ৩২.৪২ গড়ে করেছেন ২৯৫১ রান। স্ট্রাইক রেট ৭৬.৫৩। সেরা ১৫০* রান। শতক ৭টি ও অর্ধশতক ১৪টি।
সম্প্রতি শেষ হওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন বিজয়। তার দল `গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স` টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন হয়। এনামুল তার দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। পুরো আসরে ১৬ ম্যাচে ৩৭.২৫ গড়ে করেছেন ৫৯৬ রান। স্ট্রাইক রেট ৯০.৭১। সেরা ৯৭ রান।
পরিসংখ্যান হয়তো বিজয়কে উৎসাহ দিতে পারে। তবে ঘিরে ধরা সমস্যার জাল ফুঁড়ে বেরোতে খুব একটা সাহায্য করবে না। সেটা জানেন বলেই হতাশার ভেতর আশার আলো খুঁজছেন এনামুল।
গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিজয় বলেন, ‘ভালো খেললে নিশ্চয়ই সুযোগ আসবে। এখন আমার কাজ পারফর্ম করা। ভালো ব্যাটিং করতে পারি, হয়তো সামনে সুযোগ আসবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমার দায়িত্ব মাঠে পারফরম্যান্স করা, দলে সুযোগ দেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচকদের। আমি আসলে জাতীয় দল নিয়ে আপাতত কিছু ভাবছি না। আমার ভাবনা এখন প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে। ভবিষ্যতে জাতীয় দলে সুযোগ পেলে; আর যেন দল থেকে বাদ পড়তে না হয় সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছি। আমার বিশ্বাস, আমি পারবো।’
সম্প্রতি বিজয় আবার ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলের ক্যাম্পে। এদিকে ওপেনিংয়ে খেলা সৌম্য’র পারফরম্যান্সও খারাপ। আর তাই এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে প্রয়োজন ভালো শুরু করতে পারা এক জুটির। তামিম তো আছেই, তাই বিজয় হতে পারে সৌম্য’র যোগ্য রিপ্লেসমেন্ট।
বাংলা ইনসাইডার/ডিআর
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭